ডাফরিন রিপোর্ট
ডাফরিন রিপোর্ট উনিশ শতকের শেষ নাগাদ বাংলার নিম্নশ্রেণীর অবস্থা বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। সরকারি শিরোনাম: Report on he Conditions of Lower Classes of Population in Bengal। গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় মার্কুইজ অব ডাফরিনের (১৮৮৪-৮৮) নামানুসারে প্রতিবেদনটির নামকরণ হয় ডাফরিন রিপোর্ট।
অনুসন্ধান করার জন্য সমগ্র বাংলার প্রায় ১০০টি গ্রাম নিবিড়ভাবে জরিপ করা হয়। গ্রাম্য জনগণকে কৃষক, কারিগর, শ্রমিক ও ভিক্ষুক এ চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করার মাধ্যমে অনুসন্ধানের কাজ শুরু হয়। প্রত্যেক ক্যাটাগরির অবদমিত শ্রেণীর ওপর তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ জরিপে উদঘাটিত হয় যে, গ্রাম বাংলায় গড়ে শতকরা ২৬ ভাগ পরিবার হয় ভূমিহীন অথবা প্রান্তিক চাষি এবং তারা দিনমজুরির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, চরম দারিদ্রে্যর সর্বোচ্চ অনুপাত পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহে, বিশেষত মেদিনীপুর (৪৩%), মালদহ (৪২%) এবং মুর্শিদাবাদ (৩৭%) এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা চট্টগ্রামে (২৩%)। সর্বনিম্ন অনুপাত ছিল বাংলার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় জেলাসমূহে: ময়মনসিংহ (৪%), ত্রিপুরা (৬%) ও নোয়াখালী (৬%)।
রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিবেচনা করে ডাফরিন রিপোর্ট গোপন রাখা হয়। এ রিপোর্ট প্রমাণ করে যে, ব্রিটিশের শাসনামলে কৃষিক্ষেত্রে বাংলা উন্নতিলাভ করেছিল বলে যে দাবি করা হয় তা ভিত্তিহীন। এ রিপোর্ট প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, কৃষিজীবী শ্রেণীর জনগণের উপর সংগৃহীত সরকারি পরিসংখ্যান ব্যাপকভাবে ত্রুটিপূর্ণ। ডাফনি রিপোর্টও ছিল যথেষ্ট ত্রটিপূর্ণ। তবুও এটিকে ভূ-সম্পত্তি সংক্রান্ত গবেষণায় অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক উৎস বলে গণ্য করা হয়। [সিরাজুল ইসলাম]