নবাবগঞ্জ সদর উপজেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:৪৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

নবাবগঞ্জ সদর উপজেলা (নবাবগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৪৫১.৮০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৫´ থেকে ২৪°৪৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০৫´ থেকে ৮৮°২৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নাচোল ও শিবগঞ্জ (নবাবগঞ্জ) উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলা, পশ্চিমে শিবগঞ্জ উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৫২৬৫০; পুরুষ ২২৭৩০১, মহিলা ২২৫৩৪৯। মুসলিম ৪৩২৪১৬, হিন্দু ১৮৮৩১, বৌদ্ধ ৮১৩, খ্রিস্টান ২৪ এবং অন্যান্য ৫৬৬। এ উপজেলায় ওরাওঁ, সাঁওতাল, মাহালী, মুরারী, পাহান প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে।

জলাশয় গদ্মা, মহানন্দা ও পাগলা নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৮৯৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ১৭৪ ২১১ ১৫২২২৩ ৩০০৪২৯ ১০০২ ৫৩.৮ ২৯.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩৪.৩৫ ১৫ ৭০ ১৫২২২৩ ৪৪৩২ ৫৩.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আলাতুলী
ইসলামপুর ৩৯ ২২১৬ ১২৮৯২ ১১৯৩১ ২১.৩৬
গোবরাতলা ৩৩ ৮৭৬১ ১১৪৪৬ ১০৯১৭ ৩৫.৩৭
চরঅনুপনগর ২০ ১৩৩০ ৫২২৭ ৫১৬৩ ৩১.৩৮
চরবাগডাঙ্গা ২২ ৮২৮৪ ৮২২০ ৮২৪০ ১৮.৮৪
ঝিলিম ৪৪ ১৬২৬০ ৯৯৭১ ৯০২৯ ৩৮.৩৯
দেবীনগর ২৭ ১০৩৭৭ ১২৫৫৩ ১২০৩৮ ২৪.৬৩
নারায়ণপুর ৬৭ ৯৩৫১ ৮০২৯ ৭৪৮০ ২৪.২৬
বারঘরিয়া ১৯ ১৩৩০ ৯৭৮৭ ১০১৩৯ ৩৭.৪২
বালিয়াডাঙ্গা ১৮ ৮৯৭৫ ১৫০৮১ ১৪৯৪৩ ৪০.৬২
মহারাজপুর ৫৫ ১৫২৬ ১১২১০ ১১৬৫৪ ৩৪.৩৬
রানীহাটী ৮৩ ১৮৯৫ ১৪২৪৫ ১৪৮৭৯ ৩৫.৫৫
শাহজাহানপুর ৮৯ ২৮৬৪ ১০২৬৬ ৯৮০২ ১৬.০৩
সুন্দরপুর ৯৪ ৭৬২৮ ১৪০৮২ ১৩৮৭৩ ২৮.০২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ উপজেলা সদরের গোবরাতলায় চাঁপাই জামে মসজিদ (আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে নির্মিত), মাঝপাড়া গম্বুজ মসজিদ, মহারাজপুরের প্রাচীন মসজিদ, জোড়া মঠ (হুজরাপুর) ও রামচন্দ্রপুর নীলকুঠি উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন  মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ লড়াইয়ে নবাবগঞ্জ শহরের রেহাইচর নামক স্থানে শহীদ হন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ১ (নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ স্মৃতিস্তম্ভ); স্মৃতিসৌধ ২ (বাংলাদেশ রাইফেলস গেট স্মৃতিসৌধ ও নবাবগঞ্জ পৌরসভা স্মৃতিসৌধ) এবং বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (১৯৯৩)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৩৮.১%; পুরুষ ৩৯.৫%, মহিলা ৩৬.৭%। কলেজ ১৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০৪, মাদ্রাসা ৪৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ (১৯৫৫), সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৯), হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৫), নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৫), চাঁদলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৯), নবাবগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসা (১৯৬৪)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  সাপ্তাহিক: গৌড় সংবাদ, সীমান্তের কাগজ, চাঁপাই সংবাদ, মহানন্দা; সাময়িকী: ফজলে রাববী নবাব সম্পাদিত ‘প্রতীক’।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, ক্লাব ৯৪, শিশু একাডেমী ১, নাট্যমঞ্চ ২, সিনেমা হল ৪, খেলার মাঠ ২০, শিশু সংগঠন ৪, শিল্পকলা একাডেমী ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৪.৯৭%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৯৪%, শিল্প ১.৪৩%, ব্যবসা ১৮.৪০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯৪%, চাকরি ৭.১১%, নির্মাণ ৬.৩০%, ধর্মীয় সেবা ০.২৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৭৩% এবং অন্যান্য ১১.৯৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪০.৩৮%, ভূমিহীন ৫৯.৬২%। শহরে ৩৫.২৮% এবং গ্রামে ৪৩.১০% পরিবারের  কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, মাষকলাই, গম, আখ, পান, পিঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কোদা, চিনা, শ্যামা, মাইড়্যা, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৫৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৮৪ কিমি; রেলপথ ১৯ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, অটোরাইস মিল, আইস ফ্যাক্টরি, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, কুকার ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, নকশি কাঁথা।

হাটবাজার ও মেলা বটতলা হাট, নতুন হাট, মহারাজপুর হাট, রামচন্দ্রপুর হাট ও গোবরাতলা হাট  এবং মহারাজপুর ঈদের মেলা, সরজন মেলা, বারঘরিয়া দুর্গাপূজার মেলা।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পান, পিঁয়াজ, রসুন, ময়দা, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৫.৫২% পরিবারের  বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.৬৮%, ট্যাপ ৩.৮৬%, পুকুর ০.৪৯% এবং অন্যান্য ৪.৯৭%। এ উপজেলার ৪৫৯৫ টি অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২১.৩১% (গ্রামে ১০.৬৬% এবং শহরে ৪১.২০%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৮.৯৭% (গ্রামে ৫০.০৯% এবং শহরে ৪৬.৪৯%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৯.৭২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন ১, নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার ১, উপস্বাস্থ্য  কেন্দ্র ৬, সিভিল সার্জন অফিস ১, ক্লিনিক ২।

এনজিও ব্র্যাক, কেয়ার, আশা, সিসিডিবি, প্রশিকা, আইডিই (ডাসকো), সমাজ উন্নয়ন কর্মসংস্থা, প্রয়াস, কল্যাণী মহিলা সংস্থা, স্বনির্ভর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা। [আবদুল মানিক পুলক]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নবাবগঞ্জ সদর উপজেলা  সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।