দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র
দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র(পিআরএসপি) দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিশ্বে নিম্ন আয়ের দেশগুলির অভ্যন্তরীণভাবে গৃহীত নীতি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য প্রণীত দলিল বা রূপরেখা। দেশগুলি তাদের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে কৌশলসমূহ প্রস্ত্তত করে। এ দলিল প্রণয়নের মাধ্যমে সহস্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষ্য (এমডিজি) এবং দক্ষিণ এশীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার প্রকাশ করা হয়েছে।
মার্চ ২০০৩ সালে বাংলাদেশ অন্তবর্তীকালীন পিআরএসপি (আইপিআরএসপি) প্রথম প্রণয়ন করে। এর শিরোনাম ছিল ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নের কৌশল’। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সুশাসনকে প্রধান সোপান হিসাবে গণ্য করে প্রথম যাত্রা শুরু হয়। আইপিআরএসপিকে প্রাথমিক সোপান হিসাবে গণ্য করে অক্টোবর ২০০৫ সালে অধিকতর ও ব্যাপক কর্মসূচি ও কৌশল প্রণয়নে কাজ সম্পন্ন করা হয়। এই দলিলটির শিরোনাম ছিল ‘আনলকিং দ্য পটেনশিয়াল: দ্রুততর দারিদ্র্য বিমোচনের জাতীয় কৌশল’ যা পিআরএসপি নামে বহুল প্রচারিত। ২০০৮ সালের অক্টোবরে ২০০৫ সালে প্রণীত দলিলটিকে হালনাগাদ করা হয়। উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতির ধারাবাহিক স্বাক্ষর হিসাবে গৃহীত এ দলিলের শিরোনাম হলো ‘দ্রুততর দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল-২ (অর্থবছর ২০০৯-১১) পথে অগ্রযাত্রা’।
এ দলিলকে সর্বাঙ্গীন দারিদ্র্য বিমোচনের মধ্যমেয়াদী কৌশল হিসাবে সরকারিভাবে দাবী করা হয়। পিআরএসপির কাঠামো নিম্নরূপ:
উপর্যুক্ত লেখচিত্র থেকে দেখা যায় যে, পূর্ববর্তী দলিল এবং বর্তমান দলিলের মধ্যে কিছু তারতম্য রয়েছে। পূর্ববর্তী চারটি কৌশলগত সোপানের স্থলে বর্তমানে স্থান পেয়েছে পাঁচটি। নতুন সংযোজন হলো মানবিক উন্নয়ন। একইভাবে বর্তমানে পাঁচটি (পূর্ববর্তী চারটির স্থলে) সহায়ক কৌশল রয়েছে। পাঁচ নম্বরটি হলো কারিগরি উৎকর্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অধিকতর উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা। পিআরএসপি খাদ্য নিরাপত্তাও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার কৌশলের উপরও গুরুত্ব প্রদান করেছে। উল্লেখ্য এ দুটি বিষয়ই সাম্প্রতিককালে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আশঙ্কার কারণ হিসাবে চিহ্নিত। বিশ্বব্যাপী ২০০৭-০৮ সালে খাদ্য মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসাবে খাদ্যশস্য ব্যবহার করে যানবাহনের তেল উৎপাদন ও জলবায়ু পরিবর্তনকেই চিহ্নিত করা হয়। এর ফলে খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধিসহ রপ্তানিও সাময়িক বন্ধ করে। এ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশের বিষয়টিকে দারুণভাবে আঘাত করে। অনুমান করা যায় যে সর্বমোট বসতবাড়ির ৮.৫ শতাংশ পরিবারের আয় হ্রাস পায়। এমনকি এ পরিবারগুলি দারিদ্র্যসীমার নিম্নে অবস্থান করে।
জলবায়ু পরিবর্তন দারিদ্রে্যর বিরুদ্ধে সংগ্রাম সংক্রান্ত হুমকিস্বরূপ। এ বিষয়টিকে স্বীকার করেই পিআরএসপি জলবায়ু পরিবর্তনে কুপ্রভাব নিরসনে একে বিভিন্নভাবে যুক্ত করে মূলধারায় প্রবাহিত করার কৌশলগত অবস্থানের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। এ লক্ষ্যে নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে ইতিমধ্যে সরকার একটি জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল গঠন করেছে। উন্নয়ন সহযোগীদের সাহায্যপুষ্ট একটি বহুমূখী তহবিল গঠনের চেষ্টা করা হয়েছে। এ প্রচেষ্টাকে সফল করা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের কর্ম পরিকল্পনাসহ বেসরকারি খাতের উপর নির্ভরশীল।
২০০৮ সালে সম্পাদিত পিআরএসপি-২ এর ভাগ্য সরকার বদলের ফলে কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে নতুন নির্বাচিত সরকারের কিছু নেতৃবৃন্দ পিআরএসপি-২ এ সংশোধনের বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। যত শীঘ্র এ সংশোধন আনা হয়, ততই মঙ্গল। [এএমএম শওকত আলী]
গ্রন্থপঞ্জি বাংলাদেশ সরকার, পরিকল্পনা কমিশন, আনলকিং দ্য পটেনশিয়াল: ন্যাশনাল স্ট্রাটেজি ফর অ্যাকসিলারেটেড পভার্টি রিডাকশন, অক্টোবর, ২০০৫; বাংলাদেশ সরকার, পরিকল্পনা কমিশন, ‘মুভিং এহেড’ ন্যাশনাল স্ট্রাটেজি ফর অ্যাকসিলারেটেড পভার্টি রিডাকশন-২ (এফওয়াই ২০০৯-১১; ২০০৮); সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, ঢাকা, স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি ইন এফওয়াই ২০০৭-০৮ অ্যান্ড আউটলুক ফর ২০০৮-০৯