ত্রিপুরা২

ত্রিপুরা২ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জাতি। ব্রিটিশ আমলে ত্রিপুরা ছিল একটি দেশীয় রাজ্য। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা রাজ্য ভারত ইউনিয়নে যোগদান করে। বর্তমানে ঐ ত্রিপুরা রাজ্যটিই ত্রিপুরা জাতি বা ত্রিপুরীদের মূল আবাসস্থল। ভারতবর্ষে ত্রিপুরার অধিবাসীরা ‘ত্রিপুরী’ নামে চিহ্নিত হয়েছিলেন। ত্রিপুরার রাজা পরিচিত ছিলেন ‘মাণিক্য রাজা’ নামে। প্রাক্-ব্রিটিশ যুগে কিছুকাল বঙ্গদেশের কিয়দংশ কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেটের অংশ বিশেষ, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং আরাকানের আকিয়াব প্রদেশ ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যুক্ত ছিল। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানী লাভ করলে ত্রিপুরা রাজ্য পাহাড়ি এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়। ১৯৪৭ সালের পর ত্রিপুরী জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বসবাস সুবাদে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জন করে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ও মিরসরাই, নোয়াখালীর বিলোনীয়া অঞ্চল, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এরা বসবাস করেন। বাংলাদেশে ত্রিপুরা জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষাধিক।

মহারাজ বীর চন্দ্র মাণিক্য

ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে চার ধরণের মত প্রচলিত আছে। প্রথমত, রাজমালাসহ সমসাময়িক গ্রন্থাদি মতে মহাভারত যুগে রাজা যযাতি নামে একজন পরাক্রমশালী রাজা ছিলেন। রাজা যযাতির অবাধ্য পুত্র দ্রুহ্য পিতা কর্তৃক স্বীয় রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে গঙ্গা ও সাগরের সঙ্গমস্থল ‘সাগর দ্বীপে’ নির্বাসিত হন। রাজা দ্রুহ্যের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দৈত্যরাজ সিংহাসন আরোহণ করেন। মহারাজা দৈত্যের পুত্রের নাম ত্রিপুর। এই রাজা ত্রিবেগ থেকে উত্তর পূর্ব দিকে ধাবিত হয়ে কিরাত রাজ্য অধিকার করেন এবং ত্রিবেগ ও কিরাত জনজাতির মাঝে মহামিলন ঘটান। ত্রিপুর রাজা তাঁর বিজিত রাজ্যের নামকরণ করেন ত্রিপুরা এবং প্রজাদের নামকরণ করেন ত্রিপুর জাতি। দ্বিতীয়ত, ত্রিপুরী ঐতিহাসিকদের অনেকে মনে করেন অতীতে বর্মণক (আরাকান), চট্টল (চট্টগ্রাম) ও কমলাঙ্ক (কুমিল্লা) এই তিনটি প্রদেশ সমন্বয়ে ত্রিপুরা রাজ্য ছিল এবং উল্লিখিত তিনটি প্রদেশে বৃহৎ তিনটি পুর (নগর) ছিল এবং এই থেকে ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি হয়েছিল। তৃতীয়ত, ত্রিপুরীগণের মাতৃভাষার নাম ‘কক বরক’। কক বরকে পানি বা নদীকে বলা হয় ‘তোয়’।

আর মোহনাকে বলে ‘প্রা’। তোয় ওপ্রা শব্দ থেকে ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি। চতুর্থত, বিষ্ণু পুরাণ গ্রন্থে আছে ভারত সাম্রাজ্যের পূর্ব প্রান্তরে কিরাতের বাস। কামরূপ (আসাম) ও রাক্ষ্যাং (আরাকান) প্রদেশের মধ্যবর্তী ভূ-ভাগকে আর্যরা সুম্ম বা সুহ্ম নামে আখ্যায়িত করেন। টিবেটো বর্মণ শান বংশীয় জনগোষ্ঠী সেখানে শক্তিশালী রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। এই রাজ্যটিই মহাভারত গ্রন্থে ত্রৈপুরা, কখনো বা ত্রৈপুরী নামে আখ্যায়িত হয়। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬২০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ভারত ভ্রমণ বিবরণীতে সমুদ্র উপকূলবর্তী সমতট (বঙ্গদেশ) নামক দেশের উত্তর পূর্বে ত-ল-পো-তি (To-lo-po-ti) নামে একটি রাজ্যের উল্লেখ করেছেন, যাকে ত্রিপুরার সমার্থক বলে মনে করা যেতে পারে। নির্ভরশীল তথ্যের অভাবে কোন মতকেই  গ্রহণও করা যায় না, আবার বর্জনও করা যায় না।  তবে এটা সত্যি যে, ত্রিপুরা একটি অতি পুরনো রাজ্য।

উৎসবের সাজে সজ্জিত ত্রিপুরা তরুণ তরুণী

ত্রিপুরীরা নিজেদের চন্দ্রবংশোদ্ভুত ক্ষত্রিয় কুলজাত বলে দাবি করেন। নৃতাত্ত্বিক বিচারে ত্রিপুরা জাতি মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভুত। মঙ্গোলীয়রা প্রায় ৫ হাজার বছর আগে মঙ্গোলিয়া থেকে ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলে আগমন করেছিল। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একটি অংশ পরিচিত ছিল বোডো (Bodo) বা বরো (Boro) নামে। পূর্ব ভারতে আর্যদের আগমনের পূর্বে এই বোডো বা বরো জনজাতি এখানে আধিপত্য কায়েম করেছিল। রামায়ণ ও মহাভারত সূত্রে জানা যায় ভারতবর্ষের উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যসমূহ বোডো বা বরো জনজাতির নৃপতি কর্তৃক শাসিত হতো। আর্যগণ তাদেরকে কিরাত, দানব ও অসুর নামে আখ্যায়িত করতো। এই বোডো বা বরো জনজাতির একটি শক্তিশালী দল গঙ্গানদী, শীতলক্ষা, ব্রহ্মপুত্র, ধলেশ্বরী নদীর অববাহিকার বিস্তৃর্ণ ভূ-খন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ত্রিপুরারা সম্পূর্ণ অনার্য জাতি, যাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য মাঝারি গড়ন, উজ্জ্বল রং, বোঁচা নাক, ছোট ও তীক্ষ্ণ চোখ এবং খাড়া চুল। এরা শিকারে পটু।

ত্রিপুরা জাতি যে ভাষায় কথা বলে তা কক্-বরক নামে অভিহিত। কক্-বরক্ ভাষাটি ৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বাধীন ত্রিপুরা রাজ্যের রাষ্ট্রভাষা ছিল। ত্রিপুরা ভারতে যোগ দিলে কক্-বরক্ রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা হারায়। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি ভারত সরকার কর্তৃক কক্-বরক্ পুনরায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। দেবনাগরী লিপিতে কক্-বরকের লেখ্যরূপ দেওয়া হয়। ইউরোপীয় মিশনারীদের প্রভাবে কোন কোন গোষ্ঠি রোমান লিপিও ব্যবহার করছে। কক্-বরক ভাষাটি Austronesian Family ভাষার অন্তর্গত Asian বিভাগের Tibeto Burmese গোত্রভুক্ত। বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশ মিলে কক্-বরক্ ভাষীর সংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ। পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা ও সিলেটবাসী ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই ভাষা প্রচলিত। ত্রিপুরা রাজ্য ও বাংলাদেশে বসবাসকারী ত্রিপুরীদের ভাষা কক্-বরক্ দক্ষিণ বোডো শ্রেণিভুক্ত একটি প্রধান ভাষা।

ত্রিপুরা জাতির সামাজিক কাঠামো পিতৃতান্ত্রিক। পিতাই পরিবারের প্রধান এবং তার অবর্তমানে জ্যেষ্ঠ পুত্র পরিবারের কর্তা হন। এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমও দেখা যায়। কোন কোন গোত্রে কন্যা সন্তানদের মাতৃবংশ পরিচয়ে পরিচিত হতে দেখা যায়।

ধর্ম বিশ্বাসে ত্রিপুরা জাতি সনাতন ধর্মের অনুসারী। মধ্যযুগে একমাত্র ত্রিপুরা রাজ্যটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে আখ্যায়িত ছিল। বর্তমানকালে ত্রিপুরীদের অনেকে খ্রিস্ট ধর্মে  দীক্ষিত হচ্ছে।

ত্রিপুরীরা ৩৬টি দফা বা গোত্রে বিভক্ত। এগুলি হলো: গুরপাই, রিয়াং, খালি, জমাতিয়া, নাইতং, কেওয়া, কেমা, দেনদাক, গাবিং, আসলং, তংপাই, আনোক, ফাতং, গর্জং, খাকুলু, কলই, মোকছাক, মুইচিং, উসুই, গাইগ্রা, বেরী, রুক্কিনী, মলসম, হারবাং, রংচের, বঙ, জানতং, চরই, দাম্পা, মংবাই, হালাম, কলি, মুরাসিং, মাখ্রা এবং মাইপালা।

মাঙ্গলিক নৃত্য পরিবেশনরত ত্রিপুরা তরুণী

ত্রিপুরীদের বর্ষপঞ্জিকার নাম ত্রিপুরাব্দ। সংক্ষেপে লেখা হয় ‘ত্রিং’। ত্রিপুরাব্দ বর্ষপঞ্জিকা বঙ্গাব্দ থেকে ৩ বছরের প্রাচীন ও মগাব্দ থেকে ৪৮ বছরের প্রাচীন। তবে খ্রিস্টাব্দ থেকে ৫৯০ বছরের কনিষ্ঠ। ত্রিপুরাব্দ বর্ষপঞ্জিকা ৫৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতবর্ষের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে প্রচলিত ছিল। এখনও ত্রিপুরী জনজীবনে এ পঞ্জিকার প্রচলন রয়েছে। ত্রিপুরাব্দ সৌরবর্ষ ভিত্তিক পঞ্জিকা। রাজমালা গ্রন্থসূত্রে জানা যায়, ত্রিপুরা মহারাজা বীররাজ হামতর ফা ৫৯০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদেশ জয় করেন। ত্রিপুরাদের বিয়ে রীতি সাধারণত তিন ধরনের: (১) কাইজারাই কৌচাং বা প্রজাপত্য বিয়ে (২) কাইজালাই বচং বা গন্ধর্ব বিয়ে এবং (৩) কাইজালাই কুসুর বা অসুর বিয়ে। ত্রিপুরী জনজীবনে দুই পদ্ধতিতে বিয়ের অনুষ্ঠানাদি সম্পাদন করা হয়ে থাকে: তান্ত্রিক পদ্ধতি, বৈদিক পদ্ধতি। তান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিয়ে উপলক্ষে দুটি পূজানুষ্ঠান করা হয়ে থাকে। এ দুটি পূজানুষ্ঠানের নাম  ‘চুমলাই পূজা’ ও ‘কাথারক পূজা’। ত্রিপুরা সমাজে সকল গোত্রের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক সিদ্ধ। তবে রক্ত সম্পর্কীয় তিন পুরুষের মধ্যে বিবাহ বন্ধন নিষিদ্ধ।

বৈদিক পদ্ধতিতে পুরোহিত সমগ্র বিয়ে কার্যাদি পরিচালনা করে থাকেন। এ পূজানুষ্ঠানের অধিদেবতার নাম ‘প্রজাপতি’ আর এ কারণে ত্রিপুরীদের বিয়ে সম্পর্কিত নিমন্ত্রণ পত্রের উপরে ‘শ্রী শ্রী প্রজাপত্রয়ে নম:’ এই বাক্যটি উৎকীর্ণ থাকে।

বিশেষ কোনো কার্য উপলক্ষে আয়োজিত ভোজানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য আয়োজক কর্তৃক আহবান করাকে ‘নিমন্ত্রণ’ বলে। ত্রিপুরী জনজীবনে নিমন্ত্রণ সংস্কৃতিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যে ভোজানুষ্ঠানের সাথে আনন্দ, উচ্ছ্বাস, অনুপ্রেরণা ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে ত্রিপুরা ভাষায় এমন ভোজানুষ্ঠানকে ‘পানা’ বলে। যেমন জন্মবার্ষিকী ও বিবাহঅনুষ্ঠান। আর যে ভোজানুষ্ঠানের সাথে দুঃখ, বেদনা, শোক বিরহ নিহিত রয়েছে এমন ভোজানুষ্ঠানকে ‘সামৌং’ বলে।

ত্রিপুরীদের জীবন ও জীবিকা, আচার আচরণে গীতি নৃত্য ও বাদন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে জড়িয়ে আছে। লোকাচারে কোন ত্রিপুরা যখন বিবাহের অনুষ্ঠান করে তখন তাকে অবশ্যই গীতি বাদ্য ও নৃত্য সহকারে অনুষ্ঠান সম্পাদন করতে হয়। এমনকি যখন কোনো ত্রিপুরা জন্মগ্রহণ করে তার আগমনী বার্তাও ঘোষিত হয় শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে। আর যখন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় তারও সমাপ্তি টানা হয় গীত, বাদ্য ও নৃত্যের মাধ্যমে।

ত্রিপুরা জাতির প্রথাগত উৎপাদন পদ্ধতির নাম জুম। জুম চাষের শুরু থেকেই শেষ অবধি সংগীত একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। লোক নৃত্যে ত্রিপুরাদের রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্যের মধ্যে সিমতুং, কাথারক, সাকচরাই, চুমলাই, কেরপূজা, গোমতী, নাইরাং, হাচুকমা, সিবরাই, জুয়াংফা, সাকাল, গড়িয়া, হজাগিরি, লেবাং, মামিতা, ত্রিপুরেশ্বরী, মাইখুলুম, হাবা, খুমকামŠং, অনজালা উল্লেখযোগ্য। ত্রিপুরীদের রয়েছে বৈচিত্র্যমন্ডিত উৎসব ও পূজা পার্বণ। প্রধান উৎসব ও পূজা হলো: বৈষু, কের, গোমতী, সিবরাই, খাচী, হাকা।  প্রধান উৎসবের নাম বৈষু। ত্রিপুরাব্দ, মগাব্দ ও বঙ্গাব্দ এই তিনটি বর্ষপঞ্জিকাই সৌরবর্ষ। ত্রিপুরীদের বৈসু উৎসবে যে অনুষ্ঠান করার রীতি রয়েছে তার পুরোটাই প্রকৃতি জগতের রূপ-রসের ব্যঞ্জনায় পুষ্ট।

কের শব্দের অর্থ গন্ডি বা বেষ্টনি দেওয়া। প্রতি বছর ত্রিপুরাদের তালতুক মাসের (শকাব্দের শ্রাবণ) কৃষ্ণপক্ষের প্রথম দিনে কের পূজা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ত্রিপুরা জাতি গোমতী নদীকে দুগ্ধ স্রোতরূপী মাতৃনদী হিসাবে শ্রদ্ধা ও পূজা করে থাকে। গোমতী পার্বত্য কন্যা ‘ত্রিপুরা সুন্দরী’ নামে পরিচিত। গোমতী পূজা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ত্রিপুরাব্দের তালতুং (শকাব্দের জ্যৈষ্ঠ) মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে। ত্রিপুরাব্দের তাল স্নাং (শকাব্দের ফাল্গুন) মাসের উত্তরায়ন চতুর্দশী তিথিতে সিবরাই পূজা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় প্রতিষ্ঠিত আছে চতুর্দশ দেব মন্দির। প্রতি বছর ত্রিপুরাব্দের তালয়ুং (শকাব্দের আষাঢ়) মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে চতুর্দশ দেব মন্দিরে ৭ দিন ব্যাপী তীর্থ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মন্দিরে যে পূজানুষ্ঠান সম্পাদিত হয় তাই ‘খাচী পূজা’। হাবা পূজা মানে কৃষি পূজা। কৃষি ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করার আগে ধরিত্রীকে আহবান করে পূজা উৎসব করা হয়। এর নাম ‘হাবা পূজা উৎসব’।

ত্রিপুরা নারীরা অলংকার প্রিয়। ত্রিপুরা নারীদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অলংকার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- বেংকি, বারা, কুনচি, তাল, খার্চী, অাঁচলী, রাংবাহাতাং, তয়া, ওয়াখুম, সুরাম, সাংগে, নাকে, লŠক, য়াইতাম, চাংখুং, বাতাং, কুংবার, আংতা, তালবাতাং, খানাইসেপ ইত্যাদি। অতীতে ত্রিপুরী নারীদের মতো পুরুষেরাও অলংকার ব্যবহার করতেন। ত্রিপুরাদের জনজীবনে দু’ধরণের অন্ত্র্যোষ্টিক্রিয়া প্রচলিত, যথা দাহক্রিয়া ও শ্রাদ্ধক্রিয়া এবং তারা নারী ও পুরুষের জন্যে দু’ধরণের শশ্মান তৈরি করে থাকে।  [প্রভাংশু ত্রিপুরা]