দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৩০৩.১৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৯´ থেকে ২৫°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৪´ থেকে ৯১°২৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সুনামগঞ্জ সদর ও দোয়ারাবাজার উপজেলা, দক্ষিণে জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলা, পূর্বে দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলা, পশ্চিমে জামালগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলাটি বিল অঞ্চল, মৌসুমী প্লাবনভূমি, মৎস্য বিচরণক্ষেত্র হিসেবে খ্যাত।

জনসংখ্যা ১৮৩৮৮১; পুরুষ ৯০৯৯৭, মহিলা ৯২৮৮৪। মুসলিম ১৬৬০০৮, হিন্দু ১৭৭৭১, খ্রিস্টান ৫, বৌদ্ধ ১৫ এবং অন্যান্য ৮২। এ উপজেলায় হাজং, মনিপুরী, গারো প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় বড়দল বিল, উফা বিল, করচাবড়ার বিল, বেহালা বিল ও বাসাডুবি বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ২০০৬ সালের ৬ জুন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণাংশ নিয়ে নতুন এই উপজেলা গঠনের সিধান্ত গ্রহণ    করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১০৭ ১৭১ ৫১৮১ ১৭৮৭০০ ৬০৭ ৩৪.১ ৩২.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৫৪ ৫১৮১ ৭৯২ ৩৪.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরূষ মহিলা
জয়কলস ৩৩ ৯৫৮৫ ১৮৩২৮ ১৮৫০৮ ৩৩.৩
দুর্গাপাশা ১১ ৯৪৭৭ ১২০২৫ ১১৯৫৯ ৩৫.৫
পশ্চিম পাগলা ৯০ ৭৮৯৬ ৯০৯৬ ৯২১২ ৩৭.৯
পশ্চিম বীরগাঁও ৮৯ ১৪৯১২ ৭৫৫৪ ৭৭৬০ ৩৫.৫
পাথারিয়া ৬১ ৮৩১৬ ১১৫৩৫ ১২০২৪ ২৭.৬
পূর্ব পাগলা ৯৪ ৬৯৩২ ১০৪০৫ ১০৮৪৩ ৩৩.৪
পূর্ব বীরগাঁও ৯২ ৭৮১৮ ৭৫৭৮ ৭৯০৭ ৩১.০
শিমুলবাগ ৭৮ ৯৯৭৮ ১৪৪৭৬ ১৪৬৭১ ২৬.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা পাথারিয়া ইউনিয়নের বাবনীয়া গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে একটি সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এছাড়া আহসানমারা ফেরিঘাট, সদরপুর সেতু, রাজাকার কমান্ডার আব্দুল ছত্তারের ঘাঁটি গনিগঞ্জ, ডাবর ফেরিঘাট প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন পরিচালনা করে। আহসানমারায় ‘মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য’ নামে ১টি ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৫০, মন্দির ২০।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৩২.৩%; পুরুষ ৩৩.৭%, মহিলা ৩০.৯%। কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫, মাদ্রাসা ৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ: পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, গণিনগর ষোলগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, ডুংরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, জয়কলস উজানীগাঁও রশিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সুরমা উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়, উজানীগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডুংরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মানিকপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গনীগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বীরগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাগলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রনসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিকারকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামেয়া ইস. হাজী আক্রাম আলী দাখিল মাদ্রাসা, আমরিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, মহিলা সংগঠন ১, খেলার  মাঠ ৩৮।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.৩৯%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৬৯%, শিল্প ০.৪৯%, ব্যবসা ৭.১৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৫২%, চাকরি ২.৭৫%, নির্মাণ ০.৪২%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.৫৪% এবং    অন্যান্য ১০.৬৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৩.৭২%, ভূমিহীন ৫৬.২৮%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, কাউন, অড়হর, তামাক।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেয়ারা, আনারস।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  মৎস্য ১৭৫, হাঁস-মুরগি ৬০, গবাদিপশু ৭।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২০ কিমি, কাঁচা রাস্তা ২০৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, বরফকল, কোল্ডস্টোরেজ ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র, ওয়েলডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০। টুকের বাজার, বীরগাঁও বাজার, বাংলা বাজার, পাথারিয়া বাজার, মিনা বাজার, জয়কলস বাজার, নোয়াখালী বাজার, গনিগঞ্জ বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৮.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৫%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ৬.৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৯.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬০.৪% পরিবার অস্বাস্থাকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১০.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২, ক্লিনিক ১৭।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা।  [রাজীব মন্ডল]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।