দত্ত, কল্পনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(fix: image tag)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''দত্ত'''''', ''''''কল্পনা '''(১৯১৩-১৯৯৫)  একজন বিপ্লবী। ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার শ্রীপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কল্পনা''' '''কলকাতার বেথুন কলেজে যোগদান করেন। বারো বছর বয়সে [[১০৩৬৪৮|ক্ষুদিরাম]] ও [[১০২৫১৪|কানাইলাল দত্ত]] এর বিপ্লবী কর্মকান্ড স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানে তাঁকে আগ্রহী করে তোলে এবং তিনি ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে [[১০২৫৫১|পূর্ণেন্দু দস্তিদার]] তাঁকে মাস্টারদা [[১০৬১০৫|সূর্যসেন]] পরিচালিত বিপ্লবী গোষ্ঠীতে যোগদানে আগ্রহী করে তোলেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ ঘটনার পর কল্পনা চট্টগ্রামে ফিরে আসেন এবং ১৯৩১ সালের মে মাসে সূর্যসেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইতোমধ্যে অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনন্ত সিংহ, গণেশ ঘোষ ও লোকনাথ বল প্রমুখ বহু নেতা গ্রেপ্তার হয়ে বিচারাধীন ছিলেন।
[[Image:DattaKalpana.jpg|thumb|400px|right|কল্পনা দত্ত]]
'''দত্ত, কল্পনা''' (১৯১৩-১৯৯৫)  একজন বিপ্লবী। ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার শ্রীপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কল্পনা কলকাতার বেথুন কলেজে যোগদান করেন। বারো বছর বয়সে [[বসু, ক্ষুদিরাম|ক্ষুদিরাম]] ও [[দত্ত, কানাইলাল|কানাইলাল দত্ত]]-এর বিপ্লবী কর্মকান্ড স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানে তাঁকে আগ্রহী করে তোলে এবং তিনি ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে [[দস্তিদার, পূর্ণেন্দু|পূর্ণেন্দু দস্তিদার]] তাঁকে [[সূর্যসেন, মাস্টারদা|মাস্টারদা সূর্যসেন]] পরিচালিত বিপ্লবী গোষ্ঠীতে যোগদানে আগ্রহী করে তোলেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ ঘটনার পর কল্পনা চট্টগ্রামে ফিরে আসেন এবং ১৯৩১ সালের মে মাসে সূর্যসেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইতোমধ্যে অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনন্ত সিংহ, গণেশ ঘোষ ও লোকনাথ বল প্রমুখ বহু নেতা গ্রেপ্তার হয়ে বিচারাধীন ছিলেন।


কলকাতা থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক দ্রব্যসমূহ কৌশলে বহন করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় কল্পনা দত্তকে। তিনি গোপনে উগ্র বিস্ফোরক ‘গান-কটন’ প্রস্ত্তত করেন এবং বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারাধীন বিপ্লবীদের মুক্ত করার জন্য চট্টগ্রাম আদালত ভবনে এবং কারাগারে ডিনামাইট ফিউজ পেতে তা উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কল্পনা দত্তের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায় এবং তাঁর গতিবিধির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এ সময়েই তিনি তাঁর কমরেড [[১০০৭৫৫|প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার]] এর সঙ্গে নিয়মিত পিস্তল চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।  
কলকাতা থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক দ্রব্যসমূহ কৌশলে বহন করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় কল্পনা দত্তকে। তিনি গোপনে উগ্র বিস্ফোরক ‘গান-কটন’ প্রস্ত্তত করেন এবং বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারাধীন বিপ্লবীদের মুক্ত করার জন্য চট্টগ্রাম আদালত ভবনে এবং কারাগারে ডিনামাইট ফিউজ পেতে তা উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কল্পনা দত্তের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায় এবং তাঁর গতিবিধির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এ সময়েই তিনি তাঁর কমরেড [[ওয়াদ্দেদার, প্রীতিলতা|প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার]]-এর সঙ্গে নিয়মিত পিস্তল চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।  


১৯৩১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে [[১০৬১০৫|সূর্যসেন]], কল্পনা ও প্রীতিলতাকে চট্টগ্রামের ‘ইউরোপীয়ান ক্লাব’ আক্রমণ করার দায়িত্ব দেন। আক্রমণের মাত্র এক সপ্তাহ পূর্বে বালকের ছদ্মবেশে আক্রমণস্থল জরিপ করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। #[[Image:দত্ত, কল্পনা_html_88407781.png]]
১৯৩১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সূর্যসেন, কল্পনা ও প্রীতিলতাকে চট্টগ্রামের ‘ইউরোপীয়ান ক্লাব’ আক্রমণ করার দায়িত্ব দেন। আক্রমণের মাত্র এক সপ্তাহ পূর্বে বালকের ছদ্মবেশে আক্রমণস্থল জরিপ করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন।
 
[[Image:DattaKalpana.jpg|thumb|400px]]
 
#'''কল্পনা দত্ত'''


জেলে থাকাকালীন তিনি পাহাড়তলীর বিপ্লবী ঘটনা ও প্রীতিলতার বীরোচিত আত্মহত্যার ঘটনা জানতে পারেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সূর্যসেনের নির্দেশে তিনি আত্মগোপন করেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পুলিশ তাঁদের গোপন আস্তানা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং সূর্যসেন গ্রেপ্তার হন; কিন্তু কল্পনা ও অপর নেতা মহেন্দ্র দত্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।  
জেলে থাকাকালীন তিনি পাহাড়তলীর বিপ্লবী ঘটনা ও প্রীতিলতার বীরোচিত আত্মহত্যার ঘটনা জানতে পারেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সূর্যসেনের নির্দেশে তিনি আত্মগোপন করেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পুলিশ তাঁদের গোপন আস্তানা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং সূর্যসেন গ্রেপ্তার হন; কিন্তু কল্পনা ও অপর নেতা মহেন্দ্র দত্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।  


১৯৩৩ সালের ১৯ মে কল্পনা তাঁর দলের অন্য কয়েকজন সহকর্মীসহ ধরা পড়েন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলার দ্বিতীয় বিচারপর্বে সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে ফাঁসি এবং কল্পনাকে যাবজ্জীবন কারাবাসের রায় প্রদান করা হয়। ১৯৩৯ সালে কারামুক্ত হওয়ার পর ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি পুনরায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন সিপিআই কর্মী হিসেবে। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি দলের কৃষক ও নারী ফ্রন্ট গঠন করেন। ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম থেকে বিধান সভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৪৭ সালের পর তিনি ভারতে চলে যান এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৯৯৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কল্পনা দত্ত দিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  [শৈলেশ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়]
১৯৩৩ সালের ১৯ মে কল্পনা তাঁর দলের অন্য কয়েকজন সহকর্মীসহ ধরা পড়েন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলার দ্বিতীয় বিচারপর্বে সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে ফাঁসি এবং কল্পনাকে যাবজ্জীবন কারাবাসের রায় প্রদান করা হয়। ১৯৩৯ সালে কারামুক্ত হওয়ার পর ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি পুনরায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন সিপিআই কর্মী হিসেবে। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি দলের কৃষক ও নারী ফ্রন্ট গঠন করেন। ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম থেকে বিধান সভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৪৭ সালের পর তিনি ভারতে চলে যান এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৯৯৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কল্পনা দত্ত দিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  [শৈলেশ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়]
<!-- imported from file: দত্ত, কল্পনা.html-->


[[en:Datta, Kalpana]]
[[en:Datta, Kalpana]]

০৪:১৩, ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কল্পনা দত্ত

দত্ত, কল্পনা (১৯১৩-১৯৯৫)  একজন বিপ্লবী। ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার শ্রীপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কল্পনা কলকাতার বেথুন কলেজে যোগদান করেন। বারো বছর বয়সে ক্ষুদিরামকানাইলাল দত্ত-এর বিপ্লবী কর্মকান্ড স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানে তাঁকে আগ্রহী করে তোলে এবং তিনি ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে পূর্ণেন্দু দস্তিদার তাঁকে মাস্টারদা সূর্যসেন পরিচালিত বিপ্লবী গোষ্ঠীতে যোগদানে আগ্রহী করে তোলেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ ঘটনার পর কল্পনা চট্টগ্রামে ফিরে আসেন এবং ১৯৩১ সালের মে মাসে সূর্যসেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইতোমধ্যে অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনন্ত সিংহ, গণেশ ঘোষ ও লোকনাথ বল প্রমুখ বহু নেতা গ্রেপ্তার হয়ে বিচারাধীন ছিলেন।

কলকাতা থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক দ্রব্যসমূহ কৌশলে বহন করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় কল্পনা দত্তকে। তিনি গোপনে উগ্র বিস্ফোরক ‘গান-কটন’ প্রস্ত্তত করেন এবং বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারাধীন বিপ্লবীদের মুক্ত করার জন্য চট্টগ্রাম আদালত ভবনে এবং কারাগারে ডিনামাইট ফিউজ পেতে তা উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কল্পনা দত্তের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায় এবং তাঁর গতিবিধির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এ সময়েই তিনি তাঁর কমরেড প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-এর সঙ্গে নিয়মিত পিস্তল চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

১৯৩১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সূর্যসেন, কল্পনা ও প্রীতিলতাকে চট্টগ্রামের ‘ইউরোপীয়ান ক্লাব’ আক্রমণ করার দায়িত্ব দেন। আক্রমণের মাত্র এক সপ্তাহ পূর্বে বালকের ছদ্মবেশে আক্রমণস্থল জরিপ করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন।

জেলে থাকাকালীন তিনি পাহাড়তলীর বিপ্লবী ঘটনা ও প্রীতিলতার বীরোচিত আত্মহত্যার ঘটনা জানতে পারেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সূর্যসেনের নির্দেশে তিনি আত্মগোপন করেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পুলিশ তাঁদের গোপন আস্তানা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং সূর্যসেন গ্রেপ্তার হন; কিন্তু কল্পনা ও অপর নেতা মহেন্দ্র দত্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

১৯৩৩ সালের ১৯ মে কল্পনা তাঁর দলের অন্য কয়েকজন সহকর্মীসহ ধরা পড়েন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলার দ্বিতীয় বিচারপর্বে সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে ফাঁসি এবং কল্পনাকে যাবজ্জীবন কারাবাসের রায় প্রদান করা হয়। ১৯৩৯ সালে কারামুক্ত হওয়ার পর ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি পুনরায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন সিপিআই কর্মী হিসেবে। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি দলের কৃষক ও নারী ফ্রন্ট গঠন করেন। ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম থেকে বিধান সভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৪৭ সালের পর তিনি ভারতে চলে যান এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৯৯৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কল্পনা দত্ত দিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  [শৈলেশ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়]