দর্জি

কর্মরত দর্জি

দর্জি কাপড় কাটা, সেলাই করা, রিপু করা প্রভৃতিতে নিয়োজিত একটি পেশাজীবী গোষ্ঠী। প্রাচীন বাংলায় মুসলমানরাই সর্বপ্রথম দর্জি পেশায় নিয়োজিত হয়। এর মূল কারণ ছিল, মুসলমান পুরুষ ও নারীদের মধ্যে প্রচলিত সেলাই-করা কাপড় পরার রীতি যা হিন্দুদের মধ্যে ছিল না। হিন্দু পুরুষরা ধুতি ও চাদর পরিধান করত, আর হিন্দু মহিলারা সনাতনী পন্থায় শাড়ি পরত। ফলে হিন্দুদের জন্য দর্জির কাজের কোন সুযোগ ছিল না। সময়ের আবর্তনে হিন্দুদের পোশাক-পরিচ্ছদে পরিবর্তন আসে। ফলে পরিবর্তনমুখী ও ফ্যাশননির্ভর পোশাকের চাহিদা মেটাতে জীবিকার প্রয়োজনে তাদের মধ্যেও দর্জির আবির্ভাব ঘটে।

আগের দিনের দর্জিদের কোন সেলাই মেশিন ছিল না। কাঁচি, সুই ও সুতা নিয়ে তারা হাত দিয়েই কাজ করতো। তাদের মধ্যে অনেকে আবার এমব্রয়ডারির কাজ জানতো। আধুনিক কালের দর্জিরা প্রায় সবাই সেলাই মেশিন ব্যবহার করে। অধিকাংশ সেলাই মেশিনই যান্ত্রিক এবং তা পাদানি ঘুরানোর মাধ্যমে চালানো হয়। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলির সেলাই মেশিন বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত। বর্তমানে ব্যাপকহারে উৎপন্ন তৈরি পোশাকশিল্প দর্জির কাজ কিছুটা সীমিত করেছে বটে কিন্তু সারা দেশে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় দর্জিদের কাজের পরিধি একটুও কমে নি। কারণ সাধারণ জনগণ লুঙ্গি, শার্ট, পায়জামা, পাঞ্জাবিসহ আরও অনেক ধরনের পোশাক পরে, যা দর্জিরাই তৈরি করে থাকে। শহরে আধুনিক টেইলারিং শিল্প দর্জিদের নির্দিষ্ট মাসোহারার শ্রমিকে পরিণত করেছে। তৈরি পোশাক শিল্পের অনেক উদ্যোক্তা তাদের সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে দর্জিদের সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজে লাগায়। [গোফরান ফারুকী]