তারিখ-ই-ফিরিশতা
তারিখ-ই-ফিরিশতা দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলির বিশেষ আলোচনাসহ ভারতবর্ষের একটি সাধারণ ইতিহাস। এতে আকবর-এর রাজত্বকালের শেষ পর্যন্ত ঘটনাসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ফিরিশতা নামে সমধিক পরিচিত মুহাম্মদ কাসিম হিন্দু শাহ ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থটি রচনা করেছেন।
গ্রন্থটি গুলশান-ই-ইবরাহিমী নামেও অভিহিত। কারণ এটি বিজাপুরের ইবরাহিম আদিল শাহের নামে উৎসর্গ করা হয়েছিল। গ্রন্থটি লিখতে গিয়ে ফিরিশতা পূর্বে লিখিত গ্রন্থসমূহ, বিশেষ করে নিজামউদ্দীন আহমদের তবকাত-ই-আকবরী বদাউনীর মুন্তখব-উত-তওয়ারিখ-এর উপর ভিত্তি করে রচনা করেছিলেন। তিনি তাঁর গ্রন্থের তথ্যাদি ও ঐতিহ্য সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। তাঁর গ্রন্থটি সমসাময়িককালের ঐতিহাসিক সাহিত্যের রীতি অনুযায়ী ঘটনাপঞ্জি লেখার ধাঁচে লিখিত।
তারিখ-ই-ফিরিশতা বাংলার সুলতানদের ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে রচিত সুলতানি আমলের কোনো সমসাময়িক ইতিহাস আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। ফলে দিল্লিতে রচিত ইতিহাসগ্রন্থে প্রাপ্ত উপাদানের সাহায্যে এ আমলের ইতিহাস এমনভাবেই পুনর্গঠন করা হয়েছে যে, যেখানে দিল্লিতে রচিত গ্রন্থগুলিতে কিছু পাওয়া যায় নি সেখানে বাংলার সুলতানদের ইতিহাস ছিল ফাঁকা। ফিরিশতা হচ্ছেন দ্বিতীয় ঐতিহাসিক যিনি সুলতানি আমলের বাংলার ইতিহাসের জন্য একটি আলাদা অধ্যায় রচনাকল্পে মনোনিবেশ করেছিলেন। এ ধরনের প্রথম প্রচেষ্টা করেছিলেন নিজামউদ্দীন আহমদ বখশী। এ অধ্যায় রচনার জন্য ফিরিশতা নিজামউদ্দীনের কাছে ঋণী। কিন্তু ফিরিশতা কিছু বেশি তথ্য প্রদান করেছেন। তিনি আরিফ কান্দাহারির একটি গ্রন্থের কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে গ্রন্থটি বর্তমানে পাওয়া যায় না।
History of the Rise of the Mahomedan Power in India (১৮২৯) শিরোনামে জন ব্রিগস-এর সংক্ষিপ্ত অনুবাদের মাধ্যমে তারিখ-ই-ফিরিশতা ইংরেজ ঐতিহাসিকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তবে অনুবাদটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভুল নয়। [আবদুল করিম]