দাস, কৃষ্ণভাবিনী

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:৪০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

দাস', 'কৃষ্ণভাবিনী (আনু. ১৮৬২-১৯১৯)  উনিশ শতকের প্রথম দিকের নারীবাদী লেখক, সমাজসেবক। তিনি ১৮৬২ সালে মুর্শিদাবাদের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪ বছর বয়সে দেবন্দ্রেনাথ দাসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর ১৮৭৬ সালে দেবেন্দ্রনাথ আইসিএস. (Indian Civil Service) প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্যে বিলেতে যান। উক্ত পরীক্ষায় তিনি ১৭তম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু ওই বছর ১৬জন প্রার্থীকে নিয়োগদানের কারণে তিনি উক্ত চাকরিলাভে বঞ্চিত হন। হতাশ হয়ে তিনি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গণিত বিষয়ের ওপর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং আরো কয়েক বছর লন্ডনে অবস্থান করেন এবং বৃটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৮৮২ সালে তিনি দেশে ফিরে ৬ মাস অবস্থান করে কৃষ্ণভাবিনীকে নিয়ে বিলেতে প্রত্যাবর্তন করেন।

বিয়ের পূর্বে কৃষ্ণভাবিনী পিতৃগৃহে সাক্ষরতা অর্জন করেন। পরে তিনি তাঁর পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রাপ্ত স্বামীর যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য নিজ তাগিদেই বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করেন।

তখনকার নারীরা বিদেশভ্রমণ করলে তা সম্মানজনক মনে করা হতো না। কিন্তু নির্ভীক কৃষ্ণভাবিনী ছিলেন এ মানসিকতা থেকে মুক্ত। তাঁর বিলেত যাওয়ার বাসনা ছিল তীব্র। সেখানকার সমাজ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখার আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর প্রবল। তাঁর মধ্যে ছিল সমাজ ও সভ্যতা পর্যবেক্ষণের বিশ্লেষণধর্মী মানসিকতা। তিনি সেখানকার মানুষ ও সমাজব্যবস্থা বিশেষ করে ইংরেজ নারীদের মুক্ত জীবন দেখে খুবই মুগ্ধ হন। বৃটেনে তাঁর পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার কথা তিনি লিখতে আরম্ভ করেন। এর ফলশ্রুতিতে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর ইংল্যান্ডে বঙ্গ-মহিলা (১৮৮৫) শীর্ষক একটি গ্রন্থ। গ্রন্থটি লন্ডনের বিশেষ করে নারী সমাজে বেশ প্রশংসিত হয়। উক্ত গ্রন্থটিতে তিনি ইংরেজ নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতা, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং তাঁদের কর্মজীবন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। নারীদের তখন ভোটাধিকার ছিল না। ভোটাধিকার লাভের জন্য নারীদের আন্দোলন, প্রতিবাদ প্রভৃতি তথ্য তিনি তুলে ধরেন। কৃষ্ণভাবিনী তাঁর গ্রন্থে ইংল্যান্ডের সমাজ, সভ্যতা ও শিক্ষার বিশেষ করে সমাজ ও পরিবারের ভেতরে নারীর ভূমিকার কথা। তাঁর গ্রন্থে আরো রয়েছে বঙ্গীয় সমাজ ব্যবস্থায় মহিলাদের অশিক্ষিত অসহায় রাখার চিত্র। তাঁর বর্ণনায়, বঙ্গীয় মহিলা হল গৃহকোণে আটকে থাকা খাঁচার পাখি। তিনি এ ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন। উল্লেখ্য একজন মহিলা হয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন এ গ্লানির ভয়ে তিনি তাঁর গ্রন্থে নিজের নাম উল্লেখ করেননি। কৃষ্ণভাবিনীর বই লেখার উদ্দেশ্য ছিলো বাঙালি নারীদের মুক্তি বিষয়ে তাদের সচেতন করা। তিনি গ্রন্থটিতে ইংল্যান্ডের গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতির সুফলের কথার বিশেষ বর্ণনা দেন।

১৮৮৯ সালের শেষ দিকে কৃষ্ণভাবিনী দেশে প্রত্যাগমন করেন। কলকাতায় ফেরার পর তিনি ভারতী, সাধনা, প্রবাসীসহ অন্যান্য পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। মহিলাদের শিক্ষা এবং স্বাধীনতার জন্যে তিনি জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। একজন প্রগতিশীল  চিন্তাধারার লেখক হিসেবে তিনি তাঁর রচনায় বিশেষ করে জোর দিয়েছিলেন নারীদের শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ওপর। কৃষ্ণভাবিনী কেবল নারীবাদী লেখিকা নন, একজন সমাজসেবীকাও ছিলেন। তিনি স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের জন্যে যেমন কাজ করেছেন, তেমনি নিরাশ্রয় ও দুঃস্থ বিধবাদের জন্যে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন যা ছিল ওই যুগে একটি অভাবনীয় বিষয়। ১৯১৯ সালে কৃষ্ণভাবিনীর মৃত্যু হয়। [গোলাম মুরশিদ]