তাম্রমুদ্রা, ছাঁচে ঢালা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''তাম্রমুদ্রা''' (ছাঁচে ঢালা)'''  '''বাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন মুদ্রা। ছাপাঙ্কিত মুদ্রার পরেই প্রচলিত হয় এ মুদ্রা। এ মুদ্রা ব্যাপকভাবে মৌর্য-সুঙ্গ যুগ থেকে শুরু করে গুপ্ত যুগ পর্যন্ত প্রাচীন বাংলার বাজারের চাহিদা মেটাত। এ মুদ্রায় কোনো লিপির ব্যবহার ছিল না, তার বদলে বেশ কিছু নকশা-চিহ্ন দেখা যায়। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে, ঐ নকশার চিহ্ন কোনো রাজা বা রাজবংশের নিয়ন্ত্রণ নির্দেশ করে না। তাই রাজা পরিবর্তনের সঙ্গে এসব মুদ্রার চিহ্ন বা আকারের কোনো রদবদল হয় নি। মুদ্রাগুলির নকশায় লোককলারও প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যায়। মুদ্রাচিহ্নের মধ্য বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজ জীবনের রক্ষণশীলতাই প্রকাশ পেয়েছে। তাই যুগ যুগান্তর ধরে মুদ্রাতে একই নকশা বজায় ছিল। বাংলার সর্বস্তরের শিল্পীদের বংশানুক্রমিক জীবিকা গ্রহণের ফলেই অনুরূপ ধারায় প্রবহমান শিল্পবিকাশ দেখা যায়। নকশার একঘেয়েমিতেও যেমন শিল্পের উৎকর্ষ দেখা যায়, তেমনি মুদ্রার ওজনের ক্ষেত্রেও সমতা লক্ষ করা যায়। মূলত চতুষ্কোণ ও গোলাকার, এ দুরকমের এবং ওজনের গুণিতক হিসেবে বেশ কয়েক রকমের মুদ্রা ছিল। গোলাকার মুদ্রাগুলি অনেক সময়ে জোড়া অবস্থায় নির্মিত হতো। অনেক সময়ে মুদ্রাতে একটু বাড়তি অংশও দেখা যায় যা কিনা ছাঁচে বানাবার সহজ পরিচয় বহন করে।  
[[Image:CastCopperCoin.jpg|thumb|400px|ছাঁচে ঢালা প্রতীকী তাম্রমুদ্রা]]
'''তাম্রমুদ্রা''' (ছাঁচে ঢালা) বাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন মুদ্রা। ছাপাঙ্কিত মুদ্রার পরেই প্রচলিত হয় এ মুদ্রা। এ মুদ্রা ব্যাপকভাবে মৌর্য-সুঙ্গ যুগ থেকে শুরু করে গুপ্ত যুগ পর্যন্ত প্রাচীন বাংলার বাজারের চাহিদা মেটাত। এ মুদ্রায় কোনো লিপির ব্যবহার ছিল না, তার বদলে বেশ কিছু নকশা-চিহ্ন দেখা যায়। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে, ঐ নকশার চিহ্ন কোনো রাজা বা রাজবংশের নিয়ন্ত্রণ নির্দেশ করে না। তাই রাজা পরিবর্তনের সঙ্গে এসব মুদ্রার চিহ্ন বা আকারের কোনো রদবদল হয় নি। মুদ্রাগুলির নকশায় লোককলারও প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যায়। মুদ্রাচিহ্নের মধ্য বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজ জীবনের রক্ষণশীলতাই প্রকাশ পেয়েছে। তাই যুগ যুগান্তর ধরে মুদ্রাতে একই নকশা বজায় ছিল। বাংলার সর্বস্তরের শিল্পীদের বংশানুক্রমিক জীবিকা গ্রহণের ফলেই অনুরূপ ধারায় প্রবহমান শিল্পবিকাশ দেখা যায়। নকশার একঘেয়েমিতেও যেমন শিল্পের উৎকর্ষ দেখা যায়, তেমনি মুদ্রার ওজনের ক্ষেত্রেও সমতা লক্ষ করা যায়। মূলত চতুষ্কোণ ও গোলাকার, এ দুরকমের এবং ওজনের গুণিতক হিসেবে বেশ কয়েক রকমের মুদ্রা ছিল। গোলাকার মুদ্রাগুলি অনেক সময়ে জোড়া অবস্থায় নির্মিত হতো। অনেক সময়ে মুদ্রাতে একটু বাড়তি অংশও দেখা যায় যা কিনা ছাঁচে বানাবার সহজ পরিচয় বহন করে।  


যে চিহ্ন সমূহ ছাঁচে ঢালা তাম্র মুদ্রায় দেখা যায় তার সঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে ছাপাঙ্কিত মুদ্রার কিছু চিহ্নের মিল থাকলেও বেশ কিছু চিহ্ন আবার একদম আলাদা। এ চিহ্নগুলিকে দ’ুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন, প্রাণিবাচক এবং লোককলা বা ধর্মীয় চিহ্ন। প্রাণিবাচক চিহ্নের মধ্যে রয়েছে হস্তি, বৃষমুন্ড, বৃষ, সর্প (বা নদী?), উট অথবা অশ্ব। লোককলা বা ধর্মীয় চিহ্নের মধ্যে রয়েছে সূতপ অথবা চৈত্য, স্বস্তিক, মৈত্রক বা ইন্দ্রধ্বজ, ক্রশ বা যজ্ঞবেদি'','' রেলিং বা বেষ্টনীতে রক্ষিত বৃক্ষ (বোধিদ্রুম)। তবে হস্তী এবং স্তূপ বা চৈত্য চিহ্ন প্রত্যেক মুদ্রাতেই রয়েছে। বাংলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লোকউৎসবে ইন্দ্রধ্বজের ব্যবহার এখনও লুপ্ত হয় নি।  
যে চিহ্ন সমূহ ছাঁচে ঢালা তাম্র মুদ্রায় দেখা যায় তার সঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে ছাপাঙ্কিত মুদ্রার কিছু চিহ্নের মিল থাকলেও বেশ কিছু চিহ্ন আবার একদম আলাদা। এ চিহ্নগুলিকে দ’ুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন, প্রাণিবাচক এবং লোককলা বা ধর্মীয় চিহ্ন। প্রাণিবাচক চিহ্নের মধ্যে রয়েছে হস্তি, বৃষমুন্ড, বৃষ, সর্প (বা নদী?), উট অথবা অশ্ব। লোককলা বা ধর্মীয় চিহ্নের মধ্যে রয়েছে সূতপ অথবা চৈত্য, স্বস্তিক, মৈত্রক বা ইন্দ্রধ্বজ, ক্রশ বা যজ্ঞবেদি, রেলিং বা বেষ্টনীতে রক্ষিত বৃক্ষ (বোধিদ্রুম)। তবে হস্তী এবং স্তূপ বা চৈত্য চিহ্ন প্রত্যেক মুদ্রাতেই রয়েছে। বাংলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লোকউৎসবে ইন্দ্রধ্বজের ব্যবহার এখনও লুপ্ত হয় নি।  


বাংলার সীমান্তে ঝাড়খন্ডের তামার খনিগুলি থেকে সহজে পাওয়া আকরিকের যোগান থাকায় এবং সহজে প্রস্ত্তত করার প্রকৌশল আয়ত্ত করার ফলে সুদূর তাম্রপ্রস্তর যুগ থেকে বাংলার জনগণ তামার ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছে। মুদ্রা প্রচলন শুরু হওয়ার পরে ছাঁচে ঢালা তাম্র মুদ্রা নির্মাণে তামার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়ে যায়। মঙ্গলকোটে পাওয়া একটি মুদ্রায় চৌম্বক উপাদান লক্ষ করা যায়। মুদ্রা তৈরির জন্য অগভীর পোড়ামাটির ছাঁচ বানিয়ে তরল ধাতু ঢেলে নেওয়া হতো। ঢালাই-এর পর খুব সামান্য ছাঁচই টিকে থাকত। এরকম একটি ছাঁচ দক্ষিণ চবিবশ পরগনার পাকুড়তলায় আবিষ্কৃত হয়েছিল। এ মুদ্রা বানানোর জন্য সাধারণত বিশুদ্ধ তামা ব্যবহূত হতো না। তামাকে অধিকতর তরল করার জন্য রাং বা টিন আর কখনও বা সীসা যোগ করা হতো। বড় আকারের চতুষ্কোণ মুদ্রার ওজন হতো ৭.২৫ গ্রাম। সাধারণ চতুষ্কোণগুলি ওজনে ৩.৬২ গ্রাম, আর গোলাকার মুদ্রা গুলির ওজন হতো ১.৮১ গ্রাম। তবে আরও ছোট মুদ্রা নিম্ন গুণিতকেও পাওয়া যায়।
বাংলার সীমান্তে ঝাড়খন্ডের তামার খনিগুলি থেকে সহজে পাওয়া আকরিকের যোগান থাকায় এবং সহজে প্রস্ত্তত করার প্রকৌশল আয়ত্ত করার ফলে সুদূর তাম্রপ্রস্তর যুগ থেকে বাংলার জনগণ তামার ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছে। মুদ্রা প্রচলন শুরু হওয়ার পরে ছাঁচে ঢালা তাম্র মুদ্রা নির্মাণে তামার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়ে যায়। মঙ্গলকোটে পাওয়া একটি মুদ্রায় চৌম্বক উপাদান লক্ষ করা যায়। মুদ্রা তৈরির জন্য অগভীর পোড়ামাটির ছাঁচ বানিয়ে তরল ধাতু ঢেলে নেওয়া হতো। ঢালাই-এর পর খুব সামান্য ছাঁচই টিকে থাকত। এরকম একটি ছাঁচ দক্ষিণ চবিবশ পরগনার পাকুড়তলায় আবিষ্কৃত হয়েছিল। এ মুদ্রা বানানোর জন্য সাধারণত বিশুদ্ধ তামা ব্যবহূত হতো না। তামাকে অধিকতর তরল করার জন্য রাং বা টিন আর কখনও বা সীসা যোগ করা হতো। বড় আকারের চতুষ্কোণ মুদ্রার ওজন হতো ৭.২৫ গ্রাম। সাধারণ চতুষ্কোণগুলি ওজনে ৩.৬২ গ্রাম, আর গোলাকার মুদ্রা গুলির ওজন হতো ১.৮১ গ্রাম। তবে আরও ছোট মুদ্রা নিম্ন গুণিতকেও পাওয়া যায়।


[[Image:CastCopperCoin.jpg|thumb|400ps|ছাঁচে ঢালা প্রতীকী তাম্রমুদ্রা]]
''প্রাপ্তিস্থান'' ছাঁচে ঢালা তাম্র মুদ্রা প্রাপ্তির উল্লেখযোগ্য স্থানগুলি হচ্ছে উত্তর চবিবশ পরগনার [[চন্দ্রকেতুগড়|চন্দ্রকেতুগড়]], দক্ষিণ চবিবশ পরগনার আটঘড়া, কঙ্কনদিঘি, খাড়ি, ছত্রভোগ, জটা, জি-প্লট, দেউলপোতা, নামাজগড়, ডাবু, পাকুড়তলা, রায়দিঘি, বোড়াল, সরবেরিয়া, সীতাকুন্ডু, মনিরতট এবং হরিনারায়ণপুর। অপর গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থলের মধ্যে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বানগড়, বর্ধমান জেলার [[মঙ্গলকোট|মঙ্গলকোট]], বাঁকুড়া জেলার ডিহর ও পখন্না, মেদিনীপুর জেলার তমলুক, মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা, হাওড়া জেলার হরিনারায়ণপুর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের [[মহাস্থান|মহাস্থান]] অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল যেখানে এ মুদ্রা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গিয়েছে।  [প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়]  


'''প্রাপ্তিস্থান ''' ছাঁচে ঢালা তাম্র মুদ্রা প্রাপ্তির উল্লেখযোগ্য স্থানগুলি হচ্ছে উত্তর চবিবশ পরগনার [[১০১৭১০|চন্দ্রকেতুগড়]], দক্ষিণ চবিবশ পরগনার আটঘড়া, কঙ্কনদিঘি, খাড়ি, ছত্রভোগ, জটা, জি-প্লট, দেউলপোতা, নামাজগড়, ডাবু, পাকুড়তলা, রায়দিঘি, বোড়াল, সরবেরিয়া, সীতাকুন্ডু, মনিরতট এবং হরিনারায়ণপুর। অপর গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থলের মধ্যে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বানগড়, বর্ধমান জেলার [[১০৪৪৩৬|মঙ্গলকোট]], বাঁকুড়া জেলার ডিহর ও পখন্না, মেদিনীপুর জেলার তমলুক, মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা, হাওড়া জেলার হরিনারায়ণপুর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের [[১০৪৫৭৯|মহাস্থান]] অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল যেখানে এ মুদ্রা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গিয়েছে।  [প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়]
''মানচিত্রের জন্য দেখুন'' [[প্রত্নতত্ত্ব|প্রত্নতত্ত্ব]]।
 
''মানচিত্রের জন্য দেখুন'' [[১০৩২৯৪|প্রত্নতত্ত্ব]]।


[[en:Cast Copper Coins]]
[[en:Cast Copper Coins]]

০৯:৫৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ছাঁচে ঢালা প্রতীকী তাম্রমুদ্রা

তাম্রমুদ্রা (ছাঁচে ঢালা) বাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন মুদ্রা। ছাপাঙ্কিত মুদ্রার পরেই প্রচলিত হয় এ মুদ্রা। এ মুদ্রা ব্যাপকভাবে মৌর্য-সুঙ্গ যুগ থেকে শুরু করে গুপ্ত যুগ পর্যন্ত প্রাচীন বাংলার বাজারের চাহিদা মেটাত। এ মুদ্রায় কোনো লিপির ব্যবহার ছিল না, তার বদলে বেশ কিছু নকশা-চিহ্ন দেখা যায়। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে, ঐ নকশার চিহ্ন কোনো রাজা বা রাজবংশের নিয়ন্ত্রণ নির্দেশ করে না। তাই রাজা পরিবর্তনের সঙ্গে এসব মুদ্রার চিহ্ন বা আকারের কোনো রদবদল হয় নি। মুদ্রাগুলির নকশায় লোককলারও প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যায়। মুদ্রাচিহ্নের মধ্য বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজ জীবনের রক্ষণশীলতাই প্রকাশ পেয়েছে। তাই যুগ যুগান্তর ধরে মুদ্রাতে একই নকশা বজায় ছিল। বাংলার সর্বস্তরের শিল্পীদের বংশানুক্রমিক জীবিকা গ্রহণের ফলেই অনুরূপ ধারায় প্রবহমান শিল্পবিকাশ দেখা যায়। নকশার একঘেয়েমিতেও যেমন শিল্পের উৎকর্ষ দেখা যায়, তেমনি মুদ্রার ওজনের ক্ষেত্রেও সমতা লক্ষ করা যায়। মূলত চতুষ্কোণ ও গোলাকার, এ দুরকমের এবং ওজনের গুণিতক হিসেবে বেশ কয়েক রকমের মুদ্রা ছিল। গোলাকার মুদ্রাগুলি অনেক সময়ে জোড়া অবস্থায় নির্মিত হতো। অনেক সময়ে মুদ্রাতে একটু বাড়তি অংশও দেখা যায় যা কিনা ছাঁচে বানাবার সহজ পরিচয় বহন করে।

যে চিহ্ন সমূহ ছাঁচে ঢালা তাম্র মুদ্রায় দেখা যায় তার সঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে ছাপাঙ্কিত মুদ্রার কিছু চিহ্নের মিল থাকলেও বেশ কিছু চিহ্ন আবার একদম আলাদা। এ চিহ্নগুলিকে দ’ুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন, প্রাণিবাচক এবং লোককলা বা ধর্মীয় চিহ্ন। প্রাণিবাচক চিহ্নের মধ্যে রয়েছে হস্তি, বৃষমুন্ড, বৃষ, সর্প (বা নদী?), উট অথবা অশ্ব। লোককলা বা ধর্মীয় চিহ্নের মধ্যে রয়েছে সূতপ অথবা চৈত্য, স্বস্তিক, মৈত্রক বা ইন্দ্রধ্বজ, ক্রশ বা যজ্ঞবেদি, রেলিং বা বেষ্টনীতে রক্ষিত বৃক্ষ (বোধিদ্রুম)। তবে হস্তী এবং স্তূপ বা চৈত্য চিহ্ন প্রত্যেক মুদ্রাতেই রয়েছে। বাংলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লোকউৎসবে ইন্দ্রধ্বজের ব্যবহার এখনও লুপ্ত হয় নি।

বাংলার সীমান্তে ঝাড়খন্ডের তামার খনিগুলি থেকে সহজে পাওয়া আকরিকের যোগান থাকায় এবং সহজে প্রস্ত্তত করার প্রকৌশল আয়ত্ত করার ফলে সুদূর তাম্রপ্রস্তর যুগ থেকে বাংলার জনগণ তামার ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছে। মুদ্রা প্রচলন শুরু হওয়ার পরে ছাঁচে ঢালা তাম্র মুদ্রা নির্মাণে তামার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়ে যায়। মঙ্গলকোটে পাওয়া একটি মুদ্রায় চৌম্বক উপাদান লক্ষ করা যায়। মুদ্রা তৈরির জন্য অগভীর পোড়ামাটির ছাঁচ বানিয়ে তরল ধাতু ঢেলে নেওয়া হতো। ঢালাই-এর পর খুব সামান্য ছাঁচই টিকে থাকত। এরকম একটি ছাঁচ দক্ষিণ চবিবশ পরগনার পাকুড়তলায় আবিষ্কৃত হয়েছিল। এ মুদ্রা বানানোর জন্য সাধারণত বিশুদ্ধ তামা ব্যবহূত হতো না। তামাকে অধিকতর তরল করার জন্য রাং বা টিন আর কখনও বা সীসা যোগ করা হতো। বড় আকারের চতুষ্কোণ মুদ্রার ওজন হতো ৭.২৫ গ্রাম। সাধারণ চতুষ্কোণগুলি ওজনে ৩.৬২ গ্রাম, আর গোলাকার মুদ্রা গুলির ওজন হতো ১.৮১ গ্রাম। তবে আরও ছোট মুদ্রা নিম্ন গুণিতকেও পাওয়া যায়।

প্রাপ্তিস্থান ছাঁচে ঢালা তাম্র মুদ্রা প্রাপ্তির উল্লেখযোগ্য স্থানগুলি হচ্ছে উত্তর চবিবশ পরগনার চন্দ্রকেতুগড়, দক্ষিণ চবিবশ পরগনার আটঘড়া, কঙ্কনদিঘি, খাড়ি, ছত্রভোগ, জটা, জি-প্লট, দেউলপোতা, নামাজগড়, ডাবু, পাকুড়তলা, রায়দিঘি, বোড়াল, সরবেরিয়া, সীতাকুন্ডু, মনিরতট এবং হরিনারায়ণপুর। অপর গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থলের মধ্যে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বানগড়, বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট, বাঁকুড়া জেলার ডিহর ও পখন্না, মেদিনীপুর জেলার তমলুক, মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা, হাওড়া জেলার হরিনারায়ণপুর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের মহাস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল যেখানে এ মুদ্রা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গিয়েছে।  [প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়]

মানচিত্রের জন্য দেখুন প্রত্নতত্ত্ব