নাগেশ্বরী উপজেলা

নাগেশ্বরী উপজেলা (কুড়িগ্রাম জেলা)  আয়তন: ৪১৭.৫৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৫৯´ থেকে ২৬°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৫´ থেকে ৮৯°৫২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে ফুলবাড়ী উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৯৪২৫৮; পুরুষ ১৯৩৪৪৪, মহিলা ২০০৮১৪। মুসলিম ৩৭৫০৪৫, হিন্দু ১৯১০৫, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ৮ এবং অন্যান্য ৯৯। ‘বুনো’ নামে সাঁওতালদের একটি গোত্র নাওডাঙ্গা নদীর তীরে বসবাস করে।

জলাশয় প্রধান নদনদী: ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার। নাওডাঙ্গা বিল, পায়রাডাঙ্গা বিল, গুশালকা বিল ও মাদাইখাল বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন নাগেশ্বরী থানা গঠিত হয় ১৭৯৩ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ৭৩ ৩৫০ ৬২২৮৯ ৩৩১৯৬৯ ৯৪৪ ৪৯.৭ ৩৬.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪২.০০ ৮১ ৬২২৮৯ ১৪৮৩ ৪৯.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কেদার ৫০ ৬২৩৫ ১৫১৫০ ১৪৬৫৪ ২৯.৭
কঁচাকাটা ৩৭ ৬৫২৫ ৯৬৩০ ১০৯৮৮ ২৭.৯
কালীগঞ্জ ৪৪ ৫৬৭৯ ৯২৫১ ১০১২৭ ৩৩.০
নারায়ণপুর ৬৩ ১৩৭৭৪ ১৩৭৩৬ ১৩৭০১ ২৩.০
নুন খাওয়া ৭৫ ৮৮৬৬ ৬৯৫০ ৭৩১০ ২৬.১
নেওয়াশী ৬৯ ৪৮২৭ ১১৩১০ ১১৭৩৫ ৪৭.২
বল্লভের খাস ১১ ৮২৫৮ ১২৭৩২ ১৩৭১১ ৩২.২
বামনডাঙ্গা ১২ ৫২৩০ ৮৯৫১ ৯৩০৭ ৩৬.২
বেরুবাড়ী ১৮ ৫১২০ ১০৫৮১ ১১২৭০ ৩৫.৪
ভিতরবন্দ ২৫ ৪৫৩৭ ১১৩১৩ ১২০২৬ ৪১.৪
রামখানা ৮৮ ৬৫৭৩ ১৪৫৫৪ ১৫১৮৭ ৪৩.০
রায়গঞ্জ ৮২ ৫৫৬০ ১১২৭৯ ১১৯৪৪ ৪১.৯
সন্তোষপুর ৯৪ ৭২৫২ ১৬১৫৬ ১৬৪৯২ ৪৭.৫
হাসনাবাদ ৩১ ৪৩৬৮ ১০৮৩০ ১১০৯৪ ৩৬.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ভিতরবন্দ জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, পায়ড়াডাঙ্গার দেবী চৌধুরাণীর মঠ।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৫৪ সালে মওলানা ভাসানী কর্তৃক আসামের ‘বাঙ্গাল খেদাও’ আন্দোলনের প্রতিবাদ সভা রায়গঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২ সেপ্টেম্বর কুমারপুর ব্রিজ ধ্বংস করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা শমসের আলী বসুনিয়া, রোস্তম আলী, আবদুল খালেক, জমসেদ আলী ও মিজানুর রহমান রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন। ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর রায়গঞ্জ ব্রীজের নিকট এক লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা লে. ক. সামাদ, মিজান ও আলী হোসেন শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী সন্তোষপুর ইউনিয়নে নীলুর খামার মৌজায় ৬২ জন লোককে হত্যা করে। এছাড়াও নাগেশ্বরী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উত্তর-পশ্চিমের মাঠে পাকবাহিনী ৩৫ জন লোককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। উপজেলায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ধরকা বিলের পার্শ্বে ১টি গণকবর রয়েছে এবং চণ্ডীপুকুরে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন নাগেশ্বরী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৮৫০, মন্দির ১৭, তীর্থস্থান ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: নাগেশ্বরী বাসস্ট্যান্ড ও বাজার জামে মসজিদ, মাদাইখাল কালীমন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৮.৭%; পুরুষ ৪২.৭%, মহিলা ৩৪.৯%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নাগেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৭), মাদারগঞ্জ হাইস্কুল (১৯৬১), নেওয়াশী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭১), পূর্ব রামখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০০), পাগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০০), নেওয়াশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), পায়ড়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৭), ভিতরবন্দ জেডি একাডেমি (১৯৪৫), নাগেশ্বরী দয়াময়ী একাডেমি (১৯৪৫), ডিএম একাডেমি (১৯৪৬), নাগেশ্বরী আলিয়া মাদ্রাসা (১৯৬০), নেওয়াশী আলিম মাদ্রাসা (১৯৬০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  অনিয়মিত দৈনিক: দুধ কুমার।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ৯৭, সিনেমা হল ২, নাট্যদল ২, সাহিত্য পরিষদ ৩, ক্রীড়া সংস্থা ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৬.০৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫৯%, শিল্প ০.৩৮%, ব্যবসা ৭.৫৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৩২%, চাকরি ৩.৩০%, নির্মাণ ০.৫৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৪% এবং অন্যান্য ৬.০৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.৯২%, ভূমিহীন ৪১.০৮%। শহরে ৪৯.৯৫% এবং গ্রামে ৬০.৩৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, বাঁশ, গম, সরিষা, তিল, তিসি, কাউন, সুপারি, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, চীনাবাদাম।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি যব, চিনা, তামাক, অড়হর, মেছতা পাট, মিষ্টি আলু।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, নারিকেল, কালোজাম, লিচু, তরমুজ, সুপারি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২, গবাদিপশু ৮৫, হাঁস-মুরগি ২০, হ্যাচারি ৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৭৫ কিমি; নদীপথ ২৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বিস্কুট ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, সূচিশিল্প, পাটজাতশিল্প, হাতপাখা, মাদুর, নকশী কাঁথা।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৬, মেলা ৪। রায়গঞ্জ বাজার, আন্ধারির ঝাড় বাজার, নেওয়াশী বাজার এবং অষ্টমী স্নানের মেলা, মাদাইখাল কালীর মেলা ও বেরুবাড়ী বারুণীর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   বাঁশ, ধান, চাল, পাট, পিঁয়াজ, রসুন, চীনাবাদাম, সুপারি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৭.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৯%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ৩.০%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৭.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩১.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১০.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২, উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৪, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬, ক্লিনিক ২।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ ও ১৯৯০ সালের বন্যায় এ অঞ্চলের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার।  [হরচন্দ্র বর্মণ]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নাগেশ্বরী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।