থাকবস্ত জরিপ
থাকবস্ত জরিপ মৌজার (গ্রামরূপেও অভিহিত) সীমানা নির্দেশকরণ এবং বাংলার গ্রামীণ সম্পদ নিরূপণের উদ্দেশ্যে ১৮৪৫-১৮৭৭ সালে পরিচালনা করা হয়। ‘থাক’ ফারসি শব্দ, এর অর্থ সীমানা নির্দেশক স্তম্ভ। এ জরিপের আগে বাংলার মৌজাগুলির কোনো নির্ভুল বিধিসম্মত সীমানা ছিল না। তখন পর্যন্ত নালা বা খাঁড়ি, প্রাচীন বৃক্ষ, নদী, বিল, জঙ্গল, রাস্তা, অন্যান্য মৌজা ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক চিহ্ন দিয়ে মৌজার সীমানা নির্দেশ করা হতো। অতীতে জনসংখ্যা কম হওয়ায় এবং মানুষ ও জমির অনুপাত মানুষের অনুকূলে থাকায় এ ধরনের পদ্ধতি ভালভাবেই কাজ করছিল। কিন্তু উনিশ শতকের শেষ দিকে জমির উপর চাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেলে এধরনের ব্যবস্থায় প্রায়ই সীমানা-বিরোধ ও মামলা-মোকদ্দমার সৃষ্টি হতো। তাছাড়া তখন পর্যন্ত শুধু প্রথা ও অতীতের লিখিত বিবরণের উপর ভিত্তি করে খাজনা ধার্য করা হতো। জমিদারির প্রকৃত সম্পদ নির্ধারণের উদ্দেশ্যে কোনোদিনই কোনো জরিপ করা হয়নি। সুতরাং গ্রামের সম্পদ সম্পর্কে অধিকতর নিশ্চিতভাবে অবগত হওয়া প্রশাসনিক ও রাজস্ব উভয় বিবেচনায় ওপনিবেশিক সরকারের জন্য ছিল অপরিহার্য। উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে থাকবস্ত বন্দোবস্তের সাফল্য কর্তৃপক্ষকে বাংলার জেলাগুলিতেও এ জরিপ চালাতে উৎসাহিত করে। ১৮৪৫ সালে এ কার্যক্রম শুরু হয়ে ১৮৭৭ সালে শেষ হয়। এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ছিল মৌজা ও মৌজার অন্তর্ভুক্ত জমিদারির সীমানা নির্ধারণ, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ নিরূপণ, ভূমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি চিহ্নিতকরণ, বিজ্ঞানসম্মত ভূচিত্র অঙ্কন করে সকল মৌজা, পরগণা ও জেলার ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক রেখাচিত্র প্রস্ত্তত করা। মৌজা ছিল থাক-জরিপের একক। জরিপকৃত কোনো কোনো জেলার প্রতিটি গ্রামের একটি খসড়া ভূচিত্র তৈরি করে তাতে গ্রামের জমিদারি, বসতবাটি, মাঠ, উৎপাদিত শস্য, জনসংখ্যা এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করা হয়। নির্দেশক হিসেবে প্রতিটি গ্রামকেই একটি থাক-নম্বর দেওয়া হয়। থাক জরিপে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী রাজস্ব জরিপ পরিচালিত হয়। [সিরাজুল ইসলাম]