দাকোপ উপজেলা

দাকোপ উপজেলা (খুলনা জেলা)  আয়তন: ৯৯১.৫৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২৪´ থেকে ২২°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৪´ থেকে ৮৯°৩৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বটিয়াঘাটা উপজেলা, দক্ষিণে পশুর নদী, পূর্বে রামপাল ও মংলা উপজেলা, পশ্চিমে পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৫২৩১৬; পুরুষ ৭৬২৯১, মহিলা ৭৬০২৫। মুসলিম ৬৩৩৩৪, হিন্দু ৮৬১১৩ এবং খিস্টান ২৮৬৯।

জলাশয় প্রধান নদী: পশুর, শিবসা, মানকী, ভদ্রা। পলাশবাড়ী, চুরিয়া, নালিয়ান ও জুগরা খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন দাকোপ থানা গঠিত হয় ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯০৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
২৬ ৯৭ ১৪১৮৮ ১৩৮১২৮ ১৫৪ ৬৪.৫ ৫৫.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৪৯ ১৫ ১৪১৮৮ ১৪৯৫ ৬৪.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কামারখোলা ৬৩ ১০২১৪ ৭১০৩ ৬৭৯৪ ৫৮.১
কৈলাশগঞ্জ ৫২ ৭৭৪৪ ৭১৭৩ ৭৩৪৩ ৬১.৫
তিলডাঙ্গা ৮৪ ২৪৫২৬ ৮৩৫৯ ৮৬৪৭ ৬০.০
দাকোপ ৪২ ৪৩২৯ ৩৫৩৪ ৩৫১৩ ৬৫.৬
বাজুয়া ১০ ১৪০৫৪ ৭৯০৯ ৭৮৪৪ ৫০.৫
বানীশান্তা ১৩ ৫৬৭৪৯ ৭২৯১ ৭৩১৫ ৪৭.৬
লাউডুবি ২১ ৩৬১৩ ৪৫৬৯ ৪৬৫৩ ৫৮.৫
সুতারখালি ৭৩ ১১২০৫৯ ১৫২০৫ ১৪৮৫৫ ৪৯.৫
পানখালী ৬৯ ৯০৯৯ ৭৬৩৭ ৭৯৩৩ ৫৬.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলার চালনা বাজার এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি কোন যুদ্ধ না হলেও, মংলা ও দাপোকের মাঝামাঝি বানিশান্তার অদূরে মুক্তিযোদ্ধারা একটি পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে দেয় ও খাটাইল-লক্ষ্মীখোলা রাজাকার ক্যাম্পে সফল অপারেশন পরিচালনা করে। উপজেলার বাজুয়া হাইস্কুল প্রাঙ্গণে ১টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে এবং দাকোপ পৌরসভার ডাকবাংলো মোড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন দাকোপ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৭২, মন্দির ১৩৭, গির্জা ১১, তীর্থস্থান ২।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৬.০%; পুরুষ ৬২.৯%, মহিলা ৪৯.১%।কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৬, এনজিও স্কুল ৪৩, মাদ্রাসা ৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সুরেন্দ্রনাথ কলেজ (১৯৭২), চালনা এম এম কলেজ (১৯৮৪), শ্রীনগর এম.ই মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮১৭), বাজুয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), চালনা সরকারি কে.সি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪৭), বাজুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪৭)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  আলোছায়া, বরষা, পদক্ষেপ, প্রয়াস।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৪০, লাইব্রেরি ২, নাট্যদল ১, যাত্রাপার্টি ১, মহিলা সংগঠন ১।

বিশেষ আকর্ষণ  উপজেলার দক্ষিণ অংশ জুড়ে সুন্দরবন, কৃত্রিম কুমির প্রজনন কেন্দ্র, ওয়াচ টাওয়ার প্রভৃতি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৬.০৭%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৮৫%, ব্যবসা ১২.৮৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৭২%, চাকরি ৪.১০%, নির্মাণ ০.৯৩%, ধর্মীয় সেবা ০.২৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৫% এবং অন্যান্য ৯.১৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৫.০২% এবং ভূমিহীন ৪৪.৯৮%। শহরে ৪২.০৪% এবং গ্রামে ৫৭.০৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, কুমড়া, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্ত প্রায় ফসলাদি  পাট, তিল, আউশ, বোরো ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি  নারিকেল, পেয়ারা, কুল, সফেদা, বাঙ্গি, তরমুজ।

মৎস্য খামার  এ উপজেলায় ব্যাপক ভিত্তিক চিংড়ি চাষ খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৮৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৩৫৫ কিমি; নৌপথ ৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ধানকল, লবণ উৎপাদন কেন্দ্র প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ উল্লেখযোগ্য।

হাটবাজার ও মেলা চালনার হাট, বাজুয়ার হাট, পানখালির হাট, পোদ্দারগঞ্জ হাট এবং বাজুয়ার বিজয়া দশমীর মেলা, বারুণী মেলা ও শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্রের জন্মোৎসব উপলক্ষে মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  হিমায়িত চিংড়ি এবং কাঁকড়া।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ থানার সবক’টি ওয়ার্ড পলিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৮.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৩০.৬%, ট্যাপ ০.৭% এবং অন্যান্য ৬৮.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৭.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৮.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৩, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১।

এনজিও প্রশিকা, ওয়ার্ল্ড ভিশন, গণসাহায্য সংস্থা, হীড বাংলাদেশ, ব্র্যাক, স্টেপ, প্রদীপন, ভোস্ট, এসডো।  [শাহ সিদ্দিক]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দাকোপ উপজেলা মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০০৭।