দাগনভূঁইয়া উপজেলা

দাগনভূঁইয়া উপজেলা (ফেনী জেলা)  আয়তন: ১৪১.৭০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৫৩´ থেকে ২৩°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ ৯°১১৫´ থেকে ৯১°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম ও ফেনী সদর উপজেলা, দক্ষিণে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে ফেনী সদর ও সোনাগাজী উপজেলা, পশ্চিমে সেনবাগ উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৫৪৪০২; পুরুষ ১১৮৭৫২, মহিলা ১৩৫৬৫০। মুসলিম ২৩৯৪৫৯, হিন্দু ১৪৮৮৯, বৌদ্ধ ১৮, খ্রিস্টান ২৮ এবং অন্যান্য ৮।

জলাশয় ছোট ফেনী নদী।

প্রশাসন দাগনভূঁইয়া থানা গঠিত হয় ১৯৮০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ সালে।


উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৯৩ ১১৯ ৩৩৫৭৪ ২২০৮২৮ ১৭৯৫ ৫৮.৪ (২০০১) ৫৭.৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১২.৭৫ (২০০১) ২০ ৩২০৮০ ২০৩৮ (২০০১) ৬৫.১
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১.৬১ (২০০১) ১৪৯৪ ৭৯৮ (২০০১) ৪৯.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইয়াকুবপুর ৯৪ ৩৬৭১ ১৩১৮৯ ১৫২৬৮ ৬১.৭
জয়লস্কর ৩৮ ৫৪৫৮ ১৯৫৪৪ ২২০২২ ৬১.১
দাগনভূইঁয়া ১২ ২৪৯৩ ৮৪২৭ ১০১৫৭ ৬২.৬
পূর্বচন্দ্রপুর ৬৯ ৪৪৪৮ ১১৪১৭ ১৩৪২৬ ৬১.৯
মতুভূইঁয়া ৫৬ ২৭০২ ৯১৪৮ ১০৪৪০ ৫৭.৮
রাজাপুর ৭৩ ৪৫৯০ ১৫৭৮৪ ১৯৪২৮ ৫৩.২
রামনগর ৭৭ ২৮০২ ৯৩০৯ ১০২৪৪ ৬২.২
সিন্দুরপুর ৯০ ৫৭০৩ ১৫৮৪৫ ১৮৬৭৪ ৪৭.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দাগনভূঁইয়া উপজেলা ২নং সেক্টরের অধীন ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের হরিণা, পালাটোনা, দেরাদুন, বাগমারা ও অমপিতে ট্রেনিং নিয়ে দাগনভূঁইয়া এলাকার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। উপজেলায় ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন দাগনভূঞা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩০৬, মন্দির ৩০, মাযার ৬। জয়লস্করে পাঁচ পীরের মাযার, নলদিয়ার দেওয়ান আবদুর রশীদ, মওলানা মোহাম্মদ ইছহাক (রঃ) ও শাহ সুফী ছদরুদ্দীনের (রঃ) মাযার উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৮.৮%; পুরুষ ৫৮.৭%, মহিলা ৫৮.৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজ (১৯৮৫), দাগনভূঁইয়া বালিকা বিদ্যালয়, রামনগর কে.এম.সি হাইস্কুল, জয়লস্কর হাইস্কুল (১৯৪৩)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী   অবলুপ্ত: কালান্তর, শুভেচ্ছা (সাপ্তাহিক); শুচিতা, দিশারী (সাময়িকী)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৪২, সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ২৩।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২৮.২৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩৫%, শিল্প ০.৭৭%, ব্যবসা ১৫.১২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.০৭%, চাকরি ২৪.১০%, নির্মাণ ১.৪১%, ধর্মীয় সেবা ০.৫৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৯.৩৩% এবং অন্যান্য ১৪.০৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬২.৭১%, ভূমিহীন ৩৭.২৯%। শহরে ৬১.৪৯% এবং গ্রামে ৬২.৮৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তিল, তিসি, কাউন, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, কলা, নারিকেল, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের চাষ হয় এবং প্রায় শতাধিক গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২২৪.৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬১৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল, কটন স্পিনিং মিলস্, ব্রিকফিল্ড ও টুপি তৈরির কারখানা রয়েছে।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, কাঠ, বাঁশ ও বেতের কাজ ইত্যাদি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৯, মেলা ৩। দাগনভূঁইয়া বাজার, আমু ভূঞার হাট, তুলাতলী বাজার, বেঁকের বাজার, ফাজিলের হাট,  কোরাইশ মুন্সী হাট, ছিলোনিয়া হাট, রাজাপুর বাজার এবং নলদিয়া মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানি দ্রব্য  চিংড়ি, নারিকেল, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮১.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.২%, ট্যাপ ১. ৭% এবং অন্যান্য ৪.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৮.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৯.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, ক্লিনিক ৬।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে এ উপজেলার অনেক লোক প্রাণ হারায় এবং ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা,  সিডা, ডানিডা, কেয়ার। [মহিউদ্দীন হোসেন মহীন]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দাগনভূঁইয়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।