থেরবাদ সংঘ
থেরবাদ সংঘ থেরবাদী বৌদ্ধ মতাদর্শের অনুসারী ভিক্ষুগোষ্ঠী। বাংলাদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ এ ধর্মাদর্শের অনুসারী, তাই তাঁদের সমষ্টিগতভাবে বলা হয় ‘থেরবাদ সংঘ’। থেরবাদ সংঘের জীবন ও কর্মাচারের সংবিধান হলো বিনয়পিটক। এতে ভিক্ষুদের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে।
সম্রাট অশোকের পৃষ্ঠপোষকতা এবং তাঁর পুত্র মহিন্দ থেরোর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বৌদ্ধধর্ম ভারতীয় উপমহাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করে। ক্রমে বহুব্যাপ্ত এ ধর্মের অনুশীলনকারীদের নীতি-সংস্কারে বিভিন্ন দেশাচার ও আঞ্চলিক লোকাচার অনুপ্রবেশ করে। এর প্রভাব পড়ে ভিক্ষুদের মধ্যেও। তাই ভিক্ষুদের একটি অংশ মূল বিনয়-বিধানের কিছু কঠোর নীতিমালা শিথিল করে অনুসরণ করতে থাকেন। তাঁরা নিজেদের সংস্কারবাদী বৌদ্ধপন্থী হিসেবে মহাসাংঘিক নামে পরিচয় দেন। এ মহাসাংঘিক ধারা থেকে পরবর্তীতে বিভিন্ন বৌদ্ধ মতাদর্শের উদ্ভব ঘটে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ প্রাচীন মৌলিক রীতিতেই স্থিত থাকেন এবং তাঁদের সমষ্টিই হলো থেরবাদ সংঘ।
বাংলাদেশের ভিক্ষুসংঘ সামগ্রিকভাবে থেরবাদ সংঘ নামে পরিচিত হলেও এবং থেরবাদের নৈষ্ঠিক অনুসারী হলেও গুরুভেদে তাঁদের মধ্যে নানা বিভক্তি বিদ্যমান। ভিক্ষুদের এ ভাগ বা দলকে বলে ‘নিকায়’। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের থেরবাদ সংঘে এ নিকায় বিভাজন রয়েছে। বাংলাদেশে বিরাজমান নিকায়সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মহাস্থবির নিকায়, সংঘরাজ নিকায়, সুধর্মা নিকায় ও দোহরা বা দোয়ারা নিকায়। মহাস্থবির ও সংঘরাজ নিকায়ের অনুরাগীদের মধ্যে বাংলাদেশের সমতলীয় বাঙালি বৌদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। এ দু’ নিকায়ের মধ্যে মহাস্থবির নিকায় প্রাচীনতর। সংঘরাজ নিকায় ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে সংঘরাজ সারমেধ মহাস্থবিরের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। সুধর্মা ও দোহরা নিকায়ের অনুসারীদের মধ্যে উপজাতীয় বৌদ্ধদের প্রাধান্য বেশি। কক্সবাজার, রামু, টেকনাফ, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে এ নিকায়দ্বয়ের অনুসারিগণ রয়েছেন। বাংলাদেশে থেরবাদ সংঘের অন্তর্ভুক্ত এ চার নিকায়ে ধর্মীয় অনুশীলন রীতিতে মৌলিক কোনো প্রভেদ নেই। আচার-অনুষ্ঠানের দিক থেকে মহাস্থবির ও সংঘরাজ প্রায় অভিন্ন। আবার সুধর্মা ও দোহরা নিকায়ের রীতিনীতিও প্রায় অনুরূপ। [সুমন কান্তি বড়ুয়া]