তাব্রিজাবাদ

তাব্রিজাবাদ বর্তমানে পশ্চিম বাংলার একটি গ্রাম। এটি পুরাতন মালদার ৩৫.৪০ কিমি উত্তরে এবং পান্ডুয়া ও দেবকোট হয়ে মালদা-দিনাজপুর সড়কে পান্ডুয়ার ২৪.১৪ কিমি উত্তরে অবস্থিত। এর প্রাচীন নাম দেওতলা। তেরো শতকের প্রথম ভাগে অঞ্চলটি মুসলিম সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। শেখ জালালুদ্দীন তাবরিজি (মৃত্যু ৬৪২ হি/ ১২৪৪-৪৫ খ্রি.) তাঁর ধর্মীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্র হিসেবে স্থানটি নির্দিষ্ট করেন। পরবর্তী সময়ে এখান থেকে জালালিয়া সুফি তরিকার উদ্ভব হয়।

দেওতলার নাম পরিবর্তন করে এ সুফি সাধকের নামানুসারে রাখা হয় তাব্রিজাবাদ। আবুল ফজলের সময়ে (ষোল শতক) এ স্থান ’দেব মহল’ নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে, বাংলা দেওতলা শব্দটি ফার্সি দেও মহল-এর সমার্থক; এর অর্থ ‘পিশাচপুরী’। এ নামের মাধ্যমে প্রচলিত বিশ্বাস প্রকাশ পায় যে, স্থানটি অপদেবতা অধ্যুষিত। আমীর খসরুর (১২৫৩-১৩২৫ খ্রি.) বক্তব্যে এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি বলেন, যখন শেখ জালালুদ্দীন বাংলার এক শহরে আসেন তখন ঐ এলাকার অধিবাসীরা অপদেবতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল। এর থেকে বোঝা যায় যে, সে সময়ে উক্ত এলাকায় লুঠতরাজ ও খুন-রাহাজানি বিরাজ করছিল। শেখ জালালুদ্দীন অপদেবতাদের আটক করেন এবং এলাকাটি তাঁর নিজ অধিকারে নিয়ে আসেন। তাঁর অলৌকিক ক্ষমতায় অভিভূত হয়ে স্থানীয় হিন্দুরা শেখের কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। শেখ জালালুদ্দীন সেখানে একটি খানকাহ ও একটি লঙ্গরখানা স্থাপন করেন।

একটি লঙ্গরখানা এখনও সেখানে বর্তমান এবং পান্ডুয়াতে বাইশ-হাজারী এস্টেট এ উদ্দেশ্যে দান করা হয়েছে। দেওতলার জমিসমূহও ওয়াকফ এস্টেটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুলতান রুকনুদ্দীন বারবক শাহ-এর (১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রি.) শাসনামলে স্থানটি শহরের রূপ পরিগ্রহ করে এবং ১৪৬৪ খ্রিস্টাব্দে সেখানে একটি মসজিদ স্থাপন করা হয়। ষোল শতকের শেষাংশে স্থানটি কসবা তাব্রিজাবাদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং তখন এটি একটি ছোট শহর ছিল বলে মনে হয়। এলাকাটি তরগান নদীর তীরে অবস্থিত এবং সম্ভবত এটি ছিল একটি নদী বন্দর। [মোঃ আখতারুজ্জামান]