দিরাই উপজেলা
দিরাই উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা) আয়তন: ৪২০.৯৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৯´ থেকে ২৪°৫৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১০´ থেকে ৯১°২৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জামালগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে সাল্লা, বানিয়াচং ও নবীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে জগন্নাথপুর উপজেলা, পশ্চিমে সাল্লা, খালিয়াজুড়ী ও জামালগঞ্জ উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৪৩৬৯০; পুরুষ ১২২৬৩৬, মহিলা ১২১০৫৪। মুসলিম ১৭৯২২২, হিন্দু ৬৪২৮৫, বৌদ্ধ ১১, খ্রিস্টান ৭৮ এবং অন্যান্য ৯৪।
জলাশয় প্রধান নদী: সুরমা, কুশিয়ারা ও ডাহুকা। আইনাল বিল, ততুয়া বিল, জালালদি বিল, হরিয়া বিল ও ভোগডোবা বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ১৯৪২ সালে দিরাই থানা গঠিত হয় এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৯ | ১৩৭ | ২৩২ | ৩৬১৮৩ | ২০৭৫০৭ | ৫৭৯ | ৪৯.৮ (২০০১) | ৩৩.৪ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
৬.৫০ (২০০১) | ৯ | ২৯ | ২৮১৫৭ | ৩৪৮৯ (২০০১) | ৬০.০ |
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
২.৯০ (২০০১) | ৪ | ৮০২৬ | ২২১৫ (২০০১) | ৪৭.৯ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার(%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
করিমপুর ৪৭ | ১০১৫৯ | ১৩২৮৩ | ১২৯৭২ | ৪২.৫ | ||||
কুলঞ্জ ৫৭ | ১৩২৯৩ | ১৪৪০৯ | ১৪৬৯২ | ৩৭.৩ | ||||
চরনার চর ১৯ | ১২৪৩০ | ১৩৪৮৯ | ১২৮৭৫ | ৩২.৬ | ||||
জগদ্দল ৩৮ | ১৩০৯৭ | ১৪৬৩৬ | ১৫০০৫ | ৩৬.৫ | ||||
তাড়াল ৮৫ | ৯৮৩৩ | ১০৪১০ | ১০২৪৩ | ৩৪.২ | ||||
দিরাই শরমঙ্গল ২৮ | ১০৮৯৭ | ৭৬৩৮ | ৭৫২২ | ২৭.১ | ||||
ভাটিপাড়া ১৭ | ৯৩৬৫ | ৯৯৮২ | ৯৮৮৩ | ৩১.৪ | ||||
রফিনগর ৬৬ | ১২৭৬৪ | ১২৩০৯ | ১১৭০৯ | ২৩.৩ | ||||
রাজানগর ৭৬ | ১০৫৭৭ | ১২২২৬ | ১২২৫০ | ৩৫.৮ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ শ্যামারচর আখড়া, আকিলশাহের মাযার, ল্যাংটা শাহের মাযার, ভাটিপাড়া মসজিদ, হোসেনপুর মসজিদ।
ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৩৮ সালে এ উপজেলায় ‘নানকার বিদ্রোহ’ সংঘটিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে ২৫ আগস্ট পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা আজিম উল্লা, কুটি মিয়া ও গোপেন্দ্র দাস শহীদ হন এবং আব্দুল খালেক ও কোম্পানি কমান্ডার আতাউর রহমান আহত হন। উপজেলায় ১টি গণকবর এবং ১টি বধ্যভূমি রয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৫৩, মন্দির ১৫, মাযার ৬।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৭.১%; পুরুষ ৩৮.৫%, মহিলা ৩৫.৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দিরাই ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৭৯), দিরাই উচ্চ বালক বিদ্যালয় (১৯১৫), দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৫৮), রাজানগর কৃষ্ণচন্দ্র পাবলিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), ফকির মোহাম্মদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৭), দিরাই আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮০৫), দিরাই জামেয়া হাফিজিয়া হোসাইনিয়া মাদ্রাসা (১৯৭৮)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৮০, লাইব্রেরি ১, সিনেমা হল ২, নাট্যমঞ্চ ১, যাত্রাদল ৪, মহিলা সংগঠন ২, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৫।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৪.৮৫%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৩০%, শিল্প ০.২৪%, ব্যবসা ৮.১৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.২৬%, চাকরি ৩.১৯%, নির্মাণ ০.৬৪%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৭০% এবং অন্যান্য ৬.৩০%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৯.১১%, ভূমিহীন ৫০.৮৯%। শহরে ৪৩.২৫% এবং গ্রামে ৫০.০৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল পাট।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, বেল, কলা, লিচু, জাম, পেয়ারা।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২০, কাঁচারাস্তা ৩২২ কিমি; নৌপথ ২১ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি ও ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা রাইস মিল ১২, ফ্লাওয়ার মিল ২, স’মিল ৮, ব্রিকফিল্ড ৫, আইস ফ্যাক্টরি ৩, পাইপ ফ্যাক্টরি ১।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ২। দিরাই, রাজানগর, টানাখালি, রতনগঞ্জ, ভাটিপাড়া, শ্যামারচর, বাংলাবাজার ও ধলবাজার এবং ধলের মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য মাছ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৫.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৪%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ৬.৪%। এ উপজেলায় ৩% অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৬.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫১.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে । ১১.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র ১৩, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, ব্র্যাক পরিচালিত যক্ষ্মা হাসপাতাল ১, হীড বাংলাদেশ পরিচালিত কুষ্ঠরোগ হাসপাতাল ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৫, পশু হাসপাতাল ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭৪ ও ১৯৮৮ সালের বন্যা এবং ২০০৪ সালের সুনামিতে ফসল ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
এনজিও ব্র্যাক, হীড বাংলাদেশ। [জীবন কুমার চন্দ]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দিরাই উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।