নাজাত দিবস
নাজাত দিবস ভারতবর্ষের সকল প্রদেশে কংগ্রেস মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম লীগ ১৯৩৯ সালের ২২ ডিসেম্বর স্বস্তির স্মারক হিসেবে নাজাত দিবস পালন করে। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর যেখানে ব্রিটিশ ভারতের সাতটি প্রদেশে কংগ্রেস মন্ত্রিসভা গঠিত হয় সেখানে মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করে শুধু একটি প্রদেশে, বাংলায়। সেটিও আবার ছিল কৃষক প্রজা পার্টির নেতা এ.কে ফজলুল হক এর নেতৃত্বে একটি বিরাট কোয়ালিশন সরকার। ১৯৩৮ সাল থেকে মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্বীয় নেতৃত্বে মুসলমানদের সংঘবদ্ধ করার লক্ষ্যে বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করেন। সেসব কৌশলের অন্যতম ছিল মুসলমানদের প্রতি কংগ্রেস মন্ত্রিসভাগুলির বাস্তব ও কাল্পনিক বৈষম্য মুসলমানদের সামনে তুলে ধরা। এ নীতির অনুসরণে কংগ্রেসের ‘নিপীড়ন’ থেকে ভারতের মুসলমানদের মুক্তির প্রতীক হিসেবে জিন্নাহ ১৯৩৯ সালের ২২ ডিসেম্বর মুক্তি ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন দিবস পালনের ডাক দেন।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাজ্যসমূহ যে মর্যাদা পাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়, তাকে অপর্যাপ্ত গণ্য করে এর প্রতিবাদে অক্টোবর মাসে কংগ্রেস মন্ত্রিসভাগুলি একযোগে পদত্যাগ করে। জিন্নাহর কৌশলটি বাংলায় চমৎকারভাবে সফল হয়; সারা দেশ জুড়ে সভা-সমাবেশ, মিছিল অনুষ্ঠিত হয় এবং বাংলার মুসলমানরা অন্যান্য প্রদেশে কংগ্রেস মন্ত্রিসভাগুলির পদত্যাগে উল্লাস প্রকাশ করে এবং একই সঙ্গে বাংলায় মুসলমানদের অধিকার সমুন্নত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে। এর আগেই এ.কে ফজলুল হক মুসলিম লীগে যোগদান করেছিলেন। লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে তাঁর অন্তর্ভুক্তির পর বাংলায় মুসলমানদের সমবেত করার আন্দোলন এক নতুন গতি সঞ্চয় করে। ‘নাজাত দিবস’ বাংলায় মুসলিম রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা স্পষ্টত প্রতিফলিত হতে দেখা যায় ১৯৪০ সালে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ.কে ফজলুল হক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাবে। [সিরাজুল ইসলাম]