তত্ত্বাবধায়ক সরকার

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:০৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

তত্ত্বাবধায়ক সরকার  একটি সরকারের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় থেকে নতুন একটি সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ববর্তী সময়ে রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালনায় নিয়োজিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সাধারণত যেকোন প্রতিষ্ঠিত সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত বিদায়ী সরকারের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রথা লক্ষণীয়। এ স্বল্পস্থায়ী সরকার দৈনন্দিন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে এবং নীতি নির্ধারণী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকে, যাতে এ সরকারের কার্যাবলী নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব সৃষ্টি না করে। এ অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার জন্য নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকে। সংসদীয় শাসন কাঠামোয় মন্ত্রিসভা বিলোপের পর একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার এ অনুশীলন উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশেই লক্ষ্য করা যায়।

১৯৯০ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার  বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সমঝোতার অভাব থেকেই উদ্ভূত। একটি বিদায়ী সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে আইনানুগ রীতিসিদ্ধ পদ্ধতিগুলোর কতখানি সুষ্ঠু প্রয়োগ করবে এবং সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কতটা পক্ষপাতহীনতার পরিচয় দেবে, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ সন্দেহ থেকেই মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিটি উঠে আসে। স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে ১৯৫৪ এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচন স্বচ্ছ নির্বাচন হিসেবে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছিল এবং গণআন্দোলনে প্রভাব ফেলেছিল যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

স্বাধীনতার পর থেকে নির্বাচনে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া  অবলম্বনের অভিযোগ ওঠে এবং নির্বাচন প্রভাবিত হওয়ার  কারণে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাধারণ মানুষের একটা দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। এর ফলে নির্বাচনের ফলাফল আগে থেকেই ছকে বাঁধা থাকায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তা কোনোরূপ ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে নি। আর এ ধরনের পূর্ব নির্ধারিত নির্বাচনী ফলাফলের  উপর জনগণের অবিশ্বাস চরমে পৌঁছে প্রধানত জেনারেল এরশাদের শাসনামলে। ফলে স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল একযোগে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়। এভাবে ১৯৯০ সালে তিন বিরোধী রাজনৈতিক জোটের  যৌথ ঘোষণায় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখার বিশদ উল্লেখ করা হয়। ঘোষণায় বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলো শুধু একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে; কিন্তু তার আগে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি গ্রহণে বাধ্য করা হবে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে, যে সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে নতুন করে ঢেলে সাজাবে।

আপামর গণমানুষের বিক্ষোভ ও গণআন্দোলনের মুখে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কাছে জেনারেল এরশাদ আত্মসমর্পণে বাধ্য হন। এরূপে সম্মিলিত বিরোধী দলগুলোর মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে দেশের প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি  সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতঃপূর্বে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদ পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। এরপর জেনারেল এরশাদ প্রধান বিচারপতির হাতে দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্বভার অর্পণ করে নিজে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে মোট সতেরো জন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়।

এখানে উল্লেখ্য, কোনো সাংবিধানিক সংশোধনী ছাড়াই ১৯৯০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল, কারণ সময়ের স্বল্পতার কারণে তখন সংসদ অধিবেশন আহবান সম্ভব ছিল না। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল ভিত্তি ছিল সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন; কাজেই এর কর্মতৎপরতার বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে নি। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গৃহীত সকল পদক্ষেপই ১৯৯১ সালে নির্বাচিত পঞ্চম জাতীয় সংসদের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছিল।

১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৯৯০ সালে মূলত এরশাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্য নিয়েই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উচ্চারিত হয়েছিল। কাজেই বিরোধী দলগুলোর যৌথ ঘোষণায় ভবিষ্যতেও নির্বাচনের সময়ে এরূপ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রয়োজন হতে পারে এ ব্যাপারটি বিবেচনায় আনা হয় নি। বামপন্থী দলগুলোর পক্ষ থেকে পরবর্তী তিনটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করা হলেও প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ তাতে কর্ণপাত করে নি।

১৯৯১ সালে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংসদীয় পদ্ধতির পুনরুজ্জীবন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপের সূচনা করে। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের মাত্র দু’বছরের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে অনৈক্য, পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা ও অবিশ্বাসের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি কেন্দ্রীয় ইস্যুতে পরিণত হয়। বিরোধী দল তাদের নিরবচ্ছিন্ন সংসদ বর্জন, বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী এমন একটি জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছিল যে, সরকারি দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অবৈধ হস্তক্ষেপ করে গণতান্ত্রিক আদর্শ নস্যাৎ করেছে।

আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাবিত রূপরেখা নিয়ে  মতৈক্য ছিল না। প্রধান তিনটি বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখাসহ তিনটি পৃথক বিল যথাক্রমে ১৯৯১, ১৯৯৩-এর অক্টোবর ও নভেম্বরে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে জমা দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে কাকে মনোনীত করা হবে এ প্রশ্ন ছাড়া বিলগুলোর মৌলিক বিষয় প্রায় অভিন্নই ছিল। আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতিকে মনোনয়ন দানের পক্ষে মত দেয়। জাতীয় পার্টির প্রস্তাব ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর দাবি ছিল একটি উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন করে এর প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নিয়োগ দান। অবশ্য এ তিনটি বিল বিরোধী দলগুলোর সংসদ বর্জন ও সরকারি দলের অনিচ্ছাহেতু জাতীয় সংসদের আলোচ্যসূচিতে স্থান পায় নি। ফলে তিনটি প্রধান বিরোধীদল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ ও হরতাল শুরু করে। সরকারি দলের উপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৪৭ জন বিরোধীদলীয় সংসদ-সদস্য ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৮ তারিখে একযোগে পদত্যাগপত্র দাখিল করেন।

বিরোধী দলগুলোর সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে অবশেষে পঞ্চম জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতা দানের জন্য ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ গঠনের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ গঠনের পর সরকারি দল বিএনপি বিরোধী দলগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্রভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধকরণের পদক্ষেপ নেয়। এভাবে ১৯৯৬ সালের ২১ মার্চ ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয় এবং ২৬ মার্চ ২৬৮-০ ভোটে বিলটি পাস হয়। ত্রয়োদশ সংশোধনীতে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ৫৮ (খ) (গ) (ঘ) (ঙ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব অনুচ্ছেদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে নিম্নোক্ত মৌলিক বিষয়গুলো অর্ন্তভুক্ত করা হয়: সংসদ বিলুপ্তির পর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ১১ সদস্য বিশিষ্ট নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে; তত্ত্বাবধায়ক সরকার যৌথভাবে রাষ্ট্রপতির নিকট দায়বদ্ধ থাকবে; প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত হবেন, অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শক্রমে ১০ জন উপদেষ্টা মনোনীত হবেন; প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর এবং উপদেষ্টাগণ মন্ত্রীর অনুরূপ পদমর্যাদার অধিকারী হবেন; নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে এর কার্যাবলী, বিশেষত দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্য সম্পাদনে ব্যাপৃত থাকবে এবং নিতান্ত প্রয়োজন না হলে নীতি নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিরত থাকবে; তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে; নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের দিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত ঘোষিত হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণের পর ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ ব্যাপক বিরোধী আন্দোলনের মুখে বিতর্কিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষিত হয়। এরপর সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয় এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। চারদিন পর (৩ এপ্রিল) দশজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অবাধ ও স্বচ্ছ সপ্তম সংসদীয় নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করে এবং ২৩ জুন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে।

২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার  সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি লতিফুর রহমান প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দু’দিন পর দশজন উপদেষ্টা শপথ গ্রহণ করেন। এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদীয় নির্বাচন সম্পন্ন করে এবং ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে।

বাংলাদেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার মূলত অবাধ ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলগুলির প্রবল আন্দোলনের মুখেই জন্ম নিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি বৈধকরণের ফলে বাংলাদেশ বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থায় একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

২০০৬-৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার অক্টোবর ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের কার্যমেয়াদ শেষ হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে ব্যাপক মতানৈক্য হয় এবং রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সর্বশেষ প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। ২২ জানুয়ারি ২০০৭ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ধার্য্য করা হয়। তবে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় অব্যাহত থাকে এবং এ সময় পরস্পর বিরোধী দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংস্কার সংক্রান্ত সংলাপ র্ব্যথ হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংঘাত ব্যাপক আকার ধারণ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১ জানুয়ারি ২০০৭ রাষ্ট্রপতি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন এবং উক্ত নির্বাচন স্থগিত করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে রাষ্টপতি সরে যান এবং ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। এ সরকার ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ ঘোষণা করে এবং নির্বাচনী সংস্কারসহ বিভিন্নধর্মী সংস্কার সাধনে তৎপরতা চালায়। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে যথারীতি নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ৩ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব পালন করে।  [আল মাসুদ হাসানুজ্জামান]

তথ্যসূত্র Al Masud Hasanuzzaman, Role of Opposition in Bangladesh Politics, University Press Limited, 1998; Mizanur Rahman Khan, Shangbidhan O Tattvabadhayak Sarkar Bitarka, Dhaka City Prakashani, 1995, Al Masud Hasanuzzaman, Bangladeshey Sangsadiya Ganatantra, Rajniti O Prashasan, 1991-2007, Dhaka University Press Limited, 2009.