তাফসির

তাফসির  আল-কুরআনুল-কারীমের ব্যাখ্যা ও ভাষ্য। শরিয়তমতে এমন শাস্ত্রকে তাফসির বলা হয় যা অধ্যয়ন করলে হযরত মুহাম্মদ (স.) এর ওপর অবতীর্ণ আল-কুরআনের অর্থ অনুধাবন ও তা বর্ণনা করা সহজ হয় এবং তা থেকে শরিআতের আহকাম ও নির্দেশ জানা যায়। তাফসির গ্রন্থে পবিত্র কুরআনের পঠনপদ্ধতি, শাব্দিক ব্যাখ্যা, ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ, আয়াতের অর্থ, আয়াত নাজিলের কারণ, সংশ্লিষ্ট ঘটনা, নাসিখ-মানসুখ (রহিতকারী ও রহিতকৃত) প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনা করা হয়।

হাদিস গ্রন্থসমূহের, বিশেষত ইমাম বুখারী ও ইমাম তিরমিযীর আল-জামি গ্রন্থের তাফসির অংশে আয়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাদিসও বর্ণনা করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শব্দের ব্যাকরণগত ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। অতীতে ‘তাফসির’ ও ‘তা’বিল’ শব্দদ্বয় সমার্থক ছিল। পরবর্তীকালে তাফসির শব্দটি আয়াতের শব্দগত ও তাত্ত্বিক টীকাসহ ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহূত হয়। আর তা’বিল শব্দটি আয়াতের অন্তর্নিহিত সম্ভাব্য বিভিন্ন মর্মের মধ্য থেকে কোনো একটিকে প্রাধান্য দেওয়া অর্থে প্রচলিত হয়।

তাফসিরের সূচনা হয় মহানবী (স.)-এর সময় থেকেই। সাহাবিগণ কুরআনের বাহ্যিক অর্থ বুঝতেন। কোনো আয়াত বোধগম্য না হলে নবীকরিম (স.) সে আয়াতের তাফসির করে দিতেন। সাহাবিগণের মধ্যে সর্বাধিক খ্যাত তাফসিরকারী ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন আববাস (রা.)।

সাহাবিগণের যুগে পূর্ণ কুরআনের তাফসির আত্মপ্রকাশ করেনি। হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রারম্ভে তাফসির শাস্ত্রের বিকাশ ঘটে। আববাসী খিলাফতকালে সনদভিত্তিক তাফসিরের পাশাপাশি সনদবিহীন তাফসির সংকলন শুরু হয়। সনদভিত্তিক তাফসিরের মধ্যে ইব্ন জারীর তাবারীর (মৃত্যু ৩১০ হি) জামি’উল-বয়ান ফী তাফসীরি’ল-কুরআন, আবুল-লায়স সমরকান্দীর (মৃত্যু ৩৭২ হি) বাহরুল-উলুম, হুসাইন ইব্ন মাস্উদ বাগাভীর (মৃত্যু ৫১০ হি) মা’আলিমুত-তানযীল এবং ইব্ন কাছীরের (মৃত্যু ৭৭৪ হি) তাফসীরুল-কুরআনি’ল-আযীম উল্লেখযোগ্য। সনদবিহীন তাফসিরের মধ্যে ইমাম রাযীর (মৃত্যু ৬০৬ হি) মাফাতীহূ’ল-গায়ব, কাজী নাসিরুদ্দীন বায়দাভীর (মৃত্যু ৬৯১ হি) আনওয়ারু’ত-তানযী’ল, ইমাম নাসাফীর (মৃত্যু ৭১০ হি) মাদরিকু’ত-তানযীল উল্লেখযোগ্য। সুফি, শিয়া ও মু’তাযিলা সম্প্রদায়ের কোনো কোনো আলীম তাঁদের মতানুসারে তাফসির গ্রন্থ রচনা করেছেন।

মুসলিম বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মুসলমানদের সব রকম ধর্মকর্ম পালনে তাফসিরের প্রয়োগ আছে। এ উদ্দেশ্যে মক্তব-মাদ্রসাসহ যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম আইনকানুন শিক্ষা দেওয়া হয়, সেসব স্থানে কুরআন-হাদিসের পাশাপাশি তাফসির পঠন-পাঠনেরও ব্যবস্থা আছে। ধর্মীয় জলসায় ওয়াজ-নসিহতকালে প্রায়শই তাফসিরের সাহায্যে ধর্মীয় বিষয়ের বিবরণ ও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।  [মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ]