ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং
ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং (DNA Fingerprinting) ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে সনাক্ত করার বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিকে বলা হয় ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং। এটি একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে ডিএনএ-এর অভ্যন্তরে অবস্থিত মাইক্রোস্যাটেলাইট অঞ্চলকে তুলনা করে ব্যক্তিকে সনাক্ত অথবা একাধিক ব্যক্তির মাঝে মিল বা অমিল খুঁজে বের করা হয়। প্রতিটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপ যেমন নির্দিষ্ট, অর্থাৎ অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে মিল নেই, তেমনিভাবে প্রতিটি মানুষের ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিও হবে অনন্য। কেউ ইচ্ছা করলে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে তার ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টে কিছুটা হেরফের করাতে পারে। যেহেতু মানুষের দেহের প্রতিটি কোষের অভ্যন্তরে অবস্থিত যে ডিএনএ তা ইউনিক অর্থাৎ এক এবং অভিন্ন সেহেতু চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রচলিত প্রয়োগের মাধ্যমে ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট বদলে ফেলা সম্ভব নয়। শরীরের যেকোনো ধরনের নমুনা, যেমন, রক্ত, লালা, চুল, দাঁত, হাড়, মাংসপেশী, বীর্য ইত্যাদি কোথাও পাওয়া গেলে তা থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে ডিএনএ চিত্র তৈরি করা সম্ভব। সা¤প্রতিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রাপ্ত দুইজন মানুষের ডিএনএ চিত্র (যমজ ছাড়া) এক হওয়ার সম্ভাবনা প্রতি একলক্ষ কোটিতে একজন, যা পৃথিবীর জনসংখ্যার চেয়েও প্রায় তিনশ গুণ বেশি। যদিও বিজ্ঞানভিত্তিক ডিএনএ পরীক্ষাকে সর্বপ্রথম ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং বলা হয়েছিল পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে এটি জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টিং, ডিএনএ টাইপিং, ডিএনএ টেস্টিং ইত্যাদি নামে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমান বিশ্বে এটি এখন ডিএনএ প্রোফাইলিং নামে সর্বাধিক পরিচিত।
অপরাধ বিজ্ঞান ও অপরাধমূলক বিচারব্যবস্থায় ডিএনএ প্রোফাইলিং প্রযুক্তি একটি যুগান্তকারী সংযোজন, যা বিচারব্যবস্থাকে একটি নতুন যুগে উত্তরণ করেছে। বিগত শতাব্দীতে বোধ হয় এটি জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, যা কালক্রমে বিচারব্যবস্থা ও অপরাধ তদন্তের শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিগণিত হয়েছে। এই প্রযুক্তির সাম্প্রতিক অগ্রযাত্রা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এমন সব অপরাধের কারণ অনুসন্ধানে সমর্থ করেছে যা অতীতে সমাধানযোগ্য ছিল না। হত্যা বা ধর্ষণের মতো সহিংস অপরাধ দমনে, পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব নির্ণয়ে অথবা মৃত ব্যক্তির পরিচয় উদ্ধারে এই প্রযুক্তি অব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। দোষী ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পারা অথবা মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্তকে অব্যাহতি দিতে পারার সক্ষমতার সুবাদে এই প্রযুক্তি একটি মামলার প্রাথমিক পর্যায়েই অথবা বিচারকার্য্যের চলমান প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে, এমনকি বিচারোত্তর সত্য উৎঘাটনে অত্যন্ত কার্য্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিচারকার্য্যে ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছিল ১৯৮৭ সালে যুক্তরাজ্যে। এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী অপরাধ তদন্তে এই ডিএনএ প্রযুক্তি অপরাধতদন্ত ও বিচারব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের প্রায় একশরও বেশি দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থায় ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশ্বায়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে ২০০৬ সালে। [শরীফ আখতারুজ্জামান]
আরো দেখুন ডিএনএ।