থানচি উপজেলা

থানচি উপজেলা (বান্দরবান জেলা)  আয়তন: ১০২০.৮২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°১৫´ থেকে ২১°৫৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°২০´ থেকে ৯২°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রুমা উপজেলা, দক্ষিণে আরাকান রাজ্য (মায়ানমার), পূর্বে চিন প্রদেশ (মায়ানমার) ও বিলাইছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে আলিকদম ও লামা উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৩৫৯১; পুরুষ ১২৩৪৪, মহিলা ১১২৪৭। মুসলিম ১৪৯৬, হিন্দু ৩৮৭, বৌদ্ধ ১১৩০০, খ্রিস্টান ৮৫৭৭ এবং অন্যান্য ১৮৩১। এ উপজেলায় মারমা, মুরং, ত্রিপুরা, খিয়াং প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: সাঙ্গু (শংখ)।

প্রশাসন থানচি থানা গঠিত ১৯৭৬ সালে এবং থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ১৯৮৫ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১১ ১৭৮ ১৭৭৮ ২১৮১৩ ২৩ ২২.৪ ২৭.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২১.০৮ ১৭৭৮ ৮৪ ২২.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
তিন্দু ৭৬ ১১২৬৪০ ২২২৭ ২১৮২ ১৮.৩
থানচি ৫৭ ৬৯২১০ ৪১০২ ৩৪৯৭ ৩৪.১
বালিপাড়া ১৯ ১৫৩৬০ ২৯২৭ ২৫৩৭ ৩৮.৭
রেমকরি ৩৮ ২৪৩২০ ৩০৮৮ ৩০৩১ ১২.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৮২৪ সালে বার্মা-ব্রিটিশ যুদ্ধের পর এ উপজেলাটি আরাকান ব্রিটিশ-ভারতের প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে থানচি ও এর প্রতিবেশী অঞ্চলে আরাকানীদের অভিবাসন সহজ হয়। অভিবাসীরা এ অঞ্চলে স্থায়িভাবে বসতি স্থাপন করে এবং ১৯০০-এর রেগুলেশন-১ (পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়াল) এদের স্থায়ী বাসিন্দার স্বীকৃতি দেয়।

মুক্তিযুদ্ধ থানচি উপজেলায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়নি। তবে এলাকায় রাজাকার ও শান্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অপারেশন পরিচালিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে মে মাসে একদল মুক্তিযোদ্ধা রোয়াংছড়ি হয়ে রুমায় গিয়ে রাজাকার, আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটির একটি যৌথ সভায় হামলা চালালে শত্রুরা অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়।

বিস্তারিত দেখুন থানচি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২, মন্দির ২, গির্জা ৭৫, মঠ ১, কেয়াং ২৭।

শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ২৬.৯%; পুরুষ ৩৩.৯%, মহিলা ১৯.২%। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: থানচি উচ্চ বিদ্যালয়, থানচি বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, থানচি হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, কমিউনিটি সেন্টার ৩, অডিটরিয়াম ১, যাত্রাদল ৯, মহিলা সংগঠন ৩৫, খেলার মাঠ ২।

দর্শনীয় স্থান লাংফি তাং পাহাড়, মৌডাক তাং পাহাড়, নপরাই তাং পাহাড়, মুরিফা তাং পাহাড় ও ডিম পাহাড় উল্লেখযোগ্য।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭২.১০%, অকৃষি শ্রমিক ১.৪৮%, ব্যবসা ৩.৯১%, চাকরি ২.৪৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১২% এবং অন্যান্য ১৯.৯০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ১৫.০৮%, ভূমিহীন ৮৪.৯২%। শহরে ১৯.১৮% এবং গ্রামে ১৪.৩৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, তিল, হলুদ, ভূট্টা, আলু, আদা এবং শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি রং গাছ।

প্রধান ফল-ফলাদি  কলা, কাঁঠাল, কমলা, কাজু বাদাম।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪.৭৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ১১৯ কিমি; নৌপথ ৪০ কিমি।

হাটবাজার ও মেলা থানচি বাজার, বড় মদগ বাজার, ছোট মদগ বাজার, বলি বাজার, তিন্দু বাজার ও রেমকরি বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য হলুদ, আদা, বেত, বাঁশ, কাঠ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৪.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশ, বেত, কাঠ, পাথর।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬.৭%, ট্যাপ ১১.৭% এবং অন্যান্য ৮১.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৬.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭৮.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ২।

এনজিও ব্রাক, কারিতাস, ইউএনডিপি।  [আতিকুর রহমান]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; থানচি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।