ডার্টি ডজন
ডার্টি ডজন (Dirty Dozen) পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী পৃথিবীর বারোটি মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের সাধারণ দলগত নাম। এ ১২টি রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে আটটি কীটনাশক: অলড্রিন (aldrin), ডায়েলড্রিন (dieldrin), ক্লোরডেন (chlordane), এনড্রিন (endrin), হেপ্টাক্লোর (heptachlor), ডিডিটি (DDT), মিরেক্স (mirex) এবং টক্সাফিন (toxaphene); দুটি শিল্পজাত রাসায়নিক দ্রব্য: পিসিবি (PCBs) এবং হেক্সাক্লোরোবেনজিন (hexachlorobenzene); এবং অন্য দুটি ডাইওক্সিন (dioxin) ও ফিউরান (furan), কল-কারখানায় উৎপন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত উপজাত। খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে এ মারাত্মক বিষগুলি সারা পৃথিবীর প্রায় সব পরিবেশের সব ধরনের জীবজন্তুর ওপর তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটায়। এখন জানা গেছে মানুষের ক্ষেত্রেও এসব বিষাক্ত পদার্থ ত্রুটিপূর্ণ শিশুর জন্ম, ক্যান্সার উৎপাদন এবং ভ্রূণ বিকাশের নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে জড়িত।
মাছ ও অন্যান্য জলজ জীবের ওপর অতিমাত্রায় বিষাক্ত হওয়ার কারণে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) ১৯৬২ সালে এনড্রিনের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ১৯৯০-এর দশক থেকে ডিডিটি ব্যবহারের ওপরও বাধানিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে ১৯৭২ সাল থেকে। অলড্রিন, ডায়েলড্রিন, ক্লোরডেন এবং হেপ্টাক্লোর ক্লোরিনসমৃদ্ধ জৈব সাইক্লোডাইন কীটনাশক (cyclodiene insecticides)। ফসলের ক্ষেতে মাটিতে বসবাসকারী ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনে দীর্ঘদিন বাংলাদেশে এদের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে। সম্প্রতি এদের দীর্ঘস্থায়ী বিষাক্ত অবশেষ (toxic residue) সম্বন্ধে জ্ঞাত হওয়ার পর এদের ব্যবহার এদেশে সীমিত করা হয়েছে। জৈব ফসফরাসযুক্ত কীটনাশক টক্সাফিন বাংলাদেশে বিগত দশকগুলিতে ব্যবহার করা হলেও এখন আর এর ব্যবহার নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সারা পৃথিবীতেই ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনে ডিডিটি-এর ব্যবহার ছিল ব্যাপক। বিশেষ করে ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহক মশা এবং অন্য আরও কয়েকটি রোগজীবাণুবাহক কীটপতঙ্গ দমনে এ কীটনাশকের অবদান এবং ভূমিকা অসামান্য। কিন্তু এর তীব্র বিষাক্ততা এবং পরিবেশে দীর্ঘদিন এর বিষাক্ত অবশেষ থেকে যাওয়ার কারণে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ডিডিটি-এর ব্যবহার এখন নিষিদ্ধ।
ডিসেম্বর ২০০০-এ জোহানেসবার্গে বাংলাদেশসহ ১২২টি দেশের প্রতিনিধিদের পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য এক সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে পরিবেশদূষক উল্লিখিত বারোটি বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য বা ‘ডার্টি ডজন’-এর ব্যবহার সীমিত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভবিষ্যতে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজনে অন্য আরও রাসায়নিক দ্রব্য এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে বলেও মত প্রকাশ করা হয়। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের সুবিধা অনুযায়ী বাধানিষেধের সীমারেখা নিজেরাই ধার্য করতে পারবে। গত ২৩ মে, ২০০১-এ স্টকহোমে ৯০টি দেশের কর্মকর্তারা সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন রোগ ও মৃত্যুর জন্য ‘ডার্টি ডজন’-কে দায়ী করে এর ব্যবহার বন্ধ বা সীমিত করার ব্যাপারে জাতিসংঘের একটি যুগান্তকারী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। [এস.এম হুমায়ুন কবির]
আরও দেখুন কীটনাশক।