ধর্ম সভা
ধর্ম সভা সতীদাহ প্রথা বিলোপের জন্য সরকারি আইনের প্রতিবাদে ১৮৩০ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মৃত স্বামীর চিতায় হিন্দু বিধবাদের পুড়ে মারা হতো। বহু গোঁড়া হিন্দু এটাকে ধর্মীয় অনুশাসন বলে বিশ্বাস করতেন। পূর্ববর্তী মুসলিম শাসকদের প্রথাগত নীতি অনুসরণ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জনগণের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত ছিল। কিন্তু উনিশ শতকের প্রথম দশকগুলিতে বহু উদারমনা ইউরোপীয় কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, খ্রিস্টান ধর্মযাজক এবং রামমোহন রায়ের মতো ক’জন হিন্দু সংস্কারক এ নির্মম সতীদাহ প্রথা বিলোপসাধন সমর্থন করে আসছিলেন। এর বিলোপের পক্ষে শক্তিশালী জনমত তৈরি হওয়ার পরই শুধু লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক এর সরকার শেষ পর্যন্ত সতীদাহ প্রথা বিলোপ করার ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।
কিন্তু রাজা রাধাকান্ত দেব এর নেতৃত্বাধীন হিন্দু সম্প্রদায়ের গোঁড়া শ্রেণি এ উদ্যোগ পছন্দ করেন নি। তাঁরা হিন্দু সম্প্রদায়ের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে কোনো বিদেশি সরকারের হস্তক্ষেপের প্রবল বিরোধিতা করেন। ধর্মসভার মাধ্যমে ইংল্যান্ডে প্রিভি কাউন্সিলে সতীদাহ নিবারণ আইন প্রত্যাহারের দাবী করে দরখাস্ত পাঠানো ছিল তাঁদের মূল লক্ষ্য। ধর্ম সভা সনাতন হিন্দু ধর্মীয় ও সামাজিক প্রথাকে বিভিন্ন দিক থেকে আসা আক্রমণ থেকে রক্ষা করার দায়িত্বও নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। সভা গোঁড়া দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন এবং বিভিন্ন কারণে সরকারের রাজস্ব নীতিতে অসন্তুষ্ট বহু ধনী হিন্দু জমিদারের সমর্থন লাভ করেছিল। বাংলা সংবাদপত্র সমাচার চন্দ্রিকা ছিল ধর্মসভার মত প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। এর সম্পাদক ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ছিলেন ধর্মসভার সচিব। বাংলার বহু জেলা শহরে ধর্মসভার শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। [এ.এফ সালাহউদ্দীন আহমেদ]