ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৩ নং লাইন: ৩ নং লাইন:


[[Image:UniversityDhakaAdministrativeBuilding.jpg|thumb|400px|right|রেজিস্ট্রার বিল্ডিং]]
[[Image:UniversityDhakaAdministrativeBuilding.jpg|thumb|400px|right|রেজিস্ট্রার বিল্ডিং]]
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৫৭টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র, ১৯৮৬ জন শিক্ষক, ৪৭,১৯৭ ছাত্রছাত্রী এবং ১৯টি আবাসিক হল ও ৪টি হোস্টেল রয়েছে। বর্তমান শিক্ষকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত; অনেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মোহাম্মদ ইউনুস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পূরস্কার লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন। প্রাথমিক বছরগুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকগণ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শিক্ষার উচ্চমান বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিলেন, যার ফলশ্রæতিতে এ প্রতিষ্ঠান ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৫৭টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র, ১৯৮৬ জন শিক্ষক, ৪৭,১৯৭ ছাত্রছাত্রী এবং ১৯টি আবাসিক হল ও ৪টি হোস্টেল রয়েছে। বর্তমান শিক্ষকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত; অনেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মোহাম্মদ ইউনুস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পূরস্কার লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন। প্রাথমিক বছরগুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকগণ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শিক্ষার উচ্চমান বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিলেন, যার ফলশ্রæতিতে এ প্রতিষ্ঠান ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।


৩৯ নং লাইন: ৩৮ নং লাইন:
|}
|}


[[Image:UniversityDhakaArtsBuilding.jpg|thumb|400px|right|কলা ভবন]]
অবহেলিত পূর্ববাংলার বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বপর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার মধ্যে উচ্চশিক্ষার বিশিষ্ট আবাসিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য ছিল। দেশ বিভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ববাংলার মাধ্যমিক স্তরের ঊর্ধ্বতন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও অধিভূক্তিকরণ (ধভভরষরধঃরহম) প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এ গুরুদায়িত্বের ফলে পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে, যার ফলে এর জনবল ও সুযোগ-সুবিধার ওপর প্রচÐ চাপ সৃষ্টি হয়। এরপর আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে চাপ কমে নি। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে অভাবনীয়রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন বেশ কিছু স্বনামধন্য শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন ড. গোবিন্দচন্দ্র (জি.সি) দেব (দর্শন বিভাগ), ড. এ.এন.এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখান বিভাগ), সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস বিভাগ), ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি বিভাগ), প্রফেসর এ.এন মুনীর চৌধুরী (বাংলা বিভাগ), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা বিভাগ), ড. আবুল খায়ের (ইতিহাস বিভাগ), ড. সিরাজুল হক খান (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), রাশীদুল হাসান (ইংরেজি বিভাগ), আনোয়ার পাশা (বাংলা বিভাগ), ড. ফজলুর রহমান (মৃত্তিকা বিভাগ), গিয়াসউদ্দিন আহমদ (ইতিহাস বিভাগ), ড. ফয়জুল মহি (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), আব্দুল মুকতাদির (ভূ-তত্ত¡ বিভাগ), শরাফৎ আলী (গণিত বিভাগ), সাদত আলী (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), আতাউর রহমান খান খাদিম (গণিত বিভাগ) এবং অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (পদার্থবিদ্যা বিভাগ)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোহাম্মদ মর্তুজা এবং ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ সাদেকও নির্মমভাবে নিহত হন।
অবহেলিত পূর্ববাংলার বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বপর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার মধ্যে উচ্চশিক্ষার বিশিষ্ট আবাসিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য ছিল। দেশ বিভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ববাংলার মাধ্যমিক স্তরের ঊর্ধ্বতন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও অধিভূক্তিকরণ (ধভভরষরধঃরহম) প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এ গুরুদায়িত্বের ফলে পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে, যার ফলে এর জনবল ও সুযোগ-সুবিধার ওপর প্রচÐ চাপ সৃষ্টি হয়। এরপর আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে চাপ কমে নি। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে অভাবনীয়রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন বেশ কিছু স্বনামধন্য শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন ড. গোবিন্দচন্দ্র (জি.সি) দেব (দর্শন বিভাগ), ড. এ.এন.এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখান বিভাগ), সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস বিভাগ), ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি বিভাগ), প্রফেসর এ.এন মুনীর চৌধুরী (বাংলা বিভাগ), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা বিভাগ), ড. আবুল খায়ের (ইতিহাস বিভাগ), ড. সিরাজুল হক খান (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), রাশীদুল হাসান (ইংরেজি বিভাগ), আনোয়ার পাশা (বাংলা বিভাগ), ড. ফজলুর রহমান (মৃত্তিকা বিভাগ), গিয়াসউদ্দিন আহমদ (ইতিহাস বিভাগ), ড. ফয়জুল মহি (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), আব্দুল মুকতাদির (ভূ-তত্ত¡ বিভাগ), শরাফৎ আলী (গণিত বিভাগ), সাদত আলী (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), আতাউর রহমান খান খাদিম (গণিত বিভাগ) এবং অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (পদার্থবিদ্যা বিভাগ)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোহাম্মদ মর্তুজা এবং ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ সাদেকও নির্মমভাবে নিহত হন।


ছবি ১: উপাচার্য ভবন
{| class="table table-bordered table-hover"
ইনস্টিটিউট
|-
নাম স্থাপিত ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা প্রথম পরিচালক
| colspan="4" | ইনস্টিটিউট
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৬১ ১৬০০ ড. জি. ডি মরিসন
|-
পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট ১৯৬৪ ২৬৫ ড. কাজী মোতাহার হোসেন
| নাম || স্থাপিত || ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা || প্রথম পরিচালক  
ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট ১৯৬৬ ৬০০ অধ্যাপক এম. শফিউল্লাহ
|-
পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ১৯৬৯ ২৩৮ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমদ
| শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট || ১৯৬১ || ১৬০০ || ড. জি. ডি মরিসন
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৭৩ ৯৫৪ অধ্যাপক এম.এ মোমেন  
|-
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ১৯৭৪ ১০৭৬ অধ্যাপক এ.এইচ.এম আব্দুল হাই
| পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট || ১৯৬৪ || ২৬৫ || ড. কাজী মোতাহার হোসেন
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট ১৯৯৮ ৩৮০ ড. সুশীল রঞ্জণ হাওলাদার
|-
তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট ২০০১ ১৪৬ অধ্যাপক আহমেদ শফি
| ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট || ১৯৬৬ || ৬০০ || অধ্যাপক এম. শফিউল্লাহ
শক্তি ইনস্টিটিউট ২০১১ ৮০
|-
ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ২০১২ ২৫০ অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন
| পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট || ১৯৬৯ || ২৩৮ || অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমদ
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ২০১১ ৬৯০ মারুফা মাহবুব
|-
কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ২০১৬ - ড. জোউ মিংডং
| সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট || ১৯৭৩ || ৯৫৪ || অধ্যাপক এম.এ মোমেন  
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিচ এন্ড লিবার্টি ২০২০ - অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম
|-
| আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট || ১৯৭৪ || ১০৭৬ || অধ্যাপক এ.এইচ.এম আব্দুল হাই
|-
| স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট || ১৯৯৮ || ৩৮০ || ড. সুশীল রঞ্জণ হাওলাদার
|-
| তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট || ২০০১ || ১৪৬ || অধ্যাপক আহমেদ শফি
|-
| শক্তি ইনস্টিটিউট || ২০১১ || ৮০ ||
|-
| ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ || ২০১২ || ২৫০ || অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন
|-
| লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট || ২০১১ || ৬৯০ || মারুফা মাহবুব
|-
| কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট || ২০১৬ || - || ড. জোউ মিংডং
|-
| বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিচ এন্ড লিবার্টি || ২০২০ || - || অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম
|}
 
নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ছাত্র-শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিগত নয় দশকে এর গৌরবময় ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে। আজ যাঁরা দেশের শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রশাসন, ক‚টনীতি, জনসংযোগ, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানায় নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁদের প্রায় ৭০% এসেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভ করে।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ছাত্র-শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিগত নয় দশকে এর গৌরবময় ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে। আজ যাঁরা দেশের শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রশাসন, ক‚টনীতি, জনসংযোগ, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানায় নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁদের প্রায় ৭০% এসেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভ করে।


ছবি ৩: ন্যাথান কমিশন
[[Image:NathanCommittee1912.jpg|thumb|400px|right|নাথান কমিটি সদস্যবৃন্দ (১৯১২)]]
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় নি। রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভারত সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হলে বঙ্গভঙ্গ রদের রাজকীয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হন স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ। তিনি এর আগে ১৭ বছর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা রেজিস্ট্রার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে মুসলিম সংখ্যাগুরু পূর্ববাংলা ও <আসাম> প্রদেশের জনগণের মনে এক নতুন আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। কিন্তু মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবল বিরোধিতার মুখে এ বিভক্তি রদ করা হলে মুসলমান সমাজ একে তাদের অগ্রযাত্রায় একটি বড় ধরনের আঘাত বলে মনে করে। প্রতীচ্য শিক্ষায় পঞ্চাশ বছর পশ্চাদ্বর্তী মুসলমানগণ বুঝতে পারে যে, শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ হওয়াটাই সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। ব্রিটিশ কর্তৃক প্রবর্তিত শিক্ষা কার্যক্রম সাদরে গ্রহণের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায় সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে, মুসলিম সম্প্রদায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে থাকে। এ মনোভাব সম্পর্কে অন্তত চারটি কমিশন মন্তব্য করে, যার মধ্যে ছিল ১৮৮২ সালের <হান্টার কমিশন>, ১৯১২ সালের নাথান কমিটি, ১৯১৩ সালের হর্নেল কমিটি এবং ১৯১৭ সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন।  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় নি। রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভারত সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হলে বঙ্গভঙ্গ রদের রাজকীয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হন স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ। তিনি এর আগে ১৭ বছর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা রেজিস্ট্রার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে মুসলিম সংখ্যাগুরু পূর্ববাংলা ও <আসাম> প্রদেশের জনগণের মনে এক নতুন আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। কিন্তু মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবল বিরোধিতার মুখে এ বিভক্তি রদ করা হলে মুসলমান সমাজ একে তাদের অগ্রযাত্রায় একটি বড় ধরনের আঘাত বলে মনে করে। প্রতীচ্য শিক্ষায় পঞ্চাশ বছর পশ্চাদ্বর্তী মুসলমানগণ বুঝতে পারে যে, শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ হওয়াটাই সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। ব্রিটিশ কর্তৃক প্রবর্তিত শিক্ষা কার্যক্রম সাদরে গ্রহণের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায় সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে, মুসলিম সম্প্রদায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে থাকে। এ মনোভাব সম্পর্কে অন্তত চারটি কমিশন মন্তব্য করে, যার মধ্যে ছিল ১৮৮২ সালের <হান্টার কমিশন>, ১৯১২ সালের নাথান কমিটি, ১৯১৩ সালের হর্নেল কমিটি এবং ১৯১৭ সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন।  


আবাসিক হল/হোস্টেল
{| class="table table-bordered table-hover"
হলের নাম স্থাপিত আবাসিক ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা প্রথম প্রাধ্যক্ষ
|-
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ১৯২১ ৭৪৪ স্যার এ.এফ রহমান  
| colspan="4" | আবাসিক হল/হোস্টেল
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল (ঢাকা হল) ১৯২১ ১২৮৮ প্রফেসর এফ.সি টার্নার
|-
জগন্নাথ হল ১৯২১ ১৫৭০ ড. নরেশ চন্দ্র সেনগুপ্ত
| হলের নাম || স্থাপিত || আবাসিক ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা || প্রথম প্রাধ্যক্ষ  
ফজলুল হক (মুসলিম) হল ১৯৪০ ৭০৯ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
|-
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক (ইকবাল) হল ১৯৫৭ ১২৪৪ ড. মফিজ উদ্দিন আহমেদ
| সলিমুল্লাহ মুসলিম হল || ১৯২১ || ৭৪৪ || স্যার এ.এফ রহমান  
রোকেয়া হল ১৯৬৩ ২২৭৬ মিসেস আখতার ইমাম
|-
সূর্যসেন (মোহাম্মদ আলী  জিন্নাহ) হল ১৯৬৬ ১০৮৬ প্রফেসর এম শফিউল্লাহ
|ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল (ঢাকা হল) || ১৯২১ || ১২৮৮ || প্রফেসর এফ.সি টার্নার
পি.জে হার্টগ (আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস) ইন্টারন্যাশনাল হল ১৯৬৬ ৮৮ মোঃ আফসার উদ্দিন
|-
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ১৯৬৭ ১৪৯১ প্রফেসর মোঃ ইন্নাস আলী
|জগন্নাথ হল || ১৯২১ || ১৫৭০ || ড. নরেশ চন্দ্র সেনগুপ্ত
শামসুন নাহার হল ১৯৭১ ১২৪৮ ড. সৈয়দা ফাতেমা সাদেক
|-
কবি জসীম উদদীন হল ১৯৭৬ ৬৩৬ অধ্যাপক কে.এম.এ কামরুদ্দিন
|ফজলুল হক (মুসলিম) হল || ১৯৪০ || ৭০৯ || ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
স্যার এ.এফ রহমান হল ১৯৭৬ ৯৯২ ড. এ.এম.এম নূরুল হক ভুইঁয়া
|-
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ১৯৮৮ ১০৮০ প্রফেসর আবু জাফর
|শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক (ইকবাল) হল || ১৯৫৭ || ১২৪৪ || ড. মফিজ উদ্দিন আহমেদ
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ১৯৮৮ ৭০২ ড. আ.ফ.ম খোদাদাদ খান  
|-
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল ১৯৮৯ ৮০৪ ড. হামিদা আখতার বেগম
|রোকেয়া হল || ১৯৬৩ || ২২৭৬ || মিসেস আখতার ইমাম
অমর একুশে হল ২০০১ ৭৬৫ ড. সহিদ আকতার হুসাইন
|-
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ২০০০ ৯২৮ ড. নাসরীন আহমাদ
|সূর্যসেন (মোহাম্মদ আলী  জিন্নাহ) হল || ১৯৬৬ || ১০৮৬ || প্রফেসর এম শফিউল্লাহ
কবি সুফিয়া কামাল হল ২০১২ ২৪০০ ড. নিলুফার নাহার
|-
বিজয় একাত্তর হল ২০১৩ ১৯২৪ ড. এ জে এম শফিউল আলম ভুইয়া
|পি.জে হার্টগ (আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস) ইন্টারন্যাশনাল হল || ১৯৬৬ || ৮৮ || মোঃ আফসার উদ্দিন
নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রী নিবাস ১৯৯৪ ১৩০ অধ্যাপক নুরজাহান সরকার
|-
আই.বি.এ হোস্টেল ১৯৮৬ ১৩৮ ড. আনোয়ার হোসেন
|হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল || ১৯৬৭ || ১৪৯১ || প্রফেসর মোঃ ইন্নাস আলী
ড. কুদরাত-ই-খুদা হোস্টেল ১৯৮৫ ৩০৮ ড. মো. আব্দুল মুত্তালিব
|-
শহীদ এ্যাথলেট সুলতানা কামাল হোস্টেল ২০১৬ ১৩০ ফাতেমাতুজ জোহরা
|শামসুন নাহার হল || ১৯৭১ || ১২৪৮ || ড. সৈয়দা ফাতেমা সাদেক
|-
|কবি জসীম উদদীন হল || ১৯৭৬ || ৬৩৬ || অধ্যাপক কে.এম.এ কামরুদ্দিন
|-
|স্যার এ.এফ রহমান হল || ১৯৭৬ || ৯৯২ || ড. এ.এম.এম নূরুল হক ভুইঁয়া
|-
|জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল || ১৯৮৮ || ১০৮০ || প্রফেসর আবু জাফর
|-
|মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল || ১৯৮৮ || ৭০২ || ড. আ.ফ.ম খোদাদাদ খান  
|-
|বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল || ১৯৮৯ || ৮০৪ || ড. হামিদা আখতার বেগম
|-
|অমর একুশে হল || ২০০১ || ৭৬৫ || ড. সহিদ আকতার হুসাইন
|-
|বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল || ২০০০ || ৯২৮ || ড. নাসরীন আহমাদ
|-
|কবি সুফিয়া কামাল হল || ২০১২ || ২৪০০ || ড. নিলুফার নাহার
|-
|বিজয় একাত্তর হল || ২০১৩ || ১৯২৪ || ড. এ জে এম শফিউল আলম ভুইয়া
|-
|নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রী নিবাস || ১৯৯৪ || ১৩০ || অধ্যাপক নুরজাহান সরকার
|-
|আই.বি.এ হোস্টেল || ১৯৮৬ || ১৩৮ || ড. আনোয়ার হোসেন
|-
|ড. কুদরাত-ই-খুদা হোস্টেল || ১৯৮৫ || ৩০৮ || ড. মো. আব্দুল মুত্তালিব
|-
|শহীদ এ্যাথলেট সুলতানা কামাল হোস্টেল || ২০১৬ || ১৩০ || ফাতেমাতুজ জোহরা
|}


[[Image:CurzonHall.jpg|thumb|left|400px|কার্জন হল]]
ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ বাংলা বিভক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে মুসলিম সম্প্রদায়ের অসন্তোষের বিষয় উপলব্ধি করে তাদের সান্ত¡না দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তখন মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, নওয়াব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এবং এ.কে ফজলুল হক। সাক্ষাৎকালে তাঁরা বঙ্গভঙ্গ রহিত করায় শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বঙ্গবিভক্তি বিলোপের ক্ষতিপূরণ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তারা ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানান। লর্ড হার্ডিঞ্জ এ প্রস্তাবের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং বিষয়টি তিনি ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নিকট সুপারিশ করবেন বলেও অঙ্গীকার করেন। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রæয়ারিতে প্রকাশিত এক সরকারি ঘোষণায় এ বিষয়টি স্বীকৃত হয়। লর্ড হার্ডিঞ্জ স্বীকার করেন যে, ১৯০৬ সাল থেকে পূর্ববাংলা ও আসাম উন্নতির পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে। তিনি জানান যে, ওই বছর পূর্ববাংলা ও আসামে ১,৬৯৮ জন উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রী ছিল এবং ওই খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১,৫৪,৩৫৮ টাকা। অবস্থার উন্নতির ফলে ওই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৫৬০ ছাত্রছাত্রীতে এবং অর্থব্যয় হয়েছে ৩,৮৩,৬১৯ টাকা। ১৯০৫ থেকে ১৯১০-১১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ৬,৯৯,০৫১ হতে ৯,৩৬,৬৫৩-তে উন্নীত হয় এবং প্রাদেশিক কোষাগার থেকে এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ১১,০৬,৫১০ টাকা থেকে ২২,০৫,৩৩৯ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়। একইভাবে স্থানীয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খরচ ৪৭,৮১,৮৩৩ টাকা থেকে বেড়ে ৭৩,০৫,২৬০ টাকায় দাঁড়ায়।
ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ বাংলা বিভক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে মুসলিম সম্প্রদায়ের অসন্তোষের বিষয় উপলব্ধি করে তাদের সান্ত¡না দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তখন মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, নওয়াব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এবং এ.কে ফজলুল হক। সাক্ষাৎকালে তাঁরা বঙ্গভঙ্গ রহিত করায় শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বঙ্গবিভক্তি বিলোপের ক্ষতিপূরণ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তারা ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানান। লর্ড হার্ডিঞ্জ এ প্রস্তাবের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং বিষয়টি তিনি ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নিকট সুপারিশ করবেন বলেও অঙ্গীকার করেন। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রæয়ারিতে প্রকাশিত এক সরকারি ঘোষণায় এ বিষয়টি স্বীকৃত হয়। লর্ড হার্ডিঞ্জ স্বীকার করেন যে, ১৯০৬ সাল থেকে পূর্ববাংলা ও আসাম উন্নতির পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে। তিনি জানান যে, ওই বছর পূর্ববাংলা ও আসামে ১,৬৯৮ জন উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রী ছিল এবং ওই খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১,৫৪,৩৫৮ টাকা। অবস্থার উন্নতির ফলে ওই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৫৬০ ছাত্রছাত্রীতে এবং অর্থব্যয় হয়েছে ৩,৮৩,৬১৯ টাকা। ১৯০৫ থেকে ১৯১০-১১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ৬,৯৯,০৫১ হতে ৯,৩৬,৬৫৩-তে উন্নীত হয় এবং প্রাদেশিক কোষাগার থেকে এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ১১,০৬,৫১০ টাকা থেকে ২২,০৫,৩৩৯ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়। একইভাবে স্থানীয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খরচ ৪৭,৮১,৮৩৩ টাকা থেকে বেড়ে ৭৩,০৫,২৬০ টাকায় দাঁড়ায়।
ছবি ৪: কার্জন হল


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সরকারি সিদ্ধান্তে হিন্দু নেতৃবৃন্দ ক্ষুব্ধ হন। কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ১৯১২ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি ভাইসরয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ঢাকায় একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বস্তুত হবে বাংলাকে ‘অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্তির’ শামিল। তাঁরা আরও মত প্রকাশ করেন যে, পূর্ববাংলার মুসলিম সম্প্রদায় বেশির ভাগই কৃষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাদের কোনো উপকার হবে না। লর্ড হার্ডিঞ্জ প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন যে, বাংলাকে পুনরায় বিভক্ত করার কোনো পদক্ষেপ সরকার কর্তৃক গৃহীত হবে না। তিনি আরও বলেন যে, এ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হবে আবাসিক এবং তা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এক পর্যায়ে লর্ড হার্ডিঞ্জ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখার্জীকে জানিয়ে দেন যে, তাঁদের বিরোধিতা সত্তে¡ও ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। উপরিউক্ত প্রতিরোধ ছাড়াও এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আরও কিছু আইনগত ও বস্তুগত জটিলতা ছিল।  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সরকারি সিদ্ধান্তে হিন্দু নেতৃবৃন্দ ক্ষুব্ধ হন। কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ১৯১২ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি ভাইসরয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ঢাকায় একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বস্তুত হবে বাংলাকে ‘অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্তির’ শামিল। তাঁরা আরও মত প্রকাশ করেন যে, পূর্ববাংলার মুসলিম সম্প্রদায় বেশির ভাগই কৃষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাদের কোনো উপকার হবে না। লর্ড হার্ডিঞ্জ প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন যে, বাংলাকে পুনরায় বিভক্ত করার কোনো পদক্ষেপ সরকার কর্তৃক গৃহীত হবে না। তিনি আরও বলেন যে, এ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হবে আবাসিক এবং তা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এক পর্যায়ে লর্ড হার্ডিঞ্জ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখার্জীকে জানিয়ে দেন যে, তাঁদের বিরোধিতা সত্তে¡ও ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। উপরিউক্ত প্রতিরোধ ছাড়াও এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আরও কিছু আইনগত ও বস্তুগত জটিলতা ছিল।  


ছবি ৩: ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র
[[Image:UniversityDhakTSC.jpg|thumb|400px|left|ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টি.এস.সি)]]
 
লন্ডনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভের পর ভারত সরকার ১৯২১ সালের ৪ এপ্রিল এক পত্রের মাধ্যমে বাংলা সরকারকে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত বিশদ পরিকল্পনা এবং এর আর্থিক সংশ্লেষ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। এতদুদ্দেশ্যে ২৭ মে লন্ডনের ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানকে প্রধান করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি নিয়োগ করা হয়। এ কমিটির সদস্য ছিলেন বাংলার গণশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জি.ডবিøউ কুচলার, কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট ড. রাসবিহারী ঘোষ, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নবাব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার জমিদার ও উকিল আনন্দচন্দ্র রায়, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডবিøউ.এ.টি আর্চবোল্ড, জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ললিতমোহন চট্টোপাধ্যায়, <ঢাকা মাদ্রাসা>র (পরবর্তীকালে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ, বর্তমান <কবি নজরুল সরকারি কলেজ>) সুপারিন্টেন্ডেন্ট শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, আলীগড়ের মোহাম্মদ আলী, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ এইচ.আর জেমস, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডবিøউ পিক এবং কলকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ সতীশচন্দ্র আচার্য। নাথান কমিটি নামে পরিচিত এ কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেন। প্রস্তাবে বলা হয় যে, এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে শিক্ষাদান ও আবাসিক কার্যক্রম সম্বলিত প্রতিষ্ঠান এবং কেবল শহরের কলেজগুলি এর আওতাধীন থাকবে। কমিটি অতি দ্রæত ২৫টি বিশেষ উপকমিটির পরামর্শ গ্রহণ করে এবং ওই বছর শরৎকালের মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত অবকাঠামোর ইমারতের নকশাসহ ৫৩ লাখ টাকা (পরবর্তীকালে গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক ৬৭ লাখ ঢাকায় উন্নীত) মূল ব্যয় এবং ১২ লাখ টাকা বাৎসরিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্তকাজ ও পাঠদানবিষয়ক তথ্যাদি বিশদ আকারে বর্ণিত হয়। কমিটির মতে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, লিডস, লিভারপুল প্রভৃতি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় এ প্রতিষ্ঠানটি হবে একক আবাসিক শিক্ষাক্ষেত্র। <ঢাকা কলেজ>, <জগন্নাথ কলেজ>, মোহামেডান কলেজ, উইমেন্স কলেজসহ সাতটি কলেজ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় থাকবে। কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে ¯œাতকোত্তর শিক্ষাসহ আইন, চিকিৎসা, প্রকৌশল ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের আওতাভুক্ত থাকবে। পরবর্তীকালে এলাহাবাদ, বেনারস, হায়দ্রাবাদ, আলীগড়, লক্ষেèৗ এবং আন্নামালাইতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল অনুসরণ করা হয়।
লন্ডনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভের পর ভারত সরকার ১৯২১ সালের ৪ এপ্রিল এক পত্রের মাধ্যমে বাংলা সরকারকে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত বিশদ পরিকল্পনা এবং এর আর্থিক সংশ্লেষ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। এতদুদ্দেশ্যে ২৭ মে লন্ডনের ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানকে প্রধান করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি নিয়োগ করা হয়। এ কমিটির সদস্য ছিলেন বাংলার গণশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জি.ডবিøউ কুচলার, কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট ড. রাসবিহারী ঘোষ, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নবাব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার জমিদার ও উকিল আনন্দচন্দ্র রায়, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডবিøউ.এ.টি আর্চবোল্ড, জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ললিতমোহন চট্টোপাধ্যায়, <ঢাকা মাদ্রাসা>র (পরবর্তীকালে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ, বর্তমান <কবি নজরুল সরকারি কলেজ>) সুপারিন্টেন্ডেন্ট শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, আলীগড়ের মোহাম্মদ আলী, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ এইচ.আর জেমস, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডবিøউ পিক এবং কলকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ সতীশচন্দ্র আচার্য। নাথান কমিটি নামে পরিচিত এ কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেন। প্রস্তাবে বলা হয় যে, এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে শিক্ষাদান ও আবাসিক কার্যক্রম সম্বলিত প্রতিষ্ঠান এবং কেবল শহরের কলেজগুলি এর আওতাধীন থাকবে। কমিটি অতি দ্রæত ২৫টি বিশেষ উপকমিটির পরামর্শ গ্রহণ করে এবং ওই বছর শরৎকালের মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত অবকাঠামোর ইমারতের নকশাসহ ৫৩ লাখ টাকা (পরবর্তীকালে গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক ৬৭ লাখ ঢাকায় উন্নীত) মূল ব্যয় এবং ১২ লাখ টাকা বাৎসরিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্তকাজ ও পাঠদানবিষয়ক তথ্যাদি বিশদ আকারে বর্ণিত হয়। কমিটির মতে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, লিডস, লিভারপুল প্রভৃতি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় এ প্রতিষ্ঠানটি হবে একক আবাসিক শিক্ষাক্ষেত্র। <ঢাকা কলেজ>, <জগন্নাথ কলেজ>, মোহামেডান কলেজ, উইমেন্স কলেজসহ সাতটি কলেজ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় থাকবে। কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে ¯œাতকোত্তর শিক্ষাসহ আইন, চিকিৎসা, প্রকৌশল ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের আওতাভুক্ত থাকবে। পরবর্তীকালে এলাহাবাদ, বেনারস, হায়দ্রাবাদ, আলীগড়, লক্ষেèৗ এবং আন্নামালাইতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল অনুসরণ করা হয়।
ছবি ৬: কলা ভবন


বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার আওতায় পূর্ববাংলা ও আসাম সরকারের প্রশাসনিক দপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য রমনা এলাকায় ইতোপূর্বে অধিগ্রহণ করা ২৪৩ একর ভূমি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত হয়। কার্জন হল, ঢাকা কলেজ, নতুন সরকারি ভবন, সচিবালয়, সরকারি ছাপাখানা, সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসস্থল ও ছোটখাট ইমারত ওই এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে এ সকল ইমারত, ভূমি ও স্থাপনা বার্ষিক এক হাজার টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ইজারা দেওয়া হয়। নাথান কমিটির উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হলো:  
বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার আওতায় পূর্ববাংলা ও আসাম সরকারের প্রশাসনিক দপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য রমনা এলাকায় ইতোপূর্বে অধিগ্রহণ করা ২৪৩ একর ভূমি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত হয়। কার্জন হল, ঢাকা কলেজ, নতুন সরকারি ভবন, সচিবালয়, সরকারি ছাপাখানা, সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসস্থল ও ছোটখাট ইমারত ওই এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে এ সকল ইমারত, ভূমি ও স্থাপনা বার্ষিক এক হাজার টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ইজারা দেওয়া হয়। নাথান কমিটির উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হলো:  
১. বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ও সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক পরিচালিত।  
১. বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ও সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক পরিচালিত।  
২. এটি হবে আবাসিক ও শিক্ষাদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়।
২. এটি হবে আবাসিক ও শিক্ষাদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়।
৩. ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণা এর শিক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে।  
৩. ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণা এর শিক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে।  
১৯১৩ সালে কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প চ‚ড়ান্ত করার পূর্বে জনমত যাচাইয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঐবৎসরই ডিসেম্বর মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রী কর্তৃক প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে সরকারের ওপর প্রচÐ অর্থনৈতিক চাপের কারণে ১১,২৫,০০০ টাকা ব্যয়ের ছোট প্রকল্প বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থা মুসলিম নেতৃত্বের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে এবং বিষয়টি নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী কর্তৃক ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ভারতীয় বিধানসভায় উত্থাপিত হয়। সরকারি মুখপাত্র শঙ্কর নারায়ণ জানান যে, সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর, তবে <কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়> কমিশনের নিকট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প ও পরিচালনা বিষয়ে অভিমত চাওয়া হয়েছে এবং অভিমত পাওয়া গেলেই খসড়া বিল অনুমোদিত হবে।  
১৯১৩ সালে কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প চ‚ড়ান্ত করার পূর্বে জনমত যাচাইয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঐবৎসরই ডিসেম্বর মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রী কর্তৃক প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে সরকারের ওপর প্রচÐ অর্থনৈতিক চাপের কারণে ১১,২৫,০০০ টাকা ব্যয়ের ছোট প্রকল্প বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থা মুসলিম নেতৃত্বের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে এবং বিষয়টি নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী কর্তৃক ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ভারতীয় বিধানসভায় উত্থাপিত হয়। সরকারি মুখপাত্র শঙ্কর নারায়ণ জানান যে, সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর, তবে <কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়> কমিশনের নিকট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প ও পরিচালনা বিষয়ে অভিমত চাওয়া হয়েছে এবং অভিমত পাওয়া গেলেই খসড়া বিল অনুমোদিত হবে।  


ছবি ৭: বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মনোগ্রাম
[[Image:DhakaUniversityLogo.jpg|thumb|600px|center|বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম]]
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড চেমস্ফোর্ড ১৯১৭ সালের ৬ জানুয়ারি এক অভিষেক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সমস্যা ও চাহিদা নির্ণয়ের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। লিড্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম.ই স্যাডলারের নেতৃত্বে ১৯১৯ সালে গঠিত কমিশনের প্রতিবেদনে ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা স্বীকার করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট ২৭,২৯০ জন ছাত্রের মধ্যে ঢাকা বিভাগ ও ত্রিপুরা জেলা থেকে ৭০৯৭ জন ছাত্র অধ্যয়নরত। সুতরাং ঢাকা ছাত্রসংখ্যার দিক থেকে মধ্যস্থান দখল করে আছে। কমিশন নাথান কমিটির বেশির ভাগ সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করে এবং অতিসত্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য মত দেয়। স্যাডলার কমিশনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশ:
 
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তিকরণ ক্ষমতা থাকবে না। এটির কাজ হবে শিক্ষা দান ও গবেষণা।
২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে স্বায়ত্তশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান।


কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড চেমস্ফোর্ড ১৯১৭ সালের ৬ জানুয়ারি এক অভিষেক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সমস্যা ও চাহিদা নির্ণয়ের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। লিড্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম.ই স্যাডলারের নেতৃত্বে ১৯১৯ সালে গঠিত কমিশনের প্রতিবেদনে ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা স্বীকার করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট ২৭,২৯০ জন ছাত্রের মধ্যে ঢাকা বিভাগ ও ত্রিপুরা জেলা থেকে ৭০৯৭ জন ছাত্র অধ্যয়নরত। সুতরাং ঢাকা ছাত্রসংখ্যার দিক থেকে মধ্যস্থান দখল করে আছে। কমিশন নাথান কমিটির বেশির ভাগ সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করে এবং অতিসত্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য মত দেয়। স্যাডলার কমিশনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশ:
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তিকরণ ক্ষমতা থাকবে না। এটির কাজ হবে শিক্ষা দান ও গবেষণা।
২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে স্বায়ত্তশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান।
১৯১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিলটি উত্থাপিত হয়। সরকার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কাউন্সিলে উত্থাপিত বিলটি বিবেচনার জন্য পাঠায়। নভেম্বর মাসের ১ তারিখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট বিলটি পরীক্ষা করার জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের একমাত্র বাঙালি মুসলমান সদস্য হিসেবে খান বাহাদুর আহসানউল¬াহ বিলটির পক্ষে জোরালো অভিমত পেশ করেন। সিনেটের অনেক সদস্যের বিরোধিতা সত্তে¡ও ১৭ থেকে ২০ ডিসেম্বর (১৯১৯) আইনের কিছু কিছু অনুচ্ছেদ, ধারা ও উপধারা সংশোধন পরিমার্জন পূর্বক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিলটির খসড়া সিনেটের সম্মতি লাভ করে।  
১৯১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিলটি উত্থাপিত হয়। সরকার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কাউন্সিলে উত্থাপিত বিলটি বিবেচনার জন্য পাঠায়। নভেম্বর মাসের ১ তারিখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট বিলটি পরীক্ষা করার জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের একমাত্র বাঙালি মুসলমান সদস্য হিসেবে খান বাহাদুর আহসানউল¬াহ বিলটির পক্ষে জোরালো অভিমত পেশ করেন। সিনেটের অনেক সদস্যের বিরোধিতা সত্তে¡ও ১৭ থেকে ২০ ডিসেম্বর (১৯১৯) আইনের কিছু কিছু অনুচ্ছেদ, ধারা ও উপধারা সংশোধন পরিমার্জন পূর্বক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিলটির খসড়া সিনেটের সম্মতি লাভ করে।  
১৯২০ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই বছর ১৮ মার্চ এটি আইনে পরিণত হয়। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট’ গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। এ আইনের বলে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। কমিশনের ১৩টি সুপারিশের প্রায় সবগুলিই ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্টে সন্নিবেশিত হয়। ভারতের গভর্নর জেনারেল ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগকে পাঁচ বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেন। উপাচার্য ডিসেম্বরের ১০ তারিখে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত ২৭ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কোষাধ্যক্ষ (অবৈতনিক) ছিলেন জে.এইচ লিন্ডসে, আইসিএস (১-৭-১৯২১ থেকে ২০-২-১৯২২), প্রথম রেজিস্ট্রার খানবাহাদুর নাজির উদ্দিন আহমদ (১০-৪-১৯২১ থেকে ৩০-৬-১৯৪৪) এবং প্রথম প্রক্টর ফিদা আলী খান (১৯২৫-১৯৩০)। ১৯৭৬ সাল থেকে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর পদ সৃষ্টি করা হয়। প্রথম প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন ড. মফিজুল্লাহ কবির। এ পর্যন্ত ১৯ জন এ পদে দায়িত্বপালন করেন।
১৯২০ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই বছর ১৮ মার্চ এটি আইনে পরিণত হয়। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট’ গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। এ আইনের বলে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। কমিশনের ১৩টি সুপারিশের প্রায় সবগুলিই ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্টে সন্নিবেশিত হয়। ভারতের গভর্নর জেনারেল ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগকে পাঁচ বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেন। উপাচার্য ডিসেম্বরের ১০ তারিখে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত ২৭ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কোষাধ্যক্ষ (অবৈতনিক) ছিলেন জে.এইচ লিন্ডসে, আইসিএস (১-৭-১৯২১ থেকে ২০-২-১৯২২), প্রথম রেজিস্ট্রার খানবাহাদুর নাজির উদ্দিন আহমদ (১০-৪-১৯২১ থেকে ৩০-৬-১৯৪৪) এবং প্রথম প্রক্টর ফিদা আলী খান (১৯২৫-১৯৩০)। ১৯৭৬ সাল থেকে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর পদ সৃষ্টি করা হয়। প্রথম প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন ড. মফিজুল্লাহ কবির। এ পর্যন্ত ১৯ জন এ পদে দায়িত্বপালন করেন।
উপাচার্য
{| class="table table-bordered table-hover"
নাম সময়কাল
|-
স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ ০১.১২.১৯২০ থেকে ৩১.১২.১৯২৫
| colspan="2" | উপাচার্য
অধ্যাপক জর্জ হ্যারী ল্যাংলী ০১.০১.১৯২৬ থেকে ৩০.০৬.১৯৩৪
|-
স্যার এ.এফ রহমান ০১.০৭.১৯৩৪ থেকে ৩১.১২.১৯৩৬
| নাম || সময়কাল  
ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার ০১.০১.১৯৩৭ থেকে ৩০.০৬.১৯৪২
|-
ড. মাহমুদ হাসান ০১.০৭.১৯৪২ থেকে ২১.১০.১৯৪৮
| স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ || ০১.১২.১৯২০ থেকে ৩১.১২.১৯২৫
ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ২২.১০.১৯৪৮ থেকে ০৮.১১.১৯৫৩
|-
ড. ওয়াটার অ্যালেন জেঙ্কিন্স ০৯.১১.১৯৫৩ থেকে ০৮.১১.১৯৫৬
|অধ্যাপক জর্জ হ্যারী ল্যাংলী || ০১.০১.১৯২৬ থেকে ৩০.০৬.১৯৩৪
বিচারপতি মুহম্মদ ইব্রাহিম ০৯.১১.১৯৫৬ থেকে ২৭.১০.১৯৫৮
|-
বিচারপতি হামুদুর রহমান ০৫.১১.১৯৫৮ থেকে ১৪.১২.১৯৬০
|স্যার এ.এফ রহমান || ০১.০৭.১৯৩৪ থেকে ৩১.১২.১৯৩৬
ড. মাহমুদ হোসেন ১৫.১২.১৯৬০ থেকে ১৯.০২.১৯৬৩
|-
ড. মোহাম্মদ ওসমান গনি ২০.০২.১৯৬৩ থেকে ০১.১২.১৯৬৯
|ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার || ০১.০১.১৯৩৭ থেকে ৩০.০৬.১৯৪২
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ০২.১২.১৯৬৯ থেকে ২০.০১.১৯৭২
|-
ড. মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী ২১.০১.১৯৭২ থেকে ১২.০৪.১৯৭৩
|ড. মাহমুদ হাসান || ০১.০৭.১৯৪২ থেকে ২১.১০.১৯৪৮
ড. আবদুল মতিন চৌধুরী ১৩.০৪.১৯৭৩ থেকে ২২.০৯.১৯৭৫
|-
অধ্যাপক মুহম্মদ সামসউল হক ২৩.০৯.১৯৭৫ থেকে ০১.০২.১৯৭৬
|ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন || ২২.১০.১৯৪৮ থেকে ০৮.১১.১৯৫৩
ড. ফজলুল হালিম চৌধুরী ০২.০২.১৯৭৬ থেকে ২০.০৩.১৯৮৩
|-
ড. এ.কে.এম সিদ্দিক ২১.০৩.১৯৮৩ থেকে ১৬.০৮.১৯৮৩
|ড. ওয়াটার অ্যালেন জেঙ্কিন্স || ০৯.১১.১৯৫৩ থেকে ০৮.১১.১৯৫৬
ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ১৭.০৮.১৯৮৩ থেকে ১২.০১.১৯৮৬
|-
ড. আবদুল মান্নান ১২.০১.১৯৮৬ থেকে ২২.০৩.১৯৯০
|বিচারপতি মুহম্মদ ইব্রাহিম || ০৯.১১.১৯৫৬ থেকে ২৭.১০.১৯৫৮
অধ্যাপক এম মনিরুজ্জামান মিয়া ২৪.০৩.১৯৯০ থেকে ৩১.১০.১৯৯২
|-
অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ ০১.১১.১৯৯২ থেকে ৩১.০৮.১৯৯৬
|বিচারপতি হামুদুর রহমান || ০৫.১১.১৯৫৮ থেকে ১৪.১২.১৯৬০
অধ্যাপক শহীদউদ্দিন আহমেদ ৩১.০৮.১৯৯৬ থেকে ২৯.০৯.১৯৯৬
|-
অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী ৩০.০৯.১৯৯৬ থেকে ১২.১১.২০০১
|ড. মাহমুদ হোসেন || ১৫.১২.১৯৬০ থেকে ১৯.০২.১৯৬৩
অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী ১২.১১.২০০১ থেকে ৩১.০৭.২০০২
|-
অধ্যাপক ড. এ.এফ.এম ইউসুফ হায়দার ০১.০৮.২০০২ থেকে ২৩.০৯.২০০২
|ড. মোহাম্মদ ওসমান গনি || ২০.০২.১৯৬৩ থেকে ০১.১২.১৯৬৯
অধ্যাপক ড. এস.এম.এ ফায়েজ ২৩.০৯.২০০২ থেকে ১৬.০১.২০০৯
|-
অধ্যাপক ড. আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক ১৭.০১.২০০৯ থেকে ০৫.০৯.২০১৭
|বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী || ০২.১২.১৯৬৯ থেকে ২০.০১.১৯৭২
অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান         ০৬.০৯.২০১৭ থেকে বর্তমান
|-
|ড. মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী || ২১.০১.১৯৭২ থেকে ১২.০৪.১৯৭৩
|-
|ড. আবদুল মতিন চৌধুরী || ১৩.০৪.১৯৭৩ থেকে ২২.০৯.১৯৭৫
|-
|অধ্যাপক মুহম্মদ সামসউল হক || ২৩.০৯.১৯৭৫ থেকে ০১.০২.১৯৭৬
|-
|ড. ফজলুল হালিম চৌধুরী || ০২.০২.১৯৭৬ থেকে ২০.০৩.১৯৮৩
|-
|ড. এ.কে.এম সিদ্দিক || ২১.০৩.১৯৮৩ থেকে ১৬.০৮.১৯৮৩
|-
|ড. মোহাম্মদ শামসুল হক || ১৭.০৮.১৯৮৩ থেকে ১২.০১.১৯৮৬
|-
|ড. আবদুল মান্নান || ১২.০১.১৯৮৬ থেকে ২২.০৩.১৯৯০
|-
|অধ্যাপক এম মনিরুজ্জামান মিয়া || ২৪.০৩.১৯৯০ থেকে ৩১.১০.১৯৯২
|-
|অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ || ০১.১১.১৯৯২ থেকে ৩১.০৮.১৯৯৬
|-
|অধ্যাপক শহীদউদ্দিন আহমেদ || ৩১.০৮.১৯৯৬ থেকে ২৯.০৯.১৯৯৬
|-
|অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী || ৩০.০৯.১৯৯৬ থেকে ১২.১১.২০০১
|-
|অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী || ১২.১১.২০০১ থেকে ৩১.০৭.২০০২
|-
|অধ্যাপক ড. এ.এফ.এম ইউসুফ হায়দার || ০১.০৮.২০০২ থেকে ২৩.০৯.২০০২
|-
|অধ্যাপক ড. এস.এম.এ ফায়েজ || ২৩.০৯.২০০২ থেকে ১৬.০১.২০০৯
|-
|অধ্যাপক ড. আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক || ১৭.০১.২০০৯ থেকে ০৫.০৯.২০১৭
|-
|অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান || ০৬.০৯.২০১৭ থেকে বর্তমান
|}


প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫টি সাধারণ সমাবর্তন এবং বেশ কয়েকটি বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রি প্রদান করা ছাড়াও ৫৩ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিকে সম্মানসূচক ডক্টরেট (ডক্টর অব লজ, ডক্টর অব সায়েন্স, ডক্টর অব লিটারেচার) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। সম্মানসূচক ডিগ্রিপ্রাপ্তদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী এস.এন বোস, অধ্যাপক আবদুস সালাম, অধ্যাপক অমর্ত্য সেন, আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ, অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনুস, জাতিসংঘের মহাসচিব মি. বান কি মুন, ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রনব মুখার্জী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ।  
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫টি সাধারণ সমাবর্তন এবং বেশ কয়েকটি বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রি প্রদান করা ছাড়াও ৫৩ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিকে সম্মানসূচক ডক্টরেট (ডক্টর অব লজ, ডক্টর অব সায়েন্স, ডক্টর অব লিটারেচার) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। সম্মানসূচক ডিগ্রিপ্রাপ্তদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী এস.এন বোস, অধ্যাপক আবদুস সালাম, অধ্যাপক অমর্ত্য সেন, আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ, অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনুস, জাতিসংঘের মহাসচিব মি. বান কি মুন, ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রনব মুখার্জী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ।  
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমস্যা ছিল, বাংলা সরকার আইনসভার অনুমোদন ব্যতীত সরকারি খাত থেকে কোন অর্থ ব্যয় করতে পারে না বিধায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। প্রথম কোর্ট সভায় আচার্য বলেন যে, তাঁর দ্বিতীয় সমস্যা হলো মুসলিম সম্প্রদায়ের উচ্চাশা পূরণ। সব রকম সুযোগসুবিধা দিয়েও প্রশাসন মাত্র অল্পসংখ্যক মুসলিম শিক্ষক সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়, এমনকি মুসলমান ছাত্রের সংখ্যাও তখন দাঁড়ায় মাত্র ৯%। নাথান কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাৎসরিক ব্যয় ১৩ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করলেও বাংলার শিক্ষামন্ত্রী স্যার প্রভাস মিত্র এর থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা কমিয়ে দেন। ভারত সরকার ক্যাপিটেল খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার ফান্ড বাংলা সরকারের কাছে হস্তান্তর করলেও প্রভাস মিত্র ওই ফান্ড প্রাদেশিক ফান্ডে¬র সাথে মিলিয়ে মাত্র নয় লক্ষ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করেন। তাঁর যুক্তি ছিল যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রচুর সরকারি ইমারত ও বিস্তর জায়গা-জমি বাংলা সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে।  
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমস্যা ছিল, বাংলা সরকার আইনসভার অনুমোদন ব্যতীত সরকারি খাত থেকে কোন অর্থ ব্যয় করতে পারে না বিধায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। প্রথম কোর্ট সভায় আচার্য বলেন যে, তাঁর দ্বিতীয় সমস্যা হলো মুসলিম সম্প্রদায়ের উচ্চাশা পূরণ। সব রকম সুযোগসুবিধা দিয়েও প্রশাসন মাত্র অল্পসংখ্যক মুসলিম শিক্ষক সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়, এমনকি মুসলমান ছাত্রের সংখ্যাও তখন দাঁড়ায় মাত্র ৯%। নাথান কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাৎসরিক ব্যয় ১৩ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করলেও বাংলার শিক্ষামন্ত্রী স্যার প্রভাস মিত্র এর থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা কমিয়ে দেন। ভারত সরকার ক্যাপিটেল খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার ফান্ড বাংলা সরকারের কাছে হস্তান্তর করলেও প্রভাস মিত্র ওই ফান্ড প্রাদেশিক ফান্ডে¬র সাথে মিলিয়ে মাত্র নয় লক্ষ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করেন। তাঁর যুক্তি ছিল যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রচুর সরকারি ইমারত ও বিস্তর জায়গা-জমি বাংলা সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে।  
উপাচার্য কোর্টকে জানান যে, শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়কে বাৎসরিক ব্যয় সংকুচিত করে পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে বলেছেন। ইসলামিক স্টাডিজ, ইংরেজি, রসায়ন এবং অর্থনীতি অনুষদের ওপর এ ব্যয় সংকোচনের প্রতিক‚ল প্রভাব পড়বে। মি. হার্টগ জানান যে, অসহযোগিতাকারীরা শিক্ষার্থীদের বেতন ৮ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা করার গুজব রটিয়েছে। এতে ছাত্ররা ১৯২১ সালে প্রথম সেশনে ভর্তিতে নিরুৎসাহিত হয়। এ অবস্থার মোকাবেলার জন্য সরকারি ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। ফলে তখন ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজে শুধু ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের ছাত্রদের শিক্ষাদান অব্যাহত থাকে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্র সমস্যার সমাধান হয়। পি.জে হার্টগ ১৯২২-২৩ সালে বার্ষিক কোর্ট মিটিং-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের কৃতিত্ব নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন। পাঁচ বছরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি মজবুত ভিত রচনা করে হার্টগ উপাচার্যের পদ থেকে অবসর নেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি জর্জ হ্যারি ল্যাংলি, এ.এফ রহমান, ড. আর.সি মজুমদার, ড. মাহমুদ হাসান প্রমুখ এ বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যান।  
উপাচার্য কোর্টকে জানান যে, শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়কে বাৎসরিক ব্যয় সংকুচিত করে পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে বলেছেন। ইসলামিক স্টাডিজ, ইংরেজি, রসায়ন এবং অর্থনীতি অনুষদের ওপর এ ব্যয় সংকোচনের প্রতিক‚ল প্রভাব পড়বে। মি. হার্টগ জানান যে, অসহযোগিতাকারীরা শিক্ষার্থীদের বেতন ৮ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা করার গুজব রটিয়েছে। এতে ছাত্ররা ১৯২১ সালে প্রথম সেশনে ভর্তিতে নিরুৎসাহিত হয়। এ অবস্থার মোকাবেলার জন্য সরকারি ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। ফলে তখন ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজে শুধু ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের ছাত্রদের শিক্ষাদান অব্যাহত থাকে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্র সমস্যার সমাধান হয়। পি.জে হার্টগ ১৯২২-২৩ সালে বার্ষিক কোর্ট মিটিং-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের কৃতিত্ব নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন। পাঁচ বছরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি মজবুত ভিত রচনা করে হার্টগ উপাচার্যের পদ থেকে অবসর নেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি জর্জ হ্যারি ল্যাংলি, এ.এফ রহমান, ড. আর.সি মজুমদার, ড. মাহমুদ হাসান প্রমুখ এ বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যান।  
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ‘ঞৎঁঃয ংযধষষ চৎবাধরষ’ শ্লোগান লেখা একটি মনোগ্রাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তী সময়ে এ মনোগ্রাম তিনবার পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তিত প্রথম মনোগ্রামে আরবিতে ‘ইকরা বিস্মে রাব্বিকাল লাজি খালাক্ক’ (১৯৫২-৭২), দ্বিতীয় মনোগ্রামে ‘শিক্ষাই আলো’ (১৯৭২-৭৩) এবং ‘শিক্ষাই আলো’ লেখা সম্বলিত নতুন ডিজাইনের তৃতীয় মনোগ্রাম অদ্যাবধি ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ‘ঞৎঁঃয ংযধষষ চৎবাধরষ’ শ্লোগান লেখা একটি মনোগ্রাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তী সময়ে এ মনোগ্রাম তিনবার পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তিত প্রথম মনোগ্রামে আরবিতে ‘ইকরা বিস্মে রাব্বিকাল লাজি খালাক্ক’ (১৯৫২-৭২), দ্বিতীয় মনোগ্রামে ‘শিক্ষাই আলো’ (১৯৭২-৭৩) এবং ‘শিক্ষাই আলো’ লেখা সম্বলিত নতুন ডিজাইনের তৃতীয় মনোগ্রাম অদ্যাবধি ব্যবহার করা হচ্ছে।


ছবি ৮: নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন  
[[Image:NababNawabAliChowdhury.jpg|thumb|400px|right|নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন]]
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাÐে পরিবর্তন আসে। ওই বছর পূর্ববাংলার শিক্ষা অর্ডিন্যান্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক-কাম শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে কলেজ অধিভুক্তির এখতিয়ার যুক্ত করলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৫৫টি কলেজের এফিলিয়েশন ও তত্ত¡াবধানের ভার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত হয়।


১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাÐে পরিবর্তন আসে। ওই বছর পূর্ববাংলার শিক্ষা অর্ডিন্যান্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক-কাম শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে কলেজ অধিভুক্তির এখতিয়ার যুক্ত করলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৫৫টি কলেজের এফিলিয়েশন ও তত্ত¡াবধানের ভার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত হয়।
পূর্ব পাকিস্তান সরকার অফিস ও অন্যান্য দাপ্তরিক কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বাড়ি দখল করে নেয়। এতে করে বাসস্থান সমস্যার সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান সরকার এসব সমস্যার ব্যাপারে উদাসীন ছিল, কারণ ছাত্ররাজনীতি বন্ধের লক্ষ্যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শহরের বাইরে স্থানান্তরে সচেষ্ট ছিল। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক ক্ষমতা দখলের আগেই পূর্ব পাকিস্তানে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯২০ সালের আইনে প্রদত্ত একাডেমিক স্বাধীনতা ও ঐতিহ্যের বিপরীতে ১৯৬১ সালের অর্ডিন্যান্স জারি করে। কালাকানুন হিসেবে চিহ্নিত এ অর্ডিন্যান্স বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্যোগেই গড়ে উঠে ১৯৬৮ সালের এগারো দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান। পরবর্তী সামরিক সরকার সারা দেশব্যাপী নির্যাতন ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করলে ১৯৭১ সালে বাঙালির মুক্তির লক্ষ্যে দেশের জনগণের সঙ্গে এক হয়ে ছাত্ররা দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত হয়।  
পূর্ব পাকিস্তান সরকার অফিস ও অন্যান্য দাপ্তরিক কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বাড়ি দখল করে নেয়। এতে করে বাসস্থান সমস্যার সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান সরকার এসব সমস্যার ব্যাপারে উদাসীন ছিল, কারণ ছাত্ররাজনীতি বন্ধের লক্ষ্যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শহরের বাইরে স্থানান্তরে সচেষ্ট ছিল। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক ক্ষমতা দখলের আগেই পূর্ব পাকিস্তানে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯২০ সালের আইনে প্রদত্ত একাডেমিক স্বাধীনতা ও ঐতিহ্যের বিপরীতে ১৯৬১ সালের অর্ডিন্যান্স জারি করে। কালাকানুন হিসেবে চিহ্নিত এ অর্ডিন্যান্স বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্যোগেই গড়ে উঠে ১৯৬৮ সালের এগারো দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান। পরবর্তী সামরিক সরকার সারা দেশব্যাপী নির্যাতন ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করলে ১৯৭১ সালে বাঙালির মুক্তির লক্ষ্যে দেশের জনগণের সঙ্গে এক হয়ে ছাত্ররা দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত হয়।  


ছবি ৯: অপরাজেয় বাংলা
[[Image:UniversityDhakaAparajeyaBangla1.jpg|thumb|400px|left|অপরাজেয় বাংলা]]
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়; মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় নতুন দিগন্তের। শিক্ষক ও ছাত্রদের স্বাধীনভাবে পড়ালেখা ও জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ রদ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ জারি করে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুজ্জীবিত হয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের সংখ্যা অভাবনীয়রূপে বৃদ্ধি পায়। ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ কর্মচারিদের বাসস্থান, শ্রেণীকক্ষ ও গবেষণাগারের জন্য স্থান সংকুলানের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা সম্প্রসারণ করা হয় এবং এজন্য বর্ধিত আকারে অর্থ বরাদ্দও করা হয়।


স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়; মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় নতুন দিগন্তের। শিক্ষক ও ছাত্রদের স্বাধীনভাবে পড়ালেখা ও জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ রদ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ জারি করে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুজ্জীবিত হয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের সংখ্যা অভাবনীয়রূপে বৃদ্ধি পায়। ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ কর্মচারিদের বাসস্থান, শ্রেণীকক্ষ ও গবেষণাগারের জন্য স্থান সংকুলানের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা সম্প্রসারণ করা হয় এবং এজন্য বর্ধিত আকারে অর্থ বরাদ্দও করা হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত কোর্সসমূহ ছিল বি.এ, বি.এসসি (পাস ও অনার্স), এম.এ, এম.এসসি, এল.টি, বি.টি, বি.এল, পিএইচ.ডি, এবং ডিএস.সি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন কোর্স প্রণয়ন, বিভাগ সৃষ্টি ও অনুষদ প্রতিষ্ঠার ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ডিগ্রি ও সমমানের ৫৫টি অধিভুক্ত কলেজের তদারকির দায়িত্বও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত হয়। উল্লেখ্য যে, ১৯৫২ সাল থেকে সাধারণ স্নাতক ডিগ্রির জন্য নির্ধারিত বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে পড়ানোর ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫। ১৯৫৪ সালে <রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়> প্রতিষ্ঠিত হলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৭টি কলেজকে অধিভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬৬ সালে <চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়> প্রতিষ্ঠার পর তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগের কলেজগুলিকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক ঘোষণাবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। তবে ২০১৭ সালে ঢাকা শহরের ঢাকা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ,  সরকারি বাঙলা কলেজ,  কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এই ৭টি সরকারি কলেজকে পুণরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত করা হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত কোর্সসমূহ ছিল বি.এ, বি.এসসি (পাস ও অনার্স), এম.এ, এম.এসসি, এল.টি, বি.টি, বি.এল, পিএইচ.ডি, এবং ডিএস.সি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন কোর্স প্রণয়ন, বিভাগ সৃষ্টি ও অনুষদ প্রতিষ্ঠার ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ডিগ্রি ও সমমানের ৫৫টি অধিভুক্ত কলেজের তদারকির দায়িত্বও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত হয়। উল্লেখ্য যে, ১৯৫২ সাল থেকে সাধারণ স্নাতক ডিগ্রির জন্য নির্ধারিত বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে পড়ানোর ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫। ১৯৫৪ সালে <রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়> প্রতিষ্ঠিত হলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৭টি কলেজকে অধিভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬৬ সালে <চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়> প্রতিষ্ঠার পর তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগের কলেজগুলিকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক ঘোষণাবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। তবে ২০১৭ সালে ঢাকা শহরের ঢাকা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ,  সরকারি বাঙলা কলেজ,  কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এই ৭টি সরকারি কলেজকে পুণরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত করা হয়।


ছবি ১০: কেন্দ্রীয় মসজিদ
[[Image:UniversityDhakaCentralMosque.jpg|thumb|400px|right|কেন্দ্রীয় মসজিদ]]
তবে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৭৪টি অঙ্গীভুত (ঈড়হংঃরঃঁবহঃ) কলেজ ও ইনস্টিটিউট (২২টি সরকারি ও ৫২টি বেসরকারি) রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৬১টিতে ডেন্টাল, নার্সিং, ফিজিওলজি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আর্য়ুবেদিকসহ চিকিৎসা বিজ্ঞান, ৪টি গার্হস্থ্য অর্থনীতি এবং ৯টি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।


তবে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৭৪টি অঙ্গীভুত (ঈড়হংঃরঃঁবহঃ) কলেজ ও ইনস্টিটিউট (২২টি সরকারি ও ৫২টি বেসরকারি) রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৬১টিতে ডেন্টাল, নার্সিং, ফিজিওলজি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আর্য়ুবেদিকসহ চিকিৎসা বিজ্ঞান, ৪টি গার্হস্থ্য অর্থনীতি এবং ৯টি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান চত্বর এবং এর ছাত্র-শিক্ষকরা বাঙালি জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রযাত্রায় বহুলাংশে সাফল্যের দাবিদার। লীলা নাগের ১৯২১ সালে এম.এ কোর্সে যোগদান অথবা ১৯৩৫ সালে করুণাকণা গুপ্তের মহিলা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগকে সেই সময়ে সাহসী পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করা হলেও বর্তমানে ১৫,৩০৫ ছাত্রী ও ৬৬৩ জন নারী শিক্ষকের নিয়োগ আজ আর কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয়। শিক্ষা ও জ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান চত্বর এবং এর ছাত্র-শিক্ষকরা বাঙালি জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রযাত্রায় বহুলাংশে সাফল্যের দাবিদার। লীলা নাগের ১৯২১ সালে এম.এ কোর্সে যোগদান অথবা ১৯৩৫ সালে করুণাকণা গুপ্তের মহিলা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগকে সেই সময়ে সাহসী পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করা হলেও বর্তমানে ১৫,৩০৫ ছাত্রী ও ৬৬৩ জন নারী শিক্ষকের নিয়োগ আজ আর কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয়। শিক্ষা ও জ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
এটি আজ অবধারিত যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতিপয় হিন্দু নেতার ধারণা অনুযায়ী শুধুই মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় নি, বরং দেশ বিভাগের আগে এখানে ৮০% ছাত্র-শিক্ষকই ছিলেন হিন্দু। যেসব মনীষীর অবদানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এ.সি টার্নার, জি.এইচ ল্যাংলী, হরিদাস ভট্টাচার্য, এ.এফ রহমান, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, ফিদা আলী খান, ডবিøউ.এ জেঙ্কিন্স, পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোস (এস.এন বোস), ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মোঃ আবদুল হাই, মুনির চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সিরাজুল হক, জি.সি দেব, জে.সি ঘোষ, এ.বি.এম হাবিবুল্লাহ, মোকাররম হোসেন খন্দকার, কাজী মোতাহার হোসেন, সুশিল কুমার দে (এস.কে দে), এ.কে নাজমুল করিম, আহমদ শরীফ, নীলিমা ইব্রাহীম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, আবদুর রাজ্জাক, এম.আর তরফদার, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রমুখ।  
 
এটি আজ অবধারিত যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতিপয় হিন্দু নেতার ধারণা অনুযায়ী শুধুই মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় নি, বরং দেশ বিভাগের আগে এখানে ৮০% ছাত্র-শিক্ষকই ছিলেন হিন্দু। যেসব মনীষীর অবদানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এ.সি টার্নার, জি.এইচ ল্যাংলী, হরিদাস ভট্টাচার্য, এ.এফ রহমান, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, ফিদা আলী খান, ডবিøউ.এ জেঙ্কিন্স, পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোস (এস.এন বোস), ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মোঃ আবদুল হাই, মুনির চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সিরাজুল হক, জি.সি দেব, জে.সি ঘোষ, এ.বি.এম হাবিবুল্লাহ, মোকাররম হোসেন খন্দকার, কাজী মোতাহার হোসেন, সুশিল কুমার দে (এস.কে দে), এ.কে নাজমুল করিম, আহমদ শরীফ, নীলিমা ইব্রাহীম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, আবদুর রাজ্জাক, এম.আর তরফদার, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা চলে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের সূতিকাগার। এ প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই উৎসারিত হয়েছে পূর্ববাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী। শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি এ বিশ্ববিদ্যালয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম সহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সফল নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় প্রত্যাশা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারি। <মুক্তিযুদ্ধ>কালে পাক-সরকারের বুদ্ধিজীবী নিধন পরিকল্পনার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যাপলয়ের ১৯ জন শিক্ষক। ২৫ মার্চ রাতে আরো শহীদ হন ১০৪ জন ছাত্র, ১ জন কর্মকর্তা ও ২৮ জন কর্মচারি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা চলে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের সূতিকাগার। এ প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই উৎসারিত হয়েছে পূর্ববাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী। শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি এ বিশ্ববিদ্যালয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম সহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সফল নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় প্রত্যাশা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারি। <মুক্তিযুদ্ধ>কালে পাক-সরকারের বুদ্ধিজীবী নিধন পরিকল্পনার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যাপলয়ের ১৯ জন শিক্ষক। ২৫ মার্চ রাতে আরো শহীদ হন ১০৪ জন ছাত্র, ১ জন কর্মকর্তা ও ২৮ জন কর্মচারি।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের পশ্চিম গেটের দোতলার ছাদের উপর প্রথম ‘স্বাধীন বাংলার পতাকা’ উত্তোলন করে। ৭১’-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান বাহিনী <অপারেশন সার্চলাইট> নামে অতর্কিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উপর হামলা করলে অনেকে শহীদ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য উপাচার্য ভবনের সম্মুখস্থ সড়ক দ্বীপে ২৬ মার্চ ১৯৯৪ তারিখে উদ্বোধন করা হয় ‘বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক’। এই স্মৃতিফলকে ১৯ জন শিক্ষক, ১০৪ জন ছাত্র, ১ জন কর্মকর্তা, ২৮ জন কর্মচারিসহ ১৫০ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের পশ্চিম গেটের দোতলার ছাদের উপর প্রথম ‘স্বাধীন বাংলার পতাকা’ উত্তোলন করে। ৭১’-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান বাহিনী <অপারেশন সার্চলাইট> নামে অতর্কিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উপর হামলা করলে অনেকে শহীদ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য উপাচার্য ভবনের সম্মুখস্থ সড়ক দ্বীপে ২৬ মার্চ ১৯৯৪ তারিখে উদ্বোধন করা হয় ‘বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক’। এই স্মৃতিফলকে ১৯ জন শিক্ষক, ১০৪ জন ছাত্র, ১ জন কর্মকর্তা, ২৮ জন কর্মচারিসহ ১৫০ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে।


ছবি ১১: মধুর রেস্তোরাঁ
[[Image:UniversityDhakaMadhusRestaurant.jpg|thumb|400px|left|মধুর রেস্তোরাঁ]]
মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে ‘ডাকসু’ কলাভবনের সামনে ১৯৭২ সালে ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্য স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়। টিএসসি সড়ক দ্বীপে ১৯৮৮ সালে শামীম শিকদার নির্মাণ করেন ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ ভাস্কর্যটি। স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যটি শামীম শিকদার নির্মাণ করেন ১৯৯১ সালে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছাড়াও বায়ান্নর মহান ভাষা দিবস, ছেষট্টির স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান প্রাধান্য পেয়েছে এ ভাস্কর্যে। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে উৎসর্গকৃত সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য (১৯৯৭)।


মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে ‘ডাকসু’ কলাভবনের সামনে ১৯৭২ সালে ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্য স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়। টিএসসি সড়ক দ্বীপে ১৯৮৮ সালে শামীম শিকদার নির্মাণ করেন ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ ভাস্কর্যটি। স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যটি শামীম শিকদার নির্মাণ করেন ১৯৯১ সালে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছাড়াও বায়ান্নর মহান ভাষা দিবস, ছেষট্টির স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান প্রাধান্য পেয়েছে এ ভাস্কর্যে। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে উৎসর্গকৃত সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য (১৯৯৭)।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১১ প্রদান করা হয়। এছাড়াও এ পর্যন্ত ১৯ জন শিক্ষককে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন: ড. মোকাররম হোসেন খন্দকার, রসায়ন বিভাগ (মরণোত্তর), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (১৯৭৭); ড. কাজী মোতাহার হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যা (১৯৭৯); ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাংলা বিভাগ, (মরণোত্তর) শিক্ষা (১৯৮০); শহীদ মুনীর চৌধুরী, বাংলা বিভাগ (মরণোত্তর) সাহিত্য (১৯৮০); ড. সিরাজুল হক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, শিক্ষা (১৯৮৩); অধ্যাপক মফিজ-উদ-দীন আহমেদ, রসায়ন বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যা (১৯৮৬); আমিনুল ইসলাম, চারুকলা অনুষদ, চারুকলা (১৯৮৮); অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (১৯৯০); অধ্যাপক কাজী জাকের হোসেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯২); প্রফেসর মোঃ ইন্নাস আলী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (১৯৯০); শফিউদ্দীন আহমেদ, চারুকলা অনুষদ, চারুকলা (১৯৯৬); অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, ইংরেজি বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯৭); অধ্যাপক এ কিউ এম বজলুল করিম, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯৯); অধ্যাপক এ.এফ সালাহ উদ্দিন আহমদ, ইতিহাস বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯৯), প্রফেসর মোহাম্মদ কিবরিয়া, চারুকলা অনুষদ, চারুকলা (১৯৯৯); সরদার ফজলুল করিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, শিক্ষা (২০০০), ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব (মরনোত্তর), দর্শন বিভাগ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ (২০০৮), অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অর্থনীতি বিভাগ, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ (২০০৮), শিল্পী মু. আবুল হাশেম খান, চারুকলা অনুষদ, সংস্কৃতি (২০১১)।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১১ প্রদান করা হয়। এছাড়াও এ পর্যন্ত ১৯ জন শিক্ষককে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন: ড. মোকাররম হোসেন খন্দকার, রসায়ন বিভাগ (মরণোত্তর), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (১৯৭৭); ড. কাজী মোতাহার হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যা (১৯৭৯); ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাংলা বিভাগ, (মরণোত্তর) শিক্ষা (১৯৮০); শহীদ মুনীর চৌধুরী, বাংলা বিভাগ (মরণোত্তর) সাহিত্য (১৯৮০); ড. সিরাজুল হক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, শিক্ষা (১৯৮৩); অধ্যাপক মফিজ-উদ-দীন আহমেদ, রসায়ন বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যা (১৯৮৬); আমিনুল ইসলাম, চারুকলা অনুষদ, চারুকলা (১৯৮৮); অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (১৯৯০); অধ্যাপক কাজী জাকের হোসেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯২); প্রফেসর মোঃ ইন্নাস আলী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (১৯৯০); শফিউদ্দীন আহমেদ, চারুকলা অনুষদ, চারুকলা (১৯৯৬); অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, ইংরেজি বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯৭); অধ্যাপক এ কিউ এম বজলুল করিম, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯৯); অধ্যাপক এ.এফ সালাহ উদ্দিন আহমদ, ইতিহাস বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯৯), প্রফেসর মোহাম্মদ কিবরিয়া, চারুকলা অনুষদ, চারুকলা (১৯৯৯); সরদার ফজলুল করিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, শিক্ষা (২০০০), ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব (মরনোত্তর), দর্শন বিভাগ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ (২০০৮), অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অর্থনীতি বিভাগ, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ (২০০৮), শিল্পী মু. আবুল হাশেম খান, চারুকলা অনুষদ, সংস্কৃতি (২০১১)।


ছবি ১২: কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
[[Image:UniversityDhakaCentralLibrary.jpg|thumb|400px|right|কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি]]
স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিকায়ন ও শিক্ষা কার্যক্রম স¤প্রসারণের জন্য উন্নতমানের পরিকল্পনা গ্রহণ, বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত বিদ্যার প্রসার ঘটিয়ে দেশের মানব সম্পদের বিকাশের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি নতুন বিভাগ খোলা হয়। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ত্রিশটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রের সাথে এর সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। ঝঅঅজঈ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অতি উন্নত শিক্ষাক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত। বেশ কয়েকটি দেশ থেকে প্রতি বছর ছাত্ররা এখানে ভর্তি হয়। প্রথম থেকেই ছাত্রদের দৈহিক ও মানসিক গঠনের লক্ষ্যে জিমনাস্টিকস ও খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং সকল সুস্থদেহী ছাত্রছাত্রীর জন্য খেলাধুলা ও ব্যায়াম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয় দল বিভিন্ন ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।


স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিকায়ন ও শিক্ষা কার্যক্রম স¤প্রসারণের জন্য উন্নতমানের পরিকল্পনা গ্রহণ, বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত বিদ্যার প্রসার ঘটিয়ে দেশের মানব সম্পদের বিকাশের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি নতুন বিভাগ খোলা হয়। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ত্রিশটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রের সাথে এর সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। ঝঅঅজঈ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অতি উন্নত শিক্ষাক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত। বেশ কয়েকটি দেশ থেকে প্রতি বছর ছাত্ররা এখানে ভর্তি হয়। প্রথম থেকেই ছাত্রদের দৈহিক ও মানসিক গঠনের লক্ষ্যে জিমনাস্টিকস ও খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং সকল সুস্থদেহী ছাত্রছাত্রীর জন্য খেলাধুলা ও ব্যায়াম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয় দল বিভিন্ন ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
১৯২৩ সালে টহরাবৎংরঃু ঙভভরপবৎং ঞৎধরহরহম ঈড়ৎঢ়ং (টঙঞঈ) গঠন করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৪০ সালের ঞবৎৎরঃড়ৎরধষ ঋড়ৎপবং অপঃ অনুযায়ী ১৯৫০ সালে গঠিত হয় টঙঞঈ ব্যাটালিয়ন। ছাত্রদের বিনা বেতনে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ওই সকল প্রশিক্ষণ সমন্বয়ের জন্য ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোর (ইঘঈঈ) গঠন করা হয়। ১৯৬৬ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় রোভার স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন এবং পরবর্তীকালে ছাত্রীদের রেঞ্জার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ছাত্রদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভর্তির ব্যাপারে সহায়তার জন্য ১৯৫২ সালে উধপপধ টহরাবৎংরঃু ঝঃঁফবহঃং ওহভড়ৎসধঃরড়হ ইঁৎবধঁ খোলা হয়। ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি এবং হলগুলিতে পাঠক্রম বহির্ভূত বিদ্যা আহরণের স্থান ও উপকরণের স্বল্পতাহেতু একটি আনুষ্ঠানিক পরামর্শ কেন্দ্র খোলার তাগিদ অনুভূত হয়। সেই লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে একজন পরিচালকের দায়িত্বে ছাত্রবিষয়ক বিভাগ খোলা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬৬ সালে আলাদা ভবন নির্মাণ করা হলে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (ঞঝঈ) সাথে একীভূত হয়। ফলে একই কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চা সম্ভব হয়। এ কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি ক্যাফেটরিয়া, এক হাজার আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম, ২টি সেমিনার কক্ষ, ভিজিটিং শিক্ষকদের জন্য অতিথি ভবন, একটি গ্রন্থাগার, পাঠকক্ষ, চারুকলা ও সঙ্গীতের কক্ষ এবং একটি মঞ্চ। আরও রয়েছে সুইমিং পুল, একটি মনোহারী দোকান, বইয়ের দোকান, ব্যাংক, অন্যান্য সুবিধা ও চিত্তবিনোদনের মাধ্যম। ঢাকা শহরের অন্যতম বৃহদায়তন উক্ত অডিটোরিয়ামে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ বিষয়ক কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।  
১৯২৩ সালে টহরাবৎংরঃু ঙভভরপবৎং ঞৎধরহরহম ঈড়ৎঢ়ং (টঙঞঈ) গঠন করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৪০ সালের ঞবৎৎরঃড়ৎরধষ ঋড়ৎপবং অপঃ অনুযায়ী ১৯৫০ সালে গঠিত হয় টঙঞঈ ব্যাটালিয়ন। ছাত্রদের বিনা বেতনে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ওই সকল প্রশিক্ষণ সমন্বয়ের জন্য ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোর (ইঘঈঈ) গঠন করা হয়। ১৯৬৬ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় রোভার স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন এবং পরবর্তীকালে ছাত্রীদের রেঞ্জার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ছাত্রদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভর্তির ব্যাপারে সহায়তার জন্য ১৯৫২ সালে উধপপধ টহরাবৎংরঃু ঝঃঁফবহঃং ওহভড়ৎসধঃরড়হ ইঁৎবধঁ খোলা হয়। ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি এবং হলগুলিতে পাঠক্রম বহির্ভূত বিদ্যা আহরণের স্থান ও উপকরণের স্বল্পতাহেতু একটি আনুষ্ঠানিক পরামর্শ কেন্দ্র খোলার তাগিদ অনুভূত হয়। সেই লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে একজন পরিচালকের দায়িত্বে ছাত্রবিষয়ক বিভাগ খোলা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬৬ সালে আলাদা ভবন নির্মাণ করা হলে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (ঞঝঈ) সাথে একীভূত হয়। ফলে একই কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চা সম্ভব হয়। এ কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি ক্যাফেটরিয়া, এক হাজার আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম, ২টি সেমিনার কক্ষ, ভিজিটিং শিক্ষকদের জন্য অতিথি ভবন, একটি গ্রন্থাগার, পাঠকক্ষ, চারুকলা ও সঙ্গীতের কক্ষ এবং একটি মঞ্চ। আরও রয়েছে সুইমিং পুল, একটি মনোহারী দোকান, বইয়ের দোকান, ব্যাংক, অন্যান্য সুবিধা ও চিত্তবিনোদনের মাধ্যম। ঢাকা শহরের অন্যতম বৃহদায়তন উক্ত অডিটোরিয়ামে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ বিষয়ক কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।  
নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেটভবন নির্মাণ করা হয় ২০০৭ সালে। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ৪৮০ আসন বিশিষ্ট একটি মনোরম অডিটোরিয়াম, ২০০ আসন বিশিষ্ট একটি সেমিনার কক্ষ এবং লাল, সবুজ এবং নীল তিনটি লবি। এ ভবনেরই নিচের তলায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন অবস্থিত।  এসোসিয়েশনের কার্যালয় ছাড়াও এখানে রয়েছে একটি সেমিনার রুম ও একটি শরীরচর্চা কেন্দ্র। শিক্ষিত যুবকদের চাকরির সংস্থানের জন্য ১৯৩৯-৪০ সালে উযধশধ টহরাবৎংরঃু ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ ইঁৎবধঁ খোলা হয়।  
নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেটভবন নির্মাণ করা হয় ২০০৭ সালে। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ৪৮০ আসন বিশিষ্ট একটি মনোরম অডিটোরিয়াম, ২০০ আসন বিশিষ্ট একটি সেমিনার কক্ষ এবং লাল, সবুজ এবং নীল তিনটি লবি। এ ভবনেরই নিচের তলায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন অবস্থিত।  এসোসিয়েশনের কার্যালয় ছাড়াও এখানে রয়েছে একটি সেমিনার রুম ও একটি শরীরচর্চা কেন্দ্র। শিক্ষিত যুবকদের চাকরির সংস্থানের জন্য ১৯৩৯-৪০ সালে উযধশধ টহরাবৎংরঃু ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ ইঁৎবধঁ খোলা হয়।  
শুরুতে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা ল’ কলেজ হতে প্রাপ্ত ১৮,০০০ বই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়েছিল। এম.ফিল ও পিএইচ.ডি কোর্সের গবেষণা বিষয়ক পাÐুলিপির সংগ্রহ গ্রন্থাগারটি প্রসারের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। লন্ডন-ভিত্তিক ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি বিভিন্ন ধরনের বিরল বই উপহার দিয়ে থাকে। ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংগৃহীত গ্রন্থের সংখ্যা ৭ লক্ষেরও বেশি। এছাড়াও রয়েছে ৩০ হাজার রেয়ার বুক, ৫ হাজার মাইক্রোফিল্ম এবং প্রাচীন পাÐুলিপির সংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার। এছাড়া রয়েছে একটি বিজ্ঞান গ্রন্থাগার, যেটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের একটি শাখা। বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও ফার্মেসি অনুষদের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও গবেষকগণ এটি ব্যবহার করে থাকেন।  
শুরুতে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা ল’ কলেজ হতে প্রাপ্ত ১৮,০০০ বই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়েছিল। এম.ফিল ও পিএইচ.ডি কোর্সের গবেষণা বিষয়ক পাÐুলিপির সংগ্রহ গ্রন্থাগারটি প্রসারের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। লন্ডন-ভিত্তিক ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি বিভিন্ন ধরনের বিরল বই উপহার দিয়ে থাকে। ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংগৃহীত গ্রন্থের সংখ্যা ৭ লক্ষেরও বেশি। এছাড়াও রয়েছে ৩০ হাজার রেয়ার বুক, ৫ হাজার মাইক্রোফিল্ম এবং প্রাচীন পাÐুলিপির সংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার। এছাড়া রয়েছে একটি বিজ্ঞান গ্রন্থাগার, যেটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের একটি শাখা। বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও ফার্মেসি অনুষদের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও গবেষকগণ এটি ব্যবহার করে থাকেন।  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং তাদের পরিবারকে বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। বর্তমানে এখানে ২৮ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। সাধারণ চিকিৎসা ছাড়াও এখানে রয়েছে ডেন্টাল ইউনিট, আই ইউনিট, হোমিও চিকিৎসা ইউনিট, এক্স-রে বিভাগ এবং প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার সুবিধা। ১৯২১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের নতুন নামকরণ করা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে এই মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহিদ হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং তাদের পরিবারকে বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। বর্তমানে এখানে ২৮ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। সাধারণ চিকিৎসা ছাড়াও এখানে রয়েছে ডেন্টাল ইউনিট, আই ইউনিট, হোমিও চিকিৎসা ইউনিট, এক্স-রে বিভাগ এবং প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার সুবিধা। ১৯২১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের নতুন নামকরণ করা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে এই মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহিদ হন।
পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার উৎকর্ষ সাধন এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে সুস্থ-সবল জনগোষ্ঠী সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্য রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ছাড়াও রয়েছে একটি আধুনিক সুইমিং পুল কমপ্লেক্স। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিবছর আন্তঃবিভাগ, আন্তঃহল, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রায় সব ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা করে থাকে।  
পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার উৎকর্ষ সাধন এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে সুস্থ-সবল জনগোষ্ঠী সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্য রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ছাড়াও রয়েছে একটি আধুনিক সুইমিং পুল কমপ্লেক্স। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিবছর আন্তঃবিভাগ, আন্তঃহল, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রায় সব ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা করে থাকে।  
২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূরণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ পূর্তিসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ (যা রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালিত হয়েছে) এবং আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করেছে।  [সাজাহান মিয়া]
২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূরণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ পূর্তিসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ (যা রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালিত হয়েছে) এবং আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করেছে।  [সাজাহান মিয়া]
[[en:University of Dhaka]]
[[en:University of Dhaka]]

১৩:৩০, ১৯ মে ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রাচীনতম, সর্ববৃহৎ এবং উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯২০ সালে ভারতীয় বিধানসভায় গৃহীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইনবলে ১৯২১ সালের ১ জুলাই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকার রমনা এলাকার প্রায় ৬০০ একর জমি নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর প্রাথমিক অবকাঠামোর বড় একটি অংশ গড়ে উঠে ঢাকা কলেজের শিক্ষকমÐলী এবং কলেজ ভবনের (বর্তমান কার্জন হল) উপর ভিত্তি করে। ৩টি অনুষদ (কলা, বিজ্ঞান ও আইন), ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৪৭ জন ছাত্রছাত্রী এবং ৩টি আবাসিক হল নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। কলা অনুষদের অধীনে ছিল ৮টি বিভাগ: সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ, ফার্সি ও উর্দু, দর্শন এবং রাজনৈতিক অর্থনীতি; বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ছিল পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং গণিত; আইন অনুষদের অধীনে ছিল শুধুমাত্র আইন বিভাগ। ৩টি অনুষদের ৮৭৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৮৬ জন ঢাকা (শহীদুল্লাহ) হলে, ৩১৩ জন জগন্নাথ হলে এবং ১৭৮ জন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হয়।

রেজিস্ট্রার বিল্ডিং

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৫৭টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র, ১৯৮৬ জন শিক্ষক, ৪৭,১৯৭ ছাত্রছাত্রী এবং ১৯টি আবাসিক হল ও ৪টি হোস্টেল রয়েছে। বর্তমান শিক্ষকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত; অনেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মোহাম্মদ ইউনুস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পূরস্কার লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন। প্রাথমিক বছরগুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকগণ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শিক্ষার উচ্চমান বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিলেন, যার ফলশ্রæতিতে এ প্রতিষ্ঠান ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।

অনুষদ
নাম প্রতিষ্ঠাকাল বিভাগের সংখ্যা প্রথম ডীন
কলা অনুষদ ১৯২১ ১৭ ড. আর.সি মজুমদার
বিজ্ঞান অনুষদ ১৯২১ অধ্যাপক ডবিøউ.এ জেঙ্কিন্স
আইন অনুষদ ১৯২১ ড. এন.সি সেনগুপ্ত
চিকিৎসা অনুষদ ১৯৪৬ অঙ্গীভুত মেডিকেল কলেজ মেজর ডবিøউ জে. ভারজিন
শিক্ষা অনুষদ ১৯৫৬ অঙ্গীভুত কলেজ ও ইনস্টিটিউট মো. ওসমান গনি
স্নাতকোত্তর চিকিৎসা বিজ্ঞান ও গবেষণা ১৯৭২ অঙ্গীভুত মেডিকেল কলেজ অধ্যাপক ডা. এন. ইসলাম
বিজনেস স্টাডিজ ১৯৭০ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ফারুক
সামাজিক বিজ্ঞান ১৯৭০ ১৬ অধ্যাপক মীর্জা নুরুল হুদা
জীব বিজ্ঞান অনুষদ ১৯৭৪ ১০ অধ্যাপক এ.কে.এম নূরুল ইসলাম
ফার্মেসি অনুষদ ১৯৯৫ অধ্যাপম ড. মুনীরউদ্দিন আহমেদ
চারুকলা অনুষদ ২০০৮ অধ্যাপক আব্দুস শাকুর শাহ্
ইঞ্জিনিয়রিং অ্যান্ড টেকনোলজি ২০০৮ অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক (ভারপ্রাপ্ত)
আর্থ অ্যান্ড এনভারয়নমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ ২০০৮ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাসান (ভারপ্রাপ্ত)
কলা ভবন

অবহেলিত পূর্ববাংলার বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বপর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার মধ্যে উচ্চশিক্ষার বিশিষ্ট আবাসিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য ছিল। দেশ বিভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ববাংলার মাধ্যমিক স্তরের ঊর্ধ্বতন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও অধিভূক্তিকরণ (ধভভরষরধঃরহম) প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এ গুরুদায়িত্বের ফলে পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে, যার ফলে এর জনবল ও সুযোগ-সুবিধার ওপর প্রচÐ চাপ সৃষ্টি হয়। এরপর আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে চাপ কমে নি। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে অভাবনীয়রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন বেশ কিছু স্বনামধন্য শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন ড. গোবিন্দচন্দ্র (জি.সি) দেব (দর্শন বিভাগ), ড. এ.এন.এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখান বিভাগ), সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস বিভাগ), ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি বিভাগ), প্রফেসর এ.এন মুনীর চৌধুরী (বাংলা বিভাগ), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা বিভাগ), ড. আবুল খায়ের (ইতিহাস বিভাগ), ড. সিরাজুল হক খান (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), রাশীদুল হাসান (ইংরেজি বিভাগ), আনোয়ার পাশা (বাংলা বিভাগ), ড. ফজলুর রহমান (মৃত্তিকা বিভাগ), গিয়াসউদ্দিন আহমদ (ইতিহাস বিভাগ), ড. ফয়জুল মহি (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), আব্দুল মুকতাদির (ভূ-তত্ত¡ বিভাগ), শরাফৎ আলী (গণিত বিভাগ), সাদত আলী (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), আতাউর রহমান খান খাদিম (গণিত বিভাগ) এবং অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (পদার্থবিদ্যা বিভাগ)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোহাম্মদ মর্তুজা এবং ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ সাদেকও নির্মমভাবে নিহত হন।

ইনস্টিটিউট
নাম স্থাপিত ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা প্রথম পরিচালক
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৬১ ১৬০০ ড. জি. ডি মরিসন
পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট ১৯৬৪ ২৬৫ ড. কাজী মোতাহার হোসেন
ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট ১৯৬৬ ৬০০ অধ্যাপক এম. শফিউল্লাহ
পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ১৯৬৯ ২৩৮ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমদ
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৭৩ ৯৫৪ অধ্যাপক এম.এ মোমেন
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ১৯৭৪ ১০৭৬ অধ্যাপক এ.এইচ.এম আব্দুল হাই
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট ১৯৯৮ ৩৮০ ড. সুশীল রঞ্জণ হাওলাদার
তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট ২০০১ ১৪৬ অধ্যাপক আহমেদ শফি
শক্তি ইনস্টিটিউট ২০১১ ৮০
ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ২০১২ ২৫০ অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ২০১১ ৬৯০ মারুফা মাহবুব
কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ২০১৬ - ড. জোউ মিংডং
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিচ এন্ড লিবার্টি ২০২০ - অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম

নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ছাত্র-শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিগত নয় দশকে এর গৌরবময় ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে। আজ যাঁরা দেশের শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রশাসন, ক‚টনীতি, জনসংযোগ, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানায় নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁদের প্রায় ৭০% এসেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভ করে।

নাথান কমিটি সদস্যবৃন্দ (১৯১২)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় নি। রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভারত সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হলে বঙ্গভঙ্গ রদের রাজকীয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হন স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ। তিনি এর আগে ১৭ বছর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা রেজিস্ট্রার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে মুসলিম সংখ্যাগুরু পূর্ববাংলা ও <আসাম> প্রদেশের জনগণের মনে এক নতুন আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। কিন্তু মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবল বিরোধিতার মুখে এ বিভক্তি রদ করা হলে মুসলমান সমাজ একে তাদের অগ্রযাত্রায় একটি বড় ধরনের আঘাত বলে মনে করে। প্রতীচ্য শিক্ষায় পঞ্চাশ বছর পশ্চাদ্বর্তী মুসলমানগণ বুঝতে পারে যে, শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ হওয়াটাই সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। ব্রিটিশ কর্তৃক প্রবর্তিত শিক্ষা কার্যক্রম সাদরে গ্রহণের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায় সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে, মুসলিম সম্প্রদায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে থাকে। এ মনোভাব সম্পর্কে অন্তত চারটি কমিশন মন্তব্য করে, যার মধ্যে ছিল ১৮৮২ সালের <হান্টার কমিশন>, ১৯১২ সালের নাথান কমিটি, ১৯১৩ সালের হর্নেল কমিটি এবং ১৯১৭ সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন।

আবাসিক হল/হোস্টেল
হলের নাম স্থাপিত আবাসিক ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা প্রথম প্রাধ্যক্ষ
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ১৯২১ ৭৪৪ স্যার এ.এফ রহমান
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল (ঢাকা হল) ১৯২১ ১২৮৮ প্রফেসর এফ.সি টার্নার
জগন্নাথ হল ১৯২১ ১৫৭০ ড. নরেশ চন্দ্র সেনগুপ্ত
ফজলুল হক (মুসলিম) হল ১৯৪০ ৭০৯ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক (ইকবাল) হল ১৯৫৭ ১২৪৪ ড. মফিজ উদ্দিন আহমেদ
রোকেয়া হল ১৯৬৩ ২২৭৬ মিসেস আখতার ইমাম
সূর্যসেন (মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ) হল ১৯৬৬ ১০৮৬ প্রফেসর এম শফিউল্লাহ
পি.জে হার্টগ (আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস) ইন্টারন্যাশনাল হল ১৯৬৬ ৮৮ মোঃ আফসার উদ্দিন
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ১৯৬৭ ১৪৯১ প্রফেসর মোঃ ইন্নাস আলী
শামসুন নাহার হল ১৯৭১ ১২৪৮ ড. সৈয়দা ফাতেমা সাদেক
কবি জসীম উদদীন হল ১৯৭৬ ৬৩৬ অধ্যাপক কে.এম.এ কামরুদ্দিন
স্যার এ.এফ রহমান হল ১৯৭৬ ৯৯২ ড. এ.এম.এম নূরুল হক ভুইঁয়া
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ১৯৮৮ ১০৮০ প্রফেসর আবু জাফর
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ১৯৮৮ ৭০২ ড. আ.ফ.ম খোদাদাদ খান
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল ১৯৮৯ ৮০৪ ড. হামিদা আখতার বেগম
অমর একুশে হল ২০০১ ৭৬৫ ড. সহিদ আকতার হুসাইন
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ২০০০ ৯২৮ ড. নাসরীন আহমাদ
কবি সুফিয়া কামাল হল ২০১২ ২৪০০ ড. নিলুফার নাহার
বিজয় একাত্তর হল ২০১৩ ১৯২৪ ড. এ জে এম শফিউল আলম ভুইয়া
নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রী নিবাস ১৯৯৪ ১৩০ অধ্যাপক নুরজাহান সরকার
আই.বি.এ হোস্টেল ১৯৮৬ ১৩৮ ড. আনোয়ার হোসেন
ড. কুদরাত-ই-খুদা হোস্টেল ১৯৮৫ ৩০৮ ড. মো. আব্দুল মুত্তালিব
শহীদ এ্যাথলেট সুলতানা কামাল হোস্টেল ২০১৬ ১৩০ ফাতেমাতুজ জোহরা
কার্জন হল

ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ বাংলা বিভক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে মুসলিম সম্প্রদায়ের অসন্তোষের বিষয় উপলব্ধি করে তাদের সান্ত¡না দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তখন মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, নওয়াব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এবং এ.কে ফজলুল হক। সাক্ষাৎকালে তাঁরা বঙ্গভঙ্গ রহিত করায় শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বঙ্গবিভক্তি বিলোপের ক্ষতিপূরণ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তারা ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানান। লর্ড হার্ডিঞ্জ এ প্রস্তাবের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং বিষয়টি তিনি ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নিকট সুপারিশ করবেন বলেও অঙ্গীকার করেন। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রæয়ারিতে প্রকাশিত এক সরকারি ঘোষণায় এ বিষয়টি স্বীকৃত হয়। লর্ড হার্ডিঞ্জ স্বীকার করেন যে, ১৯০৬ সাল থেকে পূর্ববাংলা ও আসাম উন্নতির পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে। তিনি জানান যে, ওই বছর পূর্ববাংলা ও আসামে ১,৬৯৮ জন উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রী ছিল এবং ওই খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১,৫৪,৩৫৮ টাকা। অবস্থার উন্নতির ফলে ওই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৫৬০ ছাত্রছাত্রীতে এবং অর্থব্যয় হয়েছে ৩,৮৩,৬১৯ টাকা। ১৯০৫ থেকে ১৯১০-১১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ৬,৯৯,০৫১ হতে ৯,৩৬,৬৫৩-তে উন্নীত হয় এবং প্রাদেশিক কোষাগার থেকে এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ১১,০৬,৫১০ টাকা থেকে ২২,০৫,৩৩৯ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়। একইভাবে স্থানীয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খরচ ৪৭,৮১,৮৩৩ টাকা থেকে বেড়ে ৭৩,০৫,২৬০ টাকায় দাঁড়ায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সরকারি সিদ্ধান্তে হিন্দু নেতৃবৃন্দ ক্ষুব্ধ হন। কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ১৯১২ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি ভাইসরয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ঢাকায় একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বস্তুত হবে বাংলাকে ‘অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্তির’ শামিল। তাঁরা আরও মত প্রকাশ করেন যে, পূর্ববাংলার মুসলিম সম্প্রদায় বেশির ভাগই কৃষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাদের কোনো উপকার হবে না। লর্ড হার্ডিঞ্জ প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন যে, বাংলাকে পুনরায় বিভক্ত করার কোনো পদক্ষেপ সরকার কর্তৃক গৃহীত হবে না। তিনি আরও বলেন যে, এ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হবে আবাসিক এবং তা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এক পর্যায়ে লর্ড হার্ডিঞ্জ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখার্জীকে জানিয়ে দেন যে, তাঁদের বিরোধিতা সত্তে¡ও ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। উপরিউক্ত প্রতিরোধ ছাড়াও এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আরও কিছু আইনগত ও বস্তুগত জটিলতা ছিল।

ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টি.এস.সি)

লন্ডনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভের পর ভারত সরকার ১৯২১ সালের ৪ এপ্রিল এক পত্রের মাধ্যমে বাংলা সরকারকে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত বিশদ পরিকল্পনা এবং এর আর্থিক সংশ্লেষ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। এতদুদ্দেশ্যে ২৭ মে লন্ডনের ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানকে প্রধান করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি নিয়োগ করা হয়। এ কমিটির সদস্য ছিলেন বাংলার গণশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জি.ডবিøউ কুচলার, কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট ড. রাসবিহারী ঘোষ, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নবাব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার জমিদার ও উকিল আনন্দচন্দ্র রায়, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডবিøউ.এ.টি আর্চবোল্ড, জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ললিতমোহন চট্টোপাধ্যায়, <ঢাকা মাদ্রাসা>র (পরবর্তীকালে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ, বর্তমান <কবি নজরুল সরকারি কলেজ>) সুপারিন্টেন্ডেন্ট শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, আলীগড়ের মোহাম্মদ আলী, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ এইচ.আর জেমস, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডবিøউ পিক এবং কলকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ সতীশচন্দ্র আচার্য। নাথান কমিটি নামে পরিচিত এ কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেন। প্রস্তাবে বলা হয় যে, এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে শিক্ষাদান ও আবাসিক কার্যক্রম সম্বলিত প্রতিষ্ঠান এবং কেবল শহরের কলেজগুলি এর আওতাধীন থাকবে। কমিটি অতি দ্রæত ২৫টি বিশেষ উপকমিটির পরামর্শ গ্রহণ করে এবং ওই বছর শরৎকালের মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত অবকাঠামোর ইমারতের নকশাসহ ৫৩ লাখ টাকা (পরবর্তীকালে গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক ৬৭ লাখ ঢাকায় উন্নীত) মূল ব্যয় এবং ১২ লাখ টাকা বাৎসরিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্তকাজ ও পাঠদানবিষয়ক তথ্যাদি বিশদ আকারে বর্ণিত হয়। কমিটির মতে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, লিডস, লিভারপুল প্রভৃতি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় এ প্রতিষ্ঠানটি হবে একক আবাসিক শিক্ষাক্ষেত্র। <ঢাকা কলেজ>, <জগন্নাথ কলেজ>, মোহামেডান কলেজ, উইমেন্স কলেজসহ সাতটি কলেজ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় থাকবে। কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে ¯œাতকোত্তর শিক্ষাসহ আইন, চিকিৎসা, প্রকৌশল ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের আওতাভুক্ত থাকবে। পরবর্তীকালে এলাহাবাদ, বেনারস, হায়দ্রাবাদ, আলীগড়, লক্ষেèৗ এবং আন্নামালাইতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল অনুসরণ করা হয়।

বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার আওতায় পূর্ববাংলা ও আসাম সরকারের প্রশাসনিক দপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য রমনা এলাকায় ইতোপূর্বে অধিগ্রহণ করা ২৪৩ একর ভূমি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত হয়। কার্জন হল, ঢাকা কলেজ, নতুন সরকারি ভবন, সচিবালয়, সরকারি ছাপাখানা, সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসস্থল ও ছোটখাট ইমারত ওই এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে এ সকল ইমারত, ভূমি ও স্থাপনা বার্ষিক এক হাজার টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ইজারা দেওয়া হয়। নাথান কমিটির উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হলো: ১. বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ও সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক পরিচালিত। ২. এটি হবে আবাসিক ও শিক্ষাদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়। ৩. ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণা এর শিক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে। ১৯১৩ সালে কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প চ‚ড়ান্ত করার পূর্বে জনমত যাচাইয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঐবৎসরই ডিসেম্বর মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রী কর্তৃক প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে সরকারের ওপর প্রচÐ অর্থনৈতিক চাপের কারণে ১১,২৫,০০০ টাকা ব্যয়ের ছোট প্রকল্প বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থা মুসলিম নেতৃত্বের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে এবং বিষয়টি নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী কর্তৃক ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ভারতীয় বিধানসভায় উত্থাপিত হয়। সরকারি মুখপাত্র শঙ্কর নারায়ণ জানান যে, সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর, তবে <কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়> কমিশনের নিকট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প ও পরিচালনা বিষয়ে অভিমত চাওয়া হয়েছে এবং অভিমত পাওয়া গেলেই খসড়া বিল অনুমোদিত হবে।

বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড চেমস্ফোর্ড ১৯১৭ সালের ৬ জানুয়ারি এক অভিষেক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সমস্যা ও চাহিদা নির্ণয়ের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। লিড্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম.ই স্যাডলারের নেতৃত্বে ১৯১৯ সালে গঠিত কমিশনের প্রতিবেদনে ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা স্বীকার করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট ২৭,২৯০ জন ছাত্রের মধ্যে ঢাকা বিভাগ ও ত্রিপুরা জেলা থেকে ৭০৯৭ জন ছাত্র অধ্যয়নরত। সুতরাং ঢাকা ছাত্রসংখ্যার দিক থেকে মধ্যস্থান দখল করে আছে। কমিশন নাথান কমিটির বেশির ভাগ সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করে এবং অতিসত্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য মত দেয়। স্যাডলার কমিশনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশ:

১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তিকরণ ক্ষমতা থাকবে না। এটির কাজ হবে শিক্ষা দান ও গবেষণা। ২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে স্বায়ত্তশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান।

১৯১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিলটি উত্থাপিত হয়। সরকার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কাউন্সিলে উত্থাপিত বিলটি বিবেচনার জন্য পাঠায়। নভেম্বর মাসের ১ তারিখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট বিলটি পরীক্ষা করার জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের একমাত্র বাঙালি মুসলমান সদস্য হিসেবে খান বাহাদুর আহসানউল¬াহ বিলটির পক্ষে জোরালো অভিমত পেশ করেন। সিনেটের অনেক সদস্যের বিরোধিতা সত্তে¡ও ১৭ থেকে ২০ ডিসেম্বর (১৯১৯) আইনের কিছু কিছু অনুচ্ছেদ, ধারা ও উপধারা সংশোধন পরিমার্জন পূর্বক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিলটির খসড়া সিনেটের সম্মতি লাভ করে।

১৯২০ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই বছর ১৮ মার্চ এটি আইনে পরিণত হয়। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট’ গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। এ আইনের বলে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। কমিশনের ১৩টি সুপারিশের প্রায় সবগুলিই ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্টে সন্নিবেশিত হয়। ভারতের গভর্নর জেনারেল ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগকে পাঁচ বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেন। উপাচার্য ডিসেম্বরের ১০ তারিখে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত ২৭ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কোষাধ্যক্ষ (অবৈতনিক) ছিলেন জে.এইচ লিন্ডসে, আইসিএস (১-৭-১৯২১ থেকে ২০-২-১৯২২), প্রথম রেজিস্ট্রার খানবাহাদুর নাজির উদ্দিন আহমদ (১০-৪-১৯২১ থেকে ৩০-৬-১৯৪৪) এবং প্রথম প্রক্টর ফিদা আলী খান (১৯২৫-১৯৩০)। ১৯৭৬ সাল থেকে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর পদ সৃষ্টি করা হয়। প্রথম প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন ড. মফিজুল্লাহ কবির। এ পর্যন্ত ১৯ জন এ পদে দায়িত্বপালন করেন।

উপাচার্য
নাম সময়কাল
স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ ০১.১২.১৯২০ থেকে ৩১.১২.১৯২৫
অধ্যাপক জর্জ হ্যারী ল্যাংলী ০১.০১.১৯২৬ থেকে ৩০.০৬.১৯৩৪
স্যার এ.এফ রহমান ০১.০৭.১৯৩৪ থেকে ৩১.১২.১৯৩৬
ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার ০১.০১.১৯৩৭ থেকে ৩০.০৬.১৯৪২
ড. মাহমুদ হাসান ০১.০৭.১৯৪২ থেকে ২১.১০.১৯৪৮
ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ২২.১০.১৯৪৮ থেকে ০৮.১১.১৯৫৩
ড. ওয়াটার অ্যালেন জেঙ্কিন্স ০৯.১১.১৯৫৩ থেকে ০৮.১১.১৯৫৬
বিচারপতি মুহম্মদ ইব্রাহিম ০৯.১১.১৯৫৬ থেকে ২৭.১০.১৯৫৮
বিচারপতি হামুদুর রহমান ০৫.১১.১৯৫৮ থেকে ১৪.১২.১৯৬০
ড. মাহমুদ হোসেন ১৫.১২.১৯৬০ থেকে ১৯.০২.১৯৬৩
ড. মোহাম্মদ ওসমান গনি ২০.০২.১৯৬৩ থেকে ০১.১২.১৯৬৯
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ০২.১২.১৯৬৯ থেকে ২০.০১.১৯৭২
ড. মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী ২১.০১.১৯৭২ থেকে ১২.০৪.১৯৭৩
ড. আবদুল মতিন চৌধুরী ১৩.০৪.১৯৭৩ থেকে ২২.০৯.১৯৭৫
অধ্যাপক মুহম্মদ সামসউল হক ২৩.০৯.১৯৭৫ থেকে ০১.০২.১৯৭৬
ড. ফজলুল হালিম চৌধুরী ০২.০২.১৯৭৬ থেকে ২০.০৩.১৯৮৩
ড. এ.কে.এম সিদ্দিক ২১.০৩.১৯৮৩ থেকে ১৬.০৮.১৯৮৩
ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ১৭.০৮.১৯৮৩ থেকে ১২.০১.১৯৮৬
ড. আবদুল মান্নান ১২.০১.১৯৮৬ থেকে ২২.০৩.১৯৯০
অধ্যাপক এম মনিরুজ্জামান মিয়া ২৪.০৩.১৯৯০ থেকে ৩১.১০.১৯৯২
অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ ০১.১১.১৯৯২ থেকে ৩১.০৮.১৯৯৬
অধ্যাপক শহীদউদ্দিন আহমেদ ৩১.০৮.১৯৯৬ থেকে ২৯.০৯.১৯৯৬
অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী ৩০.০৯.১৯৯৬ থেকে ১২.১১.২০০১
অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী ১২.১১.২০০১ থেকে ৩১.০৭.২০০২
অধ্যাপক ড. এ.এফ.এম ইউসুফ হায়দার ০১.০৮.২০০২ থেকে ২৩.০৯.২০০২
অধ্যাপক ড. এস.এম.এ ফায়েজ ২৩.০৯.২০০২ থেকে ১৬.০১.২০০৯
অধ্যাপক ড. আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক ১৭.০১.২০০৯ থেকে ০৫.০৯.২০১৭
অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ০৬.০৯.২০১৭ থেকে বর্তমান

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫টি সাধারণ সমাবর্তন এবং বেশ কয়েকটি বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রি প্রদান করা ছাড়াও ৫৩ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিকে সম্মানসূচক ডক্টরেট (ডক্টর অব লজ, ডক্টর অব সায়েন্স, ডক্টর অব লিটারেচার) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। সম্মানসূচক ডিগ্রিপ্রাপ্তদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী এস.এন বোস, অধ্যাপক আবদুস সালাম, অধ্যাপক অমর্ত্য সেন, আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ, অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনুস, জাতিসংঘের মহাসচিব মি. বান কি মুন, ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রনব মুখার্জী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমস্যা ছিল, বাংলা সরকার আইনসভার অনুমোদন ব্যতীত সরকারি খাত থেকে কোন অর্থ ব্যয় করতে পারে না বিধায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। প্রথম কোর্ট সভায় আচার্য বলেন যে, তাঁর দ্বিতীয় সমস্যা হলো মুসলিম সম্প্রদায়ের উচ্চাশা পূরণ। সব রকম সুযোগসুবিধা দিয়েও প্রশাসন মাত্র অল্পসংখ্যক মুসলিম শিক্ষক সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়, এমনকি মুসলমান ছাত্রের সংখ্যাও তখন দাঁড়ায় মাত্র ৯%। নাথান কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাৎসরিক ব্যয় ১৩ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করলেও বাংলার শিক্ষামন্ত্রী স্যার প্রভাস মিত্র এর থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা কমিয়ে দেন। ভারত সরকার ক্যাপিটেল খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার ফান্ড বাংলা সরকারের কাছে হস্তান্তর করলেও প্রভাস মিত্র ওই ফান্ড প্রাদেশিক ফান্ডে¬র সাথে মিলিয়ে মাত্র নয় লক্ষ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করেন। তাঁর যুক্তি ছিল যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রচুর সরকারি ইমারত ও বিস্তর জায়গা-জমি বাংলা সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে।

উপাচার্য কোর্টকে জানান যে, শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়কে বাৎসরিক ব্যয় সংকুচিত করে পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে বলেছেন। ইসলামিক স্টাডিজ, ইংরেজি, রসায়ন এবং অর্থনীতি অনুষদের ওপর এ ব্যয় সংকোচনের প্রতিক‚ল প্রভাব পড়বে। মি. হার্টগ জানান যে, অসহযোগিতাকারীরা শিক্ষার্থীদের বেতন ৮ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা করার গুজব রটিয়েছে। এতে ছাত্ররা ১৯২১ সালে প্রথম সেশনে ভর্তিতে নিরুৎসাহিত হয়। এ অবস্থার মোকাবেলার জন্য সরকারি ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। ফলে তখন ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজে শুধু ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের ছাত্রদের শিক্ষাদান অব্যাহত থাকে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্র সমস্যার সমাধান হয়। পি.জে হার্টগ ১৯২২-২৩ সালে বার্ষিক কোর্ট মিটিং-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের কৃতিত্ব নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন। পাঁচ বছরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি মজবুত ভিত রচনা করে হার্টগ উপাচার্যের পদ থেকে অবসর নেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি জর্জ হ্যারি ল্যাংলি, এ.এফ রহমান, ড. আর.সি মজুমদার, ড. মাহমুদ হাসান প্রমুখ এ বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যান।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ‘ঞৎঁঃয ংযধষষ চৎবাধরষ’ শ্লোগান লেখা একটি মনোগ্রাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তী সময়ে এ মনোগ্রাম তিনবার পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তিত প্রথম মনোগ্রামে আরবিতে ‘ইকরা বিস্মে রাব্বিকাল লাজি খালাক্ক’ (১৯৫২-৭২), দ্বিতীয় মনোগ্রামে ‘শিক্ষাই আলো’ (১৯৭২-৭৩) এবং ‘শিক্ষাই আলো’ লেখা সম্বলিত নতুন ডিজাইনের তৃতীয় মনোগ্রাম অদ্যাবধি ব্যবহার করা হচ্ছে।

নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাÐে পরিবর্তন আসে। ওই বছর পূর্ববাংলার শিক্ষা অর্ডিন্যান্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক-কাম শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে কলেজ অধিভুক্তির এখতিয়ার যুক্ত করলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৫৫টি কলেজের এফিলিয়েশন ও তত্ত¡াবধানের ভার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত হয়।

পূর্ব পাকিস্তান সরকার অফিস ও অন্যান্য দাপ্তরিক কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বাড়ি দখল করে নেয়। এতে করে বাসস্থান সমস্যার সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান সরকার এসব সমস্যার ব্যাপারে উদাসীন ছিল, কারণ ছাত্ররাজনীতি বন্ধের লক্ষ্যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শহরের বাইরে স্থানান্তরে সচেষ্ট ছিল। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক ক্ষমতা দখলের আগেই পূর্ব পাকিস্তানে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯২০ সালের আইনে প্রদত্ত একাডেমিক স্বাধীনতা ও ঐতিহ্যের বিপরীতে ১৯৬১ সালের অর্ডিন্যান্স জারি করে। কালাকানুন হিসেবে চিহ্নিত এ অর্ডিন্যান্স বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্যোগেই গড়ে উঠে ১৯৬৮ সালের এগারো দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান। পরবর্তী সামরিক সরকার সারা দেশব্যাপী নির্যাতন ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করলে ১৯৭১ সালে বাঙালির মুক্তির লক্ষ্যে দেশের জনগণের সঙ্গে এক হয়ে ছাত্ররা দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

অপরাজেয় বাংলা

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়; মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় নতুন দিগন্তের। শিক্ষক ও ছাত্রদের স্বাধীনভাবে পড়ালেখা ও জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ রদ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ জারি করে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুজ্জীবিত হয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের সংখ্যা অভাবনীয়রূপে বৃদ্ধি পায়। ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ কর্মচারিদের বাসস্থান, শ্রেণীকক্ষ ও গবেষণাগারের জন্য স্থান সংকুলানের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা সম্প্রসারণ করা হয় এবং এজন্য বর্ধিত আকারে অর্থ বরাদ্দও করা হয়।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত কোর্সসমূহ ছিল বি.এ, বি.এসসি (পাস ও অনার্স), এম.এ, এম.এসসি, এল.টি, বি.টি, বি.এল, পিএইচ.ডি, এবং ডিএস.সি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন কোর্স প্রণয়ন, বিভাগ সৃষ্টি ও অনুষদ প্রতিষ্ঠার ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ডিগ্রি ও সমমানের ৫৫টি অধিভুক্ত কলেজের তদারকির দায়িত্বও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত হয়। উল্লেখ্য যে, ১৯৫২ সাল থেকে সাধারণ স্নাতক ডিগ্রির জন্য নির্ধারিত বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে পড়ানোর ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫। ১৯৫৪ সালে <রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়> প্রতিষ্ঠিত হলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৭টি কলেজকে অধিভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬৬ সালে <চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়> প্রতিষ্ঠার পর তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগের কলেজগুলিকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক ঘোষণাবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। তবে ২০১৭ সালে ঢাকা শহরের ঢাকা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এই ৭টি সরকারি কলেজকে পুণরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত করা হয়।

কেন্দ্রীয় মসজিদ

তবে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৭৪টি অঙ্গীভুত (ঈড়হংঃরঃঁবহঃ) কলেজ ও ইনস্টিটিউট (২২টি সরকারি ও ৫২টি বেসরকারি) রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৬১টিতে ডেন্টাল, নার্সিং, ফিজিওলজি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আর্য়ুবেদিকসহ চিকিৎসা বিজ্ঞান, ৪টি গার্হস্থ্য অর্থনীতি এবং ৯টি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান চত্বর এবং এর ছাত্র-শিক্ষকরা বাঙালি জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রযাত্রায় বহুলাংশে সাফল্যের দাবিদার। লীলা নাগের ১৯২১ সালে এম.এ কোর্সে যোগদান অথবা ১৯৩৫ সালে করুণাকণা গুপ্তের মহিলা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগকে সেই সময়ে সাহসী পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করা হলেও বর্তমানে ১৫,৩০৫ ছাত্রী ও ৬৬৩ জন নারী শিক্ষকের নিয়োগ আজ আর কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয়। শিক্ষা ও জ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।

এটি আজ অবধারিত যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতিপয় হিন্দু নেতার ধারণা অনুযায়ী শুধুই মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় নি, বরং দেশ বিভাগের আগে এখানে ৮০% ছাত্র-শিক্ষকই ছিলেন হিন্দু। যেসব মনীষীর অবদানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এ.সি টার্নার, জি.এইচ ল্যাংলী, হরিদাস ভট্টাচার্য, এ.এফ রহমান, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, ফিদা আলী খান, ডবিøউ.এ জেঙ্কিন্স, পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোস (এস.এন বোস), ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মোঃ আবদুল হাই, মুনির চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সিরাজুল হক, জি.সি দেব, জে.সি ঘোষ, এ.বি.এম হাবিবুল্লাহ, মোকাররম হোসেন খন্দকার, কাজী মোতাহার হোসেন, সুশিল কুমার দে (এস.কে দে), এ.কে নাজমুল করিম, আহমদ শরীফ, নীলিমা ইব্রাহীম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, আবদুর রাজ্জাক, এম.আর তরফদার, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রমুখ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা চলে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের সূতিকাগার। এ প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই উৎসারিত হয়েছে পূর্ববাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী। শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি এ বিশ্ববিদ্যালয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম সহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সফল নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় প্রত্যাশা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারি। <মুক্তিযুদ্ধ>কালে পাক-সরকারের বুদ্ধিজীবী নিধন পরিকল্পনার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যাপলয়ের ১৯ জন শিক্ষক। ২৫ মার্চ রাতে আরো শহীদ হন ১০৪ জন ছাত্র, ১ জন কর্মকর্তা ও ২৮ জন কর্মচারি।

১৯৭১ সালের ২ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের পশ্চিম গেটের দোতলার ছাদের উপর প্রথম ‘স্বাধীন বাংলার পতাকা’ উত্তোলন করে। ৭১’-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান বাহিনী <অপারেশন সার্চলাইট> নামে অতর্কিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উপর হামলা করলে অনেকে শহীদ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য উপাচার্য ভবনের সম্মুখস্থ সড়ক দ্বীপে ২৬ মার্চ ১৯৯৪ তারিখে উদ্বোধন করা হয় ‘বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক’। এই স্মৃতিফলকে ১৯ জন শিক্ষক, ১০৪ জন ছাত্র, ১ জন কর্মকর্তা, ২৮ জন কর্মচারিসহ ১৫০ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে।

মধুর রেস্তোরাঁ

মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে ‘ডাকসু’ কলাভবনের সামনে ১৯৭২ সালে ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্য স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়। টিএসসি সড়ক দ্বীপে ১৯৮৮ সালে শামীম শিকদার নির্মাণ করেন ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ ভাস্কর্যটি। স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যটি শামীম শিকদার নির্মাণ করেন ১৯৯১ সালে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছাড়াও বায়ান্নর মহান ভাষা দিবস, ছেষট্টির স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান প্রাধান্য পেয়েছে এ ভাস্কর্যে। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে উৎসর্গকৃত সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য (১৯৯৭)।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১১ প্রদান করা হয়। এছাড়াও এ পর্যন্ত ১৯ জন শিক্ষককে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন: ড. মোকাররম হোসেন খন্দকার, রসায়ন বিভাগ (মরণোত্তর), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (১৯৭৭); ড. কাজী মোতাহার হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যা (১৯৭৯); ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাংলা বিভাগ, (মরণোত্তর) শিক্ষা (১৯৮০); শহীদ মুনীর চৌধুরী, বাংলা বিভাগ (মরণোত্তর) সাহিত্য (১৯৮০); ড. সিরাজুল হক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, শিক্ষা (১৯৮৩); অধ্যাপক মফিজ-উদ-দীন আহমেদ, রসায়ন বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যা (১৯৮৬); আমিনুল ইসলাম, চারুকলা অনুষদ, চারুকলা (১৯৮৮); অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (১৯৯০); অধ্যাপক কাজী জাকের হোসেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯২); প্রফেসর মোঃ ইন্নাস আলী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (১৯৯০); শফিউদ্দীন আহমেদ, চারুকলা অনুষদ, চারুকলা (১৯৯৬); অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, ইংরেজি বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯৭); অধ্যাপক এ কিউ এম বজলুল করিম, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯৯); অধ্যাপক এ.এফ সালাহ উদ্দিন আহমদ, ইতিহাস বিভাগ, শিক্ষা (১৯৯৯), প্রফেসর মোহাম্মদ কিবরিয়া, চারুকলা অনুষদ, চারুকলা (১৯৯৯); সরদার ফজলুল করিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, শিক্ষা (২০০০), ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব (মরনোত্তর), দর্শন বিভাগ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ (২০০৮), অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অর্থনীতি বিভাগ, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ (২০০৮), শিল্পী মু. আবুল হাশেম খান, চারুকলা অনুষদ, সংস্কৃতি (২০১১)।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি

স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিকায়ন ও শিক্ষা কার্যক্রম স¤প্রসারণের জন্য উন্নতমানের পরিকল্পনা গ্রহণ, বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত বিদ্যার প্রসার ঘটিয়ে দেশের মানব সম্পদের বিকাশের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি নতুন বিভাগ খোলা হয়। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ত্রিশটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রের সাথে এর সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। ঝঅঅজঈ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অতি উন্নত শিক্ষাক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত। বেশ কয়েকটি দেশ থেকে প্রতি বছর ছাত্ররা এখানে ভর্তি হয়। প্রথম থেকেই ছাত্রদের দৈহিক ও মানসিক গঠনের লক্ষ্যে জিমনাস্টিকস ও খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং সকল সুস্থদেহী ছাত্রছাত্রীর জন্য খেলাধুলা ও ব্যায়াম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয় দল বিভিন্ন ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

১৯২৩ সালে টহরাবৎংরঃু ঙভভরপবৎং ঞৎধরহরহম ঈড়ৎঢ়ং (টঙঞঈ) গঠন করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৪০ সালের ঞবৎৎরঃড়ৎরধষ ঋড়ৎপবং অপঃ অনুযায়ী ১৯৫০ সালে গঠিত হয় টঙঞঈ ব্যাটালিয়ন। ছাত্রদের বিনা বেতনে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ওই সকল প্রশিক্ষণ সমন্বয়ের জন্য ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোর (ইঘঈঈ) গঠন করা হয়। ১৯৬৬ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় রোভার স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন এবং পরবর্তীকালে ছাত্রীদের রেঞ্জার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ছাত্রদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভর্তির ব্যাপারে সহায়তার জন্য ১৯৫২ সালে উধপপধ টহরাবৎংরঃু ঝঃঁফবহঃং ওহভড়ৎসধঃরড়হ ইঁৎবধঁ খোলা হয়। ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি এবং হলগুলিতে পাঠক্রম বহির্ভূত বিদ্যা আহরণের স্থান ও উপকরণের স্বল্পতাহেতু একটি আনুষ্ঠানিক পরামর্শ কেন্দ্র খোলার তাগিদ অনুভূত হয়। সেই লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে একজন পরিচালকের দায়িত্বে ছাত্রবিষয়ক বিভাগ খোলা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬৬ সালে আলাদা ভবন নির্মাণ করা হলে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (ঞঝঈ) সাথে একীভূত হয়। ফলে একই কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চা সম্ভব হয়। এ কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি ক্যাফেটরিয়া, এক হাজার আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম, ২টি সেমিনার কক্ষ, ভিজিটিং শিক্ষকদের জন্য অতিথি ভবন, একটি গ্রন্থাগার, পাঠকক্ষ, চারুকলা ও সঙ্গীতের কক্ষ এবং একটি মঞ্চ। আরও রয়েছে সুইমিং পুল, একটি মনোহারী দোকান, বইয়ের দোকান, ব্যাংক, অন্যান্য সুবিধা ও চিত্তবিনোদনের মাধ্যম। ঢাকা শহরের অন্যতম বৃহদায়তন উক্ত অডিটোরিয়ামে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ বিষয়ক কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।

নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেটভবন নির্মাণ করা হয় ২০০৭ সালে। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ৪৮০ আসন বিশিষ্ট একটি মনোরম অডিটোরিয়াম, ২০০ আসন বিশিষ্ট একটি সেমিনার কক্ষ এবং লাল, সবুজ এবং নীল তিনটি লবি। এ ভবনেরই নিচের তলায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন অবস্থিত। এসোসিয়েশনের কার্যালয় ছাড়াও এখানে রয়েছে একটি সেমিনার রুম ও একটি শরীরচর্চা কেন্দ্র। শিক্ষিত যুবকদের চাকরির সংস্থানের জন্য ১৯৩৯-৪০ সালে উযধশধ টহরাবৎংরঃু ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ ইঁৎবধঁ খোলা হয়।

শুরুতে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা ল’ কলেজ হতে প্রাপ্ত ১৮,০০০ বই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়েছিল। এম.ফিল ও পিএইচ.ডি কোর্সের গবেষণা বিষয়ক পাÐুলিপির সংগ্রহ গ্রন্থাগারটি প্রসারের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। লন্ডন-ভিত্তিক ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি বিভিন্ন ধরনের বিরল বই উপহার দিয়ে থাকে। ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংগৃহীত গ্রন্থের সংখ্যা ৭ লক্ষেরও বেশি। এছাড়াও রয়েছে ৩০ হাজার রেয়ার বুক, ৫ হাজার মাইক্রোফিল্ম এবং প্রাচীন পাÐুলিপির সংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার। এছাড়া রয়েছে একটি বিজ্ঞান গ্রন্থাগার, যেটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের একটি শাখা। বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও ফার্মেসি অনুষদের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও গবেষকগণ এটি ব্যবহার করে থাকেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং তাদের পরিবারকে বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। বর্তমানে এখানে ২৮ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। সাধারণ চিকিৎসা ছাড়াও এখানে রয়েছে ডেন্টাল ইউনিট, আই ইউনিট, হোমিও চিকিৎসা ইউনিট, এক্স-রে বিভাগ এবং প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার সুবিধা। ১৯২১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের নতুন নামকরণ করা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে এই মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহিদ হন।

পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার উৎকর্ষ সাধন এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে সুস্থ-সবল জনগোষ্ঠী সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্য রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ছাড়াও রয়েছে একটি আধুনিক সুইমিং পুল কমপ্লেক্স। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিবছর আন্তঃবিভাগ, আন্তঃহল, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রায় সব ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা করে থাকে।

২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূরণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ পূর্তিসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ (যা রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালিত হয়েছে) এবং আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করেছে। [সাজাহান মিয়া]