দাস, আশুতোষ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''দাস'''''', ''''''আশুতোষ '''(১৮৮৮-১৯৪১)  সমাজসেবী ও বিপ্লবী নেতা। ১৮৮৮ সালের ১৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা শ্যামাচরণ দাস শ্রীরামপুরে চাকরি করতেন এবং সেসূত্রে সেখানেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। আশুতোষ ছিলেন একজন কৃতী ছাত্র।
'''দাস, আশুতোষ''' (১৮৮৮-১৯৪১)  সমাজসেবী ও বিপ্লবী নেতা। ১৮৮৮ সালের ১৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা শ্যামাচরণ দাস শ্রীরামপুরে চাকরি করতেন এবং সেসূত্রে সেখানেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। আশুতোষ ছিলেন একজন কৃতী ছাত্র।


১৯১৪ সালে আশুতোষ  [[১০০৮৯৫|কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ]] থেকে এমবি পাস করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি আইএমএস (Indian Medical Service)-এ অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতসহ মেসোপটেমিয়া ও আরবে দায়িত্ব পালন করেন। আশুতোষ মেসোপটেমিয়া বেস হাসপাতালে এক ব্রিটিশ ব্যাকটিরিওলজিস্টের সহকারীরূপে কাজ করেন। বিশ্বযুদ্ধ শেষে গান্ধীজীর আহবানে তিনি আইএমএস-এর চাকরি ছেড়ে ভারতে চলে আসেন এবং ১৮১৮ সালে ভারত সরকারের চিকিৎসা বিভাগে যোগ দেন। কিন্তু ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে এ চাকরিও ছেড়ে দেন। ১৯২২ সালে তিনি গান্ধীজীর জনসংযোগ ও আদর্শ গ্রাম সংগঠনের কাজে যোগ দিতে জীবননাশকারী  [[১০১০০৬|কালাজ্বর]] ও ম্যালেরিয়া-বিধ্বস্ত হুগলির হরিপাল গ্রামে এসে চিকিৎসাসেবা শুরু করেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ এলাকা কালাজ্বর মুক্ত হয়। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার জন্য একদল তরুণকেও সংগঠিত করেন।
১৯১৪ সালে আশুতোষ  [[কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ|কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ]] থেকে এমবি পাস করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি আইএমএস (Indian Medical Service)-এ অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতসহ মেসোপটেমিয়া ও আরবে দায়িত্ব পালন করেন। আশুতোষ মেসোপটেমিয়া বেস হাসপাতালে এক ব্রিটিশ ব্যাকটিরিওলজিস্টের সহকারীরূপে কাজ করেন। বিশ্বযুদ্ধ শেষে গান্ধীজীর আহবানে তিনি আইএমএস-এর চাকরি ছেড়ে ভারতে চলে আসেন এবং ১৮১৮ সালে ভারত সরকারের চিকিৎসা বিভাগে যোগ দেন। কিন্তু ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে এ চাকরিও ছেড়ে দেন। ১৯২২ সালে তিনি গান্ধীজীর জনসংযোগ ও আদর্শ গ্রাম সংগঠনের কাজে যোগ দিতে জীবননাশকারী  [[কালাজ্বর|কালাজ্বর]] ও ম্যালেরিয়া-বিধ্বস্ত হুগলির হরিপাল গ্রামে এসে চিকিৎসাসেবা শুরু করেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ এলাকা কালাজ্বর মুক্ত হয়। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার জন্য একদল তরুণকেও সংগঠিত করেন।


১৯২২ সালে উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলে আশুতোষ ত্রাণের কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তিনি হরিপালে একটি কল্যাণ সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে দুস্থ গ্রামবাসীদের চিকিৎসার জন্য তিনি একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন এবং রুগীদের মলমূত্র পরীক্ষার জন্য একটি ল্যাবরেটরিও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৫ সালে তারকেশ্বরে সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিচালনায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৩০-৩৪ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে জড়িত থাকার দায়ে তিনি অনেকবার কারারুদ্ধ হন। ১৯৩২ সালে তিনি লবণ-আইন অমান্য আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন।
১৯২২ সালে উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলে আশুতোষ ত্রাণের কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তিনি হরিপালে একটি কল্যাণ সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে দুস্থ গ্রামবাসীদের চিকিৎসার জন্য তিনি একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন এবং রুগীদের মলমূত্র পরীক্ষার জন্য একটি ল্যাবরেটরিও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৫ সালে তারকেশ্বরে সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিচালনায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৩০-৩৪ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে জড়িত থাকার দায়ে তিনি অনেকবার কারারুদ্ধ হন। ১৯৩২ সালে তিনি লবণ-আইন অমান্য আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন।
৯ নং লাইন: ৯ নং লাইন:


আশুতোষ দাস ছিলেন চিরকুমার এবং একজন নিঃস্বার্থ দেশহিতৈষী ও নিবেদিত সমাজকর্মী। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পায়ে হেঁটে একক সত্যাগ্রহ পালনকালে ম্যালিগনান্ট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৪১ সালের ৩১ জুলাই তিনি মারা যান।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]
আশুতোষ দাস ছিলেন চিরকুমার এবং একজন নিঃস্বার্থ দেশহিতৈষী ও নিবেদিত সমাজকর্মী। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পায়ে হেঁটে একক সত্যাগ্রহ পালনকালে ম্যালিগনান্ট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৪১ সালের ৩১ জুলাই তিনি মারা যান।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]
<!-- imported from file: দাস, আশুতোষ.html-->
[[en:Das, Ashutosh]]


[[en:Das, Ashutosh]]
[[en:Das, Ashutosh]]

০৪:৪৬, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

দাস, আশুতোষ (১৮৮৮-১৯৪১)  সমাজসেবী ও বিপ্লবী নেতা। ১৮৮৮ সালের ১৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা শ্যামাচরণ দাস শ্রীরামপুরে চাকরি করতেন এবং সেসূত্রে সেখানেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। আশুতোষ ছিলেন একজন কৃতী ছাত্র।

১৯১৪ সালে আশুতোষ  কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবি পাস করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি আইএমএস (Indian Medical Service)-এ অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতসহ মেসোপটেমিয়া ও আরবে দায়িত্ব পালন করেন। আশুতোষ মেসোপটেমিয়া বেস হাসপাতালে এক ব্রিটিশ ব্যাকটিরিওলজিস্টের সহকারীরূপে কাজ করেন। বিশ্বযুদ্ধ শেষে গান্ধীজীর আহবানে তিনি আইএমএস-এর চাকরি ছেড়ে ভারতে চলে আসেন এবং ১৮১৮ সালে ভারত সরকারের চিকিৎসা বিভাগে যোগ দেন। কিন্তু ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে এ চাকরিও ছেড়ে দেন। ১৯২২ সালে তিনি গান্ধীজীর জনসংযোগ ও আদর্শ গ্রাম সংগঠনের কাজে যোগ দিতে জীবননাশকারী  কালাজ্বর ও ম্যালেরিয়া-বিধ্বস্ত হুগলির হরিপাল গ্রামে এসে চিকিৎসাসেবা শুরু করেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ এলাকা কালাজ্বর মুক্ত হয়। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার জন্য একদল তরুণকেও সংগঠিত করেন।

১৯২২ সালে উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলে আশুতোষ ত্রাণের কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তিনি হরিপালে একটি কল্যাণ সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে দুস্থ গ্রামবাসীদের চিকিৎসার জন্য তিনি একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন এবং রুগীদের মলমূত্র পরীক্ষার জন্য একটি ল্যাবরেটরিও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৫ সালে তারকেশ্বরে সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিচালনায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৩০-৩৪ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে জড়িত থাকার দায়ে তিনি অনেকবার কারারুদ্ধ হন। ১৯৩২ সালে তিনি লবণ-আইন অমান্য আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন।

আশুতোষ দাস বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল কংগ্রেস কমিটি ও অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির দীর্ঘদিনের সদস্য এবং গান্ধীজীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি ‘কংগ্রেস চক্ষু চিকিৎসা’ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ কাজে তাঁর সহকর্মী ছিলেন ডাক্তার অনাদিচরণ ভট্টাচার্য।

আশুতোষ দাস ছিলেন চিরকুমার এবং একজন নিঃস্বার্থ দেশহিতৈষী ও নিবেদিত সমাজকর্মী। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পায়ে হেঁটে একক সত্যাগ্রহ পালনকালে ম্যালিগনান্ট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৪১ সালের ৩১ জুলাই তিনি মারা যান।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]