দাপ্তরিক শিক্ষা

দাপ্তরিক শিক্ষা  বিভিন্ন দাপ্তরিক চাকরি যেমন মুদ্রাক্ষরিক, সাঁটলিপিকার, কেরানি, অভ্যর্থনাকারী, রেকর্ড কিপার, বুক কিপার, হিসাবরক্ষণ সহকারি, টেলিফোন অপারেটর এবং দাপ্তরিক সচিবের জন্য উপযোগী জ্ঞান ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ। ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজে ১৮৮৬ সালে সর্বপ্রথম এ শিক্ষা চালু হয়। বাংলায় ১৮৯৫ সালে প্রথম এ শিক্ষা প্রবর্তিত হয় কলকাতায় একটি বাণিজ্য কলেজ স্থাপনের মধ্য দিয়ে। ১৯০৩ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বাণিজ্য শিক্ষা শুরু হয়। ১৯০৫ সালে এ শিক্ষার জন্য সরকারি বাণিজ্য ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়। ১৯৪৬-৪৭ সাল নাগাদ ব্রিটিশ ভারতে বাণিজ্য বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১৫ এবং বাংলায় এর সংখ্যা ছিল ১৭।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর গঠিত দাপ্তরিক শিক্ষা কমিটি দক্ষ দাপ্তরিক কর্মী সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে। ১৯৬৭ সাল নাগাদ  পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে মোট ১৬টি সরকারি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়। এগুলিতে দাপ্তরিক শিক্ষা বিষয়ে সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদান করা হতে থাকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর দাপ্তরিক শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৭৩ সাল থেকে প্রদত্ত ডিপ্লোমা ডিগ্রিকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেটের সমান মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি মাসে সকল কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। দাপ্তরিক কার্যক্রমের অব্যাহত গুরুত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দাপ্তরিক শিক্ষাও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং এ বিষয়ের গ্রাজুয়েটদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনে দিনে দাপ্তরিক শিক্ষায় ছাত্র ভর্তির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯৬-৯৭ সালে এ শিক্ষায় মোট ছাত্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৯৮৭। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার এসব ইনস্টিটিউটের অবকাঠামো, কম্পিউটার এবং অন্যান্য শিক্ষণ সুবিধা উন্নয়নের জন্য ১৯৯৩ সালে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্প সমাপ্ত হবার পর এসব ইনস্টিটিউট থেকে প্রায় ৩,২০০ ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা লাভ করবে।  [মো. শামসুল হক]