নাই্যংছড়ি উপজেলা

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা (বান্দরবান জেলা)  আয়তন: ৪৬৩.৬০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°১১´ থেকে ২১°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৬´ থেকে ৯২°২৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে লামা উপজেলা, দক্ষিণে আরাকান রাজ্য (মায়ানমার), পূর্বে  আলিকদম উপজেলা এবং আরাকান রাজ্য (মায়ানমার), পশ্চিমে উখিয়া, রামু ও চকোরিয়া উপজেলা। উপজেলার বুসি তাং পাহাড়  উল্লেখযোগ্য।

জনসংখ্যা ৬১৭৮৮; পুরুষ ৩১৩৪৭, মহিলা ৩০৪৪১। মুসলিম ৪৭৯০৩, হিন্দু ৪৯৪, বৌদ্ধ ১২৮৫৮, খ্রিস্টান ২৮৮ এবং অন্যান্য ২৪৫। এ উপজেলায় চাকমা, মারমা, মুরং, তাঞ্জং প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: বোয়ালখালী।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯২৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৫ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৭ ২৩৭ ১৮২৫৭ ৪৩৫৩১ ১৩৩ ৩৭.১ ২৮.৯
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫৪.৩৯ ১৮২৫৭ ৩৩৬ ৩৭.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ঘুমধুম ৫৭ ১৬০০০ ৮২৮০ ৮১৯৯ ৩৪.৩
দোছড়ি ৩৮ ৪৩৫২০ ৪০৯০ ৩৯৬১ ১৬.২
নাইক্ষ্যংছড়ি ৭৬ ২৩০৪০ ১১৭৫৯ ১১২৪৫ ৩৩.৯
বাইশারী ১৯ ৩২০০০ ৭২১৮ ৭০৩৬ ৩১.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তুমক্রু পাড়া ও সোনাইছড়ি জুমখোলা পাড়াতে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল। পাকবাহিনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ অসংখ্য নারী-পুরুষকে নির্যাতন করে। নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু ও উখিয়া অঞ্চলে তৎপর মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি বাহিনী পাকবাহিনীর উপর গেরিলা আক্রমণ চালায়, কুচবানিয়ায় একটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেয়।

বিস্তারিত দেখুন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৭, মন্দির ৩, গির্জা ১, মঠ ৪, কেয়াং ২৯, প্যাগোডা ৪, আশ্রম ২।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩১.৩%; পুরুষ ৩৪.৫%, মহিলা ২৮.০%। কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৭, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৪, কিন্ডার গার্টেন ২, মাদ্রাসা ৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ছালেহ আহামদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নাইক্ষ্যংছড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, নাইক্ষ্যংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, অডিটোরিয়াম ১, নাট্যদল ৩, মহিলা সংগঠন ৩, খেলার মাঠ ৫।

দর্শনীয় স্থান উপবন পর্যটন কেন্দ্র, বি এল আর আই (গয়াল প্রজনন কেন্দ্র)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫১.৯৩%, অকৃষি শ্রমিক ১৩.৩০%, শিল্প ০.৩৩%, ব্যবসা ৯.৪৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৪২%, চাকরি ১০.৩২%, নির্মাণ ০.৩৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৭২% এবং অন্যান্য ১১.৭৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৩.২৩%, ভূমিহীন ৫৬.৭৭%। শহরে ৪০.৭১% এবং গ্রামে ৪৪.২২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আখ, তিল, তুলা, ভূট্টা, রাবার, তামাক, পান, হলুদ, আদা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি যব, বজরা।

প্রধান ফল-ফলাদি  কলা, কাঁঠাল, আনারস, লেবু, পেঁপে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৩ কিমি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৬, গবাদিপশু ১, হাঁস-মুরগি ৮।

শিল্প ও কলকারখানা রাবারশিল্প, তামাকশিল্প, করাতকল।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা  বহিছড়ি হাট, নাইক্ষ্যংছড়ি হাট, ঘুমধুম হাট, বরইতলী হাট ও দৌছড়ি হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, তামাক, রাবার, কলা, পান, আদা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২২.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলায় পাথর ও তেল কূপের সন্ধান পাওয়া গেছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬২.৬%, ট্যাপ ১.৩% এবং অন্যান্য ৩৬.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২০.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৭.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪২.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ২, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

এনজিও ব্র্যাক। [আতিকুর রহমান]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।