দেবী, জ্ঞানদানন্দিনী

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:৪৬, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

দেবী', 'জ্ঞানদানন্দিনী (১৮৫০-১৯৪১)  বাংলার নারীদের পোশাকে পরিবর্তন সাধন ও তাদেরকে আধুনিকারূপে গড়ে তোলার (আচার-আচরণে, শিষ্টাচারে এবং অন্তঃপুর থেকে বাইরে আনার ক্ষেত্রে) জন্য বিখ্যাত। তিনি যশোর থেকে দূরবর্তী একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আট বছর বয়সে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের প্রথম ভারতীয় সদস্য (১৮৬৪) ও  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর দ্বিতীয় অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তখনকার আলোকিত  ভদ্রলোক সমাজে প্রচলিত সাময়িক বিবাহ (কম্প্যানিয়নেট ম্যারেজ) রীতিতে বিশ্বাসী সত্যেন্দ্রনাথ নতুন আলোকপ্রাপ্ত মানুষের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর স্ত্রীকে শিক্ষা ও চালচলনের মাধ্যমে আধুনিক বাঙালি ভদ্রমহিলা বা ভদ্রমহিলাদের মধ্যে উদীয়মান বিশিষ্ট মহিলারূপে দেখতে চেয়েছিলেন। জ্ঞানদানন্দিনী তার পরিবর্তনের (তার স্বামীর বিশেষ সহযোগিতায়) পরে অভিজাত ব্রিটিশদের শিষ্টাচার ও চালচলনের অনুরূপে একজন পরিচ্ছন্ন ও মার্জিত রুচিসম্পন্ন মহিলায় পরিণত হন এবং তৎকালীন শিক্ষিত অনেক মহিলার মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম আধুনিক নারী। তিনিই ছিলেন প্রথম একজন যিনি অন্তঃপুর থেকে বেরিয়ে এসে অসামরিক ভোজসভায় যোগ দিয়ে অভিজাত ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচরে আসেন। তিনিই ঠাকুর পরিবারের প্রথম গৃহবধূ, যিনি নিয়ম ভঙ্গ করে তার স্বামীর সঙ্গে স্বামীর কর্তব্যস্থল বোম্বাইতে যান। সেখানে তিনি পারসি জীবনযাত্রা প্রণালী পর্যবেক্ষণ ও তা গ্রহণ করেন এবং তার নতুন ধারণাসমূহ প্রয়োগ করে বাঙালি মহিলাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন সাধন করেন।

তিনি পোশাক সংস্কারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছিলেন। এযাবৎ মহিলারা ঐতিহ্যগত এক প্রস্থ প্রসারিত পাতলা কাপড়, যা শাড়ি বলে পরিচিত, পরতেন। এ শাড়ি সে সময়কার আধুনিক মহিলাদের জীবনযাত্রার প্রণালীর সঙ্গে শোভনীয় পোশাক ছিল না। জ্ঞানদানন্দিনী পারসি মহিলাদের শাড়িপড়ার রীতি গ্রহণ করে ‘ব্রাহ্মিকা শাড়ি’ পড়ার রীতি প্রবর্তন করেন। এ শাড়ির সাথে রয়েছে বডিস, পেটিকোট, জুতা ও মোজা। এ নতুন পোশাক ভদ্রমহিলাদের নতুন প্রজন্মদেরকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে বের হওয়ার ও কার্য সম্পাদন করার সুযোগ করে দিবে। ১৮৭১ সালেয় জ্ঞানদানন্দিনী নতুন প্রবর্তিত পোশাকটি ‘রাসবোধিনী’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন।

জ্ঞানদানন্দিনী প্রথমদিককার সমুদ্র অতিক্রান্ত কতিপয় হিন্দু মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তিনি ১৮৭৭ সালে তাঁর সন্তানকে নিয়ে একটি দীর্ঘ সফরে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। এক্ষেত্রেও তিনি আর একটি প্রাচীন লোকাচার ভঙ্গ করেন। বাংলা, ইংরেজি, গুজরাটি ও মারাঠা ভাষায় দক্ষ এবং ফরাসি ভাষায় মোটামুটি দক্ষ জ্ঞানদানন্দিনী জাগ্রত নতুন মহিলা, বিশেষ করে পশ্চিমা ধাঁচে গড়ে ওঠা বাঙালি অভিজাতদের জন্য পথপ্রদর্শক ও আদর্শ ছিলেন। লেখিকা না হলেও তিনি রাসবোধিনী ও ভারতী পত্রিকাতে কিছু ছোট প্রবন্ধ লিখেছেন। এছাড়া তিনি ছিলেন স্বর্ণকুমারী দেবী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সখী সমিতির একজন সক্রিয় সদস্য।  [সোনিয়া আমিন]