ধর্মপাশা উপজেলা

ধর্মপাশা উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৩১০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৭´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৬´ থেকে ৯১°১১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে মোহনগঞ্জ এবং বারহাট্টা উপজেলা, পূর্বে তাহিরপুর এবং জামালগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে কলমাকান্দা এবং বারহাট্টা উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৩০৪৫৭; পুরুষ ৬৫৪৭৯ মহিলা ৬৪৯৭৮। মুসলিম ১১৮১৮৮, হিন্দু ১২২৪৫, খ্রিস্টান ১৮ এবং অন্যান্য ৬।

জলাশয় প্রধান নদী: সুরমা। টাঙ্গুয়ার হাওর, শিয়ালদিয়া বিল, পাকেরতলা বিল, ফিরাগাঙ বিল, ধরণি বিল, জালধরা বিল, ধনকুনিয়া বিল, সারদা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ধর্মপাশা থানা গঠিত হয় ১৯৪২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৮৪ ১৭৫ ৭৮৫৮ ১২২৫৯৯ ৪২১ ৪৯.৬ ৫৪.৯
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১১.৭৫ (২০০১) ৭৮৫৮ ৮৩৭ (২০০১) ৪৯.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উত্তর সুখাইর রাজাপুর ৮৫ ১৭৭৯২ ৮৮৮৬ ৮৫৩৫ ২৯.৪
জয়শ্রী ৪৭ ১৪০৮৫ ১০৩৬২ ১০১৬৩ ২৭.১
দক্ষিন সুখাইর রাজাপুর ২১ ১২১০৮ ৪৮৮৯ ৪৬৭৪ ১৮.৮
ধর্মপাশা ৩৮ ৮৮৯৬ ১৫০৬২ ১৫০৫৮ ৩২.৮
পাইকুরাটি ৬৬ ১৫৩২১ ১৪৪৯৮ ১৪৬০০ ২৮.৫
সেলবরষ ৭৬ ৮৪০২ ১১৭৮২ ১১৯৪৮ ৩৪.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সুখাইর জমিদার বাড়ি ও কালীমন্দির, রাজাপুর জমিদার বাড়ি, সেলবরষ জামে মসজিদ ও মহিষখলা কালীমন্দির উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধারা ৯ অক্টোবর ১৯৭১ তিনটি গ্রুপের সমন্বিত দল নিয়ে ধর্মপাশা থানা আক্রমণ করে ও শত্রুদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করে। ৮ ডিসেম্বর ধর্মপাশা উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন ধর্মপাশা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৯২, মন্দির ১৭, গির্জা ৩, তীর্থস্থান ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ২৮.৫%; পুরুষ ২৯.৫%, মহিলা ২৭.৫%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বাদশাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৪), মধ্যনগর বিপি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯৫২), বাদশাগঞ্জ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫০), জনতা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  সাহিত্য পত্রিকা: সাঁকো, প্রাণের হিসাব (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ৩০০, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ১০০, খেলার মাঠ ১৫।

দর্শনীয় স্থান টাঙ্গুয়ার হাওড় ও  টেকেরঘাট চুনা পাথরের পাহাড়।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৯.১০%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৫%, শিল্প ০.২৮%, ব্যবসা ৭.৩৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৭৭%, চাকরি ২.০৭%, নির্মাণ ০.২৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৪% এবং অন্যান্য ৫.৫৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.১৩%, ভূমিহীন ৪১.৮৭%। শহরে ৪৭.১৯% এবং  গ্রামে ৫৮.৭৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, গম, মিষ্টি আলু, ছোলা, কাউন, খেসারি।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, আতা, বেল, তরমুজ।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৬৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫০০ কিমি; নৌপথ ৯৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, আইস ফ্যাক্টরি, স’মিল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প বাঁশের কাজ, সেলাই কাজ, ওয়েল্ডিং কারখানা।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৪, মেলা ১০। ধর্মপাশা, মধ্যনগর,  বাদশাগঞ্জ, গাছতলা, সৈয়দপুর, চামরদানী, বংশীকুন্ডা, মহিষখলা, গোলগাঁও, সুখাইর, নতুন বাজার, গোলকপুর, জয়শ্রী এবং মহিষখলা ও কাহালা গ্রামের কালীপুজার মেলা, রামদিঘা ও গলইখালীর শিবমেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  পিঁয়াজ, রসুন, কলা, আলু, ধান, শুঁটকি, সরিষা, কাঠ, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৩.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.১%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ৮.৮%। উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২১.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬৬.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১২.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭ সালে এ উপজেলায় এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে বহুলোকের প্রাণহানি ঘটে ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯৬৭ সালে উপজেলার বিশারা গ্রামে গুটিবসন্তে এক রাতে ৫০ জন লোক প্রাণ হারায়। এছাড়া ১৯৭৪ ও ১৯৮৮ সালের বন্যা এবং ২০০৪ সালের সুনামিতে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও আশা, ব্র্যাক, প্রশিকা, শোভা।  [নিক্সন তালুকদার]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ধর্মপাশা উপজেলা  সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।