তাজকিরাত-উল-ওয়াকিয়াত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''তাজকিরাত-উল-ওয়াকিয়াত  '''মুগল সম্রাট [[হুমায়ুন|হুমায়ুন]] সম্বন্ধে লিখিত সমসাময়িক ইতিহাস গ্রন্থ। জওহর আফতাবচি (পানপাত্র বাহক) এটি রচনা করেন। তিনি ২৫ বছর যাবৎ হুমায়ুনের গৃহকর্মে নিয়োজিত ছিলেন। [[আকবর|আকবর]] কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আবুল ফজলের [[আকবরনামা|আকবরনামা]][[আকবরনামা|''-'']]র উৎস হিসেবে তিনি গ্রন্থটি রচনা করেন। জওহরের গ্রন্থটি বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন তাজকিরাত''-''উল''-''ওয়াকিয়াত, তারিখ''-''''-''হুমায়ুনী ও তারিখ''-''''-''হুমায়ূনশাহী। গ্রন্থকার জোর দাবি করেন যে, সম্রাট হুমায়ুনের জীবনের প্রতিটি সময়ে তিনি তাঁর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তাই একজন প্রত্যক্ষদর্শীর দৃষ্টিকোণ থেকে সম্রাটের জীবনে সংঘটিত বিষয়াদির বিবরণ লিপিবদ্ধ করা তিনি কর্তব্য বলে মনে করেন। ৯৯৫ হিজরি বা ১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দে, অর্থাৎ সম্রাটের মৃত্যুর প্রায় ৩০ বছর পর তিনি বইটি লেখা আরম্ভ করেন।জওহর সহজ ভাষায় এবং সরলভাবে সত্য ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। তাঁর বর্ণিত হুমায়ুনের জীবনী থেকে আমরা সম্রাটকে এক প্রাণোচ্ছল ব্যক্তিত্ব এবং অতি সংকটময় মুহূর্তেও ধীরস্থির মানুষ হিসেবে দেখতে পাই। জওহরের গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য এ যে, তিনি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন এবং ফলে এটি অন্য লেখকদের পরিবেশিত তথ্যাদির পরিপূরক ও সংশোধনের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। শেরশাহের পিছু ধাওয়া করে হুমায়ুন বাংলায় আসেন এবং রাজধানী গৌড়ে নয়মাস কাল অবস্থান করেন। জওহরের এ সময়ের বর্ণনা, বিশেষ করে হুমায়ুনের বাংলায় অবস্থানকালে (গৌড় নগরীতে), খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা তিনি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তিনি জানান যে, হুমায়ুন যখন বাংলা অভিমুখে অগ্রসর হন তখন [[শেরশাহ|শেরশাহ]] শহরে (গৌড়), লুঠতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করেছিল। দুর্গে প্রবেশ করে হুমায়ুন এটিকে বাসপোযোগী করে তোলার পদক্ষেপ নেন। এ উদ্দেশ্যে দালানে রং লাগানো ও রাস্তা ঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং সম্রাট প্রাসাদে বসবাস শুরু করেন। তিনি বাংলার বিভিন্ন অংশ কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ করে দেন, কৌশলগত জায়গায় সৈন্য মোতায়েন করেন এবং নিজে বিলাসে গা ভাসিয়ে দেন। একমাস ধরে তিনি অন্তঃপুর থেকে বের হন নি, এমনকি সেনা কর্মকর্তারাও তাঁর সাক্ষাৎ পায় নি। তিনি গৌড়কে জান্নাতাবাদ (স্বর্গীয় নগরী) নামে অভিহিত করেন।  [আবদুল করিম]
'''তাজকিরাত-উল-ওয়াকিয়াত''' মুগল সম্রাট [[হুমায়ুন|হুমায়ুন]] সম্বন্ধে লিখিত সমসাময়িক ইতিহাস গ্রন্থ। জওহর আফতাবচি (পানপাত্র বাহক) এটি রচনা করেন। তিনি ২৫ বছর যাবৎ হুমায়ুনের গৃহকর্মে নিয়োজিত ছিলেন। [[আকবর|আকবর]] কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আবুল ফজলের [[আকবরনামা|আকবরনামা]]র উৎস হিসেবে তিনি গ্রন্থটি রচনা করেন। জওহরের গ্রন্থটি বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন তাজকিরাত-উল-ওয়াকিয়াত, তারিখ-ই-হুমায়ুনী ও তারিখ-ই-হুমায়ূনশাহী। গ্রন্থকার জোর দাবি করেন যে, সম্রাট হুমায়ুনের জীবনের প্রতিটি সময়ে তিনি তাঁর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তাই একজন প্রত্যক্ষদর্শীর দৃষ্টিকোণ থেকে সম্রাটের জীবনে সংঘটিত বিষয়াদির বিবরণ লিপিবদ্ধ করা তিনি কর্তব্য বলে মনে করেন। ৯৯৫ হিজরি বা ১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দে, অর্থাৎ সম্রাটের মৃত্যুর প্রায় ৩০ বছর পর তিনি বইটি লেখা আরম্ভ করেন।জওহর সহজ ভাষায় এবং সরলভাবে সত্য ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। তাঁর বর্ণিত হুমায়ুনের জীবনী থেকে আমরা সম্রাটকে এক প্রাণোচ্ছল ব্যক্তিত্ব এবং অতি সংকটময় মুহূর্তেও ধীরস্থির মানুষ হিসেবে দেখতে পাই। জওহরের গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য এ যে, তিনি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন এবং ফলে এটি অন্য লেখকদের পরিবেশিত তথ্যাদির পরিপূরক ও সংশোধনের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। শেরশাহের পিছু ধাওয়া করে হুমায়ুন বাংলায় আসেন এবং রাজধানী গৌড়ে নয়মাস কাল অবস্থান করেন। জওহরের এ সময়ের বর্ণনা, বিশেষ করে হুমায়ুনের বাংলায় অবস্থানকালে (গৌড় নগরীতে), খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা তিনি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তিনি জানান যে, হুমায়ুন যখন বাংলা অভিমুখে অগ্রসর হন তখন [[শেরশাহ|শেরশাহ]] শহরে (গৌড়), লুঠতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করেছিল। দুর্গে প্রবেশ করে হুমায়ুন এটিকে বাসপোযোগী করে তোলার পদক্ষেপ নেন। এ উদ্দেশ্যে দালানে রং লাগানো ও রাস্তা ঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং সম্রাট প্রাসাদে বসবাস শুরু করেন। তিনি বাংলার বিভিন্ন অংশ কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ করে দেন, কৌশলগত জায়গায় সৈন্য মোতায়েন করেন এবং নিজে বিলাসে গা ভাসিয়ে দেন। একমাস ধরে তিনি অন্তঃপুর থেকে বের হন নি, এমনকি সেনা কর্মকর্তারাও তাঁর সাক্ষাৎ পায় নি। তিনি গৌড়কে জান্নাতাবাদ (স্বর্গীয় নগরী) নামে অভিহিত করেন।  [আবদুল করিম]


'''গ্রন্থপঞ্জি ''' Charles Stewart, (tr) ''Tazkirat-ul-Waqiat'', London, 1832; S Moinul Huq, (tr) ''Tazkirat-ul-Waqiat,'' Karachi; Ishwari Prasad, ''Life and Times of Humayun'', Calcutta, 1955.
'''গ্রন্থপঞ্জি''' Charles Stewart, (tr) ''Tazkirat-ul-Waqiat'', London, 1832; S Moinul Huq, (tr) ''Tazkirat-ul-Waqiat,'' Karachi; Ishwari Prasad, ''Life and Times of Humayun'', Calcutta, 1955.
 
Back to: [[Untitled Document2]]


[[en:Tazkirat-ul-Waqiat]]
[[en:Tazkirat-ul-Waqiat]]

০৬:১০, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

তাজকিরাত-উল-ওয়াকিয়াত মুগল সম্রাট হুমায়ুন সম্বন্ধে লিখিত সমসাময়িক ইতিহাস গ্রন্থ। জওহর আফতাবচি (পানপাত্র বাহক) এটি রচনা করেন। তিনি ২৫ বছর যাবৎ হুমায়ুনের গৃহকর্মে নিয়োজিত ছিলেন। আকবর কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আবুল ফজলের আকবরনামার উৎস হিসেবে তিনি গ্রন্থটি রচনা করেন। জওহরের গ্রন্থটি বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন তাজকিরাত-উল-ওয়াকিয়াত, তারিখ-ই-হুমায়ুনী ও তারিখ-ই-হুমায়ূনশাহী। গ্রন্থকার জোর দাবি করেন যে, সম্রাট হুমায়ুনের জীবনের প্রতিটি সময়ে তিনি তাঁর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তাই একজন প্রত্যক্ষদর্শীর দৃষ্টিকোণ থেকে সম্রাটের জীবনে সংঘটিত বিষয়াদির বিবরণ লিপিবদ্ধ করা তিনি কর্তব্য বলে মনে করেন। ৯৯৫ হিজরি বা ১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দে, অর্থাৎ সম্রাটের মৃত্যুর প্রায় ৩০ বছর পর তিনি বইটি লেখা আরম্ভ করেন।জওহর সহজ ভাষায় এবং সরলভাবে সত্য ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। তাঁর বর্ণিত হুমায়ুনের জীবনী থেকে আমরা সম্রাটকে এক প্রাণোচ্ছল ব্যক্তিত্ব এবং অতি সংকটময় মুহূর্তেও ধীরস্থির মানুষ হিসেবে দেখতে পাই। জওহরের গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য এ যে, তিনি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন এবং ফলে এটি অন্য লেখকদের পরিবেশিত তথ্যাদির পরিপূরক ও সংশোধনের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। শেরশাহের পিছু ধাওয়া করে হুমায়ুন বাংলায় আসেন এবং রাজধানী গৌড়ে নয়মাস কাল অবস্থান করেন। জওহরের এ সময়ের বর্ণনা, বিশেষ করে হুমায়ুনের বাংলায় অবস্থানকালে (গৌড় নগরীতে), খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা তিনি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তিনি জানান যে, হুমায়ুন যখন বাংলা অভিমুখে অগ্রসর হন তখন শেরশাহ শহরে (গৌড়), লুঠতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করেছিল। দুর্গে প্রবেশ করে হুমায়ুন এটিকে বাসপোযোগী করে তোলার পদক্ষেপ নেন। এ উদ্দেশ্যে দালানে রং লাগানো ও রাস্তা ঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং সম্রাট প্রাসাদে বসবাস শুরু করেন। তিনি বাংলার বিভিন্ন অংশ কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ করে দেন, কৌশলগত জায়গায় সৈন্য মোতায়েন করেন এবং নিজে বিলাসে গা ভাসিয়ে দেন। একমাস ধরে তিনি অন্তঃপুর থেকে বের হন নি, এমনকি সেনা কর্মকর্তারাও তাঁর সাক্ষাৎ পায় নি। তিনি গৌড়কে জান্নাতাবাদ (স্বর্গীয় নগরী) নামে অভিহিত করেন।  [আবদুল করিম]

গ্রন্থপঞ্জি Charles Stewart, (tr) Tazkirat-ul-Waqiat, London, 1832; S Moinul Huq, (tr) Tazkirat-ul-Waqiat, Karachi; Ishwari Prasad, Life and Times of Humayun, Calcutta, 1955.