নলছিটি উপজেলা

নলছিটি উপজেলা (ঝালকাঠি জেলা)  আয়তন: ২৩১.৪২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২৯´ থেকে ২২°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১১´ থেকে ৯০°২৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঝালকাঠি সদর ও বরিশাল সদর উপজেলা, দক্ষিণে বাকেরগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে বরিশাল সদর ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে রাজাপুর ও ঝালকাঠি সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৯৩৫৫৬; পুরুষ ৯২১৩১, মহিলা ১০১৪২৫। মুসলিম ১৮৪০৮৬, হিন্দু ৯৩৯১, খ্রিস্টান ৭২ এবং অন্যান্য ৭।

জলাশয় প্রধান নদী: নলছিটি, বিষখালী, খায়রাবাদ, গজালিয়া, কালিজিরা।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯২৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ১১৯ ১৩৮ ৩০৮০৫ ১৬২৭৫১ ৮৩৬ ৬৬.১ ৬৭.৪
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৩.৩২ ২১ ৩০৮০৫ ১৩২১ ৬৬.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কুলকাঠী ২১ ৪৯৭৩ ৭৫৬৬ ৮১৫১ ৭১.৫
কুশংগল ৩১ ৪৪৩৭ ৭৪৯৪ ৮৩৬৮ ৬৩.৩
দপদপিয়া ১৫ ৭৭২৭ ১২৮২৯ ১৩৭১৬ ৬৪.২
নাচনমহল ৫২ ৩৪১৮ ৬৩০১ ৭১৬৯ ৫৯.৪
ভৈরবপাশা ১৩ ৪১৬৭ ৭৮২৮ ৮১৮০ ৬৯.৭
মগর ৪২ ৪৩৬৫ ৭৯১১ ৮৮৭৪ ৬৯.২
মোল্লারহাট ৩৬ ৪৮২৪ ৭৬১১ ৮৬২৯ ৭১.০
রানাপাশা ৭৩ ৪২৫১ ৫৩৭৩ ৬১২৭ ৬৯.৮
সিদ্ধকাঠী ৮৪ ৪৪৪০ ৭৩১০ ৮২০৭ ৭১.২
সুবিদপুর ৯৪ ৪৩৪৮ ৭২০২ ৭৯০৫ ৬৬.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সুজাবাদের কিল্লা (১৬৩৯), সিভিল কোর্ট ভবন (১৭৮১), তারা মন্দির ও জমিদার বাড়ি (বারৈকরণ)।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯২৭ সালে ব্রিটিশ সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে কুলকাঠি গ্রামে একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে ১৯ জন মুসলমান নিহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৩ মে পাকসেনারা ৯ জন লোককে গুলি করে হত্যা করে। ৩০ জুন মধ্যরাতে থানা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা চাচৈর ও দরগাবাড়িতে তীব্র যুদ্ধে পাকসেনাদের কোণঠাসা করে বহু পাকসেনা নিহত করতে সক্ষম হয়। ৮ ডিসেম্বর নলছিটি পাকসেনা মুক্ত হয়। উপজেলার ২টি স্থানে বধ্যভূমি রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন নলছিটি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৩০৮, মন্দির ৪৮, গির্জা ১, তীর্থস্থান ১, মাযার ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মল্লিকপুর জামে মসজিদ, কুলকাঠী জামে মসজিদ, কাপুরিয়া মন্দির, তারা মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৬৭.২%; পুরুষ ৬৭.৫%, মহিলা ৬৭.০%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নলছিটি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৯), সিদ্ধকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৮২), চন্দ্রকান্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৮), রাজাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), রায়পুর সৈয়দ আবদুল লতিফ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭) নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  নলছিটি বার্তা, সুগন্ধা বার্তা, সন্দেশ, বিথিকা ও মাসিক সুজাবাদ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৬, ক্লাব ২২, স্পোর্টিং ক্লাব ২৫, সিনেমা হল ১, নাট্যদল ২, খেলার মাঠ ৬০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪১.০১%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৪৩%, ব্যবসা ১৬.৩৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৬৭%, চাকরি ১৬.৯১%, নির্মাণ ১.৮৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৭৪% এবং অন্যান্য ১৩.৭৮%।

কৃষিভুমির মালিকানা  ভূমিমালিক ৭০.০১%, ভূমিহীন ২৯.৯৯%। শহরে ৫৪.১৩% এবং গ্রামে ৭৩.১৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, ডাল, গম, ভুট্টা, ফেলন, আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, পাট, তিল, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, জাম, কাঁঠাল, সুপারি, নারিকেল, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০১.৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৭৯.২০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৪০ কিমি; নৌপথ ২৭০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গয়না ও পানসি নৌকা।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, চালকল, স’মিল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশ ও কাঠের কাজ, সেলাই কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১১, মেলা ৩।         

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, নারিকেল, সুপারি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৭.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৮.০%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ১.৯%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৮.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২০.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৭৮৬ সালের বন্যা, ১৮২২, ১৯০৯ ও ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে অনেক মানুষ প্রাণ হারায় এবং ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।

এনজিও পল্লিউন্নয়ন সংস্থা, ব্র্যাক, আশা। [মো. মিজানুর রহমান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নলছিটি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।