নওরোজ

নওরোজ  নতুন বছরের প্রথম দিন। দিনটি শিয়ারা উৎযাপন করে। ফারওয়ারা দিন হল ইরানি শামসি (সৌরবর্ষ) সনের প্রথম  মাস। ২১ মার্চ পালিত হয় এ বিশেষ নববর্ষ উৎসব। এর মধ্য দিয়ে বসন্তকাল এবং নতুন বছর আরম্ভ হয়। জ্যোতিশাস্ত্র মতে সূর্য এ দিনে মেষ রাশির ওপর এসে সৌরবর্ষ বা শামসী সালের উম্মেষ ঘটায়।

অনেকের বিশ্বাস যে, এ দিনে আদম (আ.) এর অপরাধ আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করে পৃথিবীতে তাকে ফেরত পাঠান এবং নুহ (আ.) নবীর নৌকা এ দিনেই নতুন পৃথিবীতে নোঙর করেছিল। মুসলমানদের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, মহানবী (সা.) এ দিনটিকে নিজের দিন এবং উৎসবের দিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

নওরোজের প্রবর্তন করেছিলেন প্রাচীন পারস্যের প্রভাবশালী সম্রাট জামশিদ, খ্রিস্ট পূর্ব ৮০০ সালে। তিনি জ্যোতির্বিদ্যায় প্রাজ্ঞ ছিলেন। এটি ইরানের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় উৎসব। ইরান হতে এ উৎসব মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রচলিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হলে ফারসিকে রাষ্ট্রভাষা করা হয়। তবে নওরোজ উদযাপনের প্রচলন প্রাক মুঘল যুগে ছিল না। মুঘল সম্রাট হুমায়ুন পারস্যের সহায়তায় ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পিতার হূত সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করার পর থেকে উপমহাদেশে তখন হতে ইরানি শিয়াগণের ব্যাপকভাবে আগমন ঘটে। ফলে ইরানি সংস্কৃতি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ওই সময় থেকে ভারতে উদযাপন হতে থাকে নওরোজ উৎসব। সম্রাট আকবর হতে আওরঙ্গজেবের সময় পর্যন্ত (১৫৫৬-১৭০৭) এটা অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রীয় উৎসবে পরিণত হয়। এই দিনে আগ্রা ও দিল্লিতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় ভোজসভা অনুষ্ঠিত হত। হেরেমবাসি নারীরা তাতে শখের মীনাবাজার বা আনন্দ মেলার আয়োজন করতেন।

মুঘল তাহজীব বা সংস্কৃতির স্মৃতি হল নওরোজ। সাবেক মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে নওরোজের প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রামে বসবাসরত শিয়াদের মাঝে নওরোজ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা শহরে নবাব পরিবারে জাঁকজমকপূর্ণভাবে এবং নবাব বাড়ির পুকুরে হাজারো মোম বাতি ভাসিয়ে নওরোজ উৎসব পালিত হতো। [রফিকুল ইসলাম রফিক]