তারিখ-ই-মুবারকশাহী
তারিখ-ই-মুবারকশাহী ভারতবর্ষের সুলতানি আমলের উপর রচিত একটি ইতিহাস গ্রন্থ। মুইজুদ্দীন মুহম্মদ বিন সামের (মুহম্মদ ঘোরী) রাজত্বকাল থেকে এর বর্ণনা শুরু হয় এবং হঠাৎ করে ১৪৩৪ সালে এ বর্ণনা শেষ হয়। ইয়াহিয়া বিন আহমদ বিন আবদুল্লাহ সরহিন্দি গ্রন্থটি রচনা করেন। দিল্লির সৈয়দ বংশের সুলতান মুবারক শাহের রাজত্বকালে (১৪২১-১৪৩৪) সরকারি পর্যায়ে তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল এবং তিনি অনেক সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান। উল্লিখিত সময়ের উপর এটি ভারতের সাধারণ ইতিহাস হলেও ১৩৮৮ সাল থেকে ১৪৩৪ সাল পর্যন্ত ৪৬ বছরের জন্য এটিই একমাত্র প্রাপ্ত ইতিহাস গ্রন্থ। ১৪১৪-৩৪ সাল পর্যন্ত বিশ বছর ধরে দিল্লির সৈয়দ বংশের প্রথম দুই সুলতানের রাজত্বকালে সংঘটিত ঘটনাবলির প্রত্যক্ষ বিবরণ গ্রন্থটিতে পাওয়া যায়। ইয়াহিয়া বিন আহমদের বর্ণনা এ সময়ের ইতিহাসের শুধু প্রাথমিক উৎসই নয়, বরং একমাত্র উৎস। সরকারি দলিল দস্তাবেজ ব্যবহারে লেখকের অবাধ সুযোগ ছিল এবং একারণে তাঁর পরিবেশিত তথ্যাদি বিশ্বাসযোগ্য। নিজামউদ্দীন আহমদ বখশী, আব্দুল কাদের বদায়উনী ফিরিশতা প্রমুখ পরবর্তী ঐতিহাসিকগণ তাঁকে একজন নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক বলে স্বীকার করেন।
ইয়াহিয়া বিন আহমদের বাংলার প্রতি বিশেষ কোনো আগ্রহ ছিল না। দিল্লির সুলতানদের সঙ্গে বাংলার কোনো সম্পর্ক থাকলেই কেবল বাংলা বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি অবশ্য পূর্ববর্তী ঐতিহাসিকদের গ্রন্থ, যেমন মিনহাজের তবকাত-ই-নাসিরী, বরনীর তারিখ-ই-ফিরুজশাহী এবং আফীফের তারিখ-ই-ফিরুজশাহী প্রভৃতির সাহায্য নেন। কালক্রম শুদ্ধ করার জন্য তারিখ-ই-মুবারকশাহী বিশেষভাবে সহায়ক। সৈয়দ বংশের সময় বাংলা স্বাধীন ছিল এবং দিল্লির সাথে এর সম্পর্ক ছিল বিচ্ছিন্ন। [আবদুল করিম]
গ্রন্থপঞ্জি Yahya bin Ahmed bin Abdullah Sarhindi, Tarikh-i-Mubarakshahi, Bibliotheca Indica Series, Calcutta 1931; Agha Mahdi Husain, The Tughlaq Dynasty, Delhi, 1976.