ধুয়া গান
ধুয়া গান বাংলা লোকসঙ্গীতের অন্যতম জনপ্রিয় শাখা। এ গানের এরূপ নামকরণ হওয়ার কারণ, এতে একটি স্থায়ী অংশ থাকে যা ধুয়া (ধ্রুবধুয়া) নামে পরিচিত এবং যা সংশ্লিষ্ট গানের মধ্যে বারবার গাওয়া হয়। এ স্থায়ী অংশটি গানের সূচনাতেই থাকে।
ধুয়া গান একক অথবা দলবদ্ধভাবে গাওয়া হয়। কখনও দুই দলের প্রতিযোগিতার মাধ্যমেও এ গান পরিবেশিত হয়ে থাকে। এতে দুজন বয়াতি বা গায়েন থাকে। তাদের একজন গানের সুরে প্রশ্ন করে, অপরজন গানের সুরেই তার উত্তর দেয়। অনেক সময় উত্তরদাতাও পাল্টা প্রশ্ন করে। এ দুজনের প্রশ্নোত্তরের ফাঁকে ফাঁকে উভয়ের সহকারীরা ধুয়া গেয়ে নিজ নিজ বয়াতিকে সাহায্য করে এবং সেই সঙ্গে গানের ধারাবাহিকতাও রক্ষা করে। বয়াতিদের এ প্রশ্নোত্তর বিষয়ে ধুয়া গানের সঙ্গে কবিগানের বেশ মিল লক্ষ করা যায়।
সাধারণত গ্রীষ্মকালের জ্যোৎস্নারাতে বসতবাড়ির উঠানে এ গানের আসর বসে; তবে মাঠে-ঘাটে কিংবা নৌকায়ও আসর বসতে পারে। এ গানে যারা অংশগ্রহণ করে তারা বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধান করে। একতারা, দোতারা, খোল, করতাল সহযোগে উদাত্ত কণ্ঠে ধুয়া গান পরিবেশন করা হয়। অনেক সময় এতে নৃত্যেরও ব্যবস্থা থাকে।
ধুয়া গানে নির্মল হাস্যরস পরিবেশিত হয়। এতে ধর্মতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব, সামাজিক অন্যায়-অবিচার ইত্যাদি বিষয়ে সহজ ভাষায় আলোকপাত করা হয়। আধুনিক নগরজীবনকে ব্যঙ্গ করেও ধুয়া গান রচিত হতে দেখা যায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে অবলম্বন করে অনেক ধুয়া গান রচিত হয়েছে।
ধুয়া গান এ দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কমবেশি প্রচলিত; তবে ফরিদপুর, পাবনা, যশোর ও ঢাকা অঞ্চলে এর প্রচলন বেশী। যুগ যুগ ধরে গ্রামবাংলার অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত কবিয়ালরা এ গান রচনা ও পরিবেশন করে আসছেন। এ গান বাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম উপাদান। [আবদুল ওয়াহাব]