ডকইয়ার্ড

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৪৯, ২১ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (fix: image tag)

ডকইয়ার্ড  বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক কারখানাসহ জাহাজ নির্মাণ এবং ডকিং ব্যবস্থার স্থান। প্রাচীন বাংলায় নৌযান নির্মাণের অনেক তথ্য প্রমাণ ও নিদর্শন পাওয়া যায়। বর্তমান বাংলাদেশে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা এবং বরিশাল অঞ্চলে প্রায় শতাধিক ডকইয়ার্ড রয়েছে।

ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত বেশিরভাগ ডকইয়ার্ডই পুরাতন (বাণিজ্যিক জাহাজগুলির) প্লেট এবং অন্যান্য খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে। এসব পুরাতন প্লেট ও ব্যবহূত যন্ত্রপাতি ভাটিয়ারী জাহাজভাঙ্গা শিল্প থেকে সংগৃহীত হয়। ডকইয়ার্ড ও ড্রাইডকগুলি বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)-এর তত্ত্বাবধায়নে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ খাতকে প্রয়োজনীয় সেবা সমর্থন দিয়ে থাকে। ১৯৯৬ সালে বিআইডব্লিউটিসি-এর ২৪টি যাত্রীবাহী স্টিমার, ৩৩টি ট্যাঙ্কার এবং ২২৭টি অন্যান্য নৌযান ছিল। সে সময়ে দেশে ছিল বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন-এর মালিকানায় ১৮টি জাহাজ, ১,৭০৫টি বেসরকারি মালবাহী জাহাজ, ১,৭৫৯টি বেসরকারি যাত্রীবাহী জাহাজ এবং ৯,০৬,০০০ দেশি জলযান। যখনই ফরমান হতো ডকইয়ার্ডগুলি সকল প্রকার নৌযানকে কার্যোপযোগী রাখার রক্ষণাবেক্ষণ সেবা দান করত। ইতোমধ্যে বেশকিছু জাহাজ নির্মাণ কারখানা যেমন, ‘আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড শ্লিপওয়ে লিমিটেড ঢাকা’ এবং ‘ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড চট্টগ্রাম’ রপ্তানিযোগ্য জাহাজ নির্মাণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। এই দুটি জাহাজ নিমট্টাণ শিল্পসহ প্রায় ৯টি স্থানীয় ডকইয়ার্ড ১০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার নতুন জাহাজ নির্মাণে সক্ষম। হাইস্পিড শিপইয়ার্ড বিশ শতকের আশির দশকে পাঁচটি গভীর সমূদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার তৈরি করেছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থার জন্য ৮টি মালবাহী জাহাজ নির্মাণ করেছে। ডকইয়ার্ডটি বাংলাদেশ রুরাল পাওয়ার ডেভলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের জন্য প্রথম বার্জ মাউন্টেড পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করেছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তেলবাহী জাহাজ, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য পেট্রোল বোট, সেনাবাহিনীর জন্য ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট নির্মাণ করেছে। স্থানীয় ডকইয়ার্ডগুলি ২০০০ সাল থেকেই রপ্তানিযোগ্য জাহাজ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। ২০০৮ সালে আনন্দ শিপইয়ার্ড তাদের ডকইয়ার্ডে নির্মিত ৭০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যমানের ২৮৫০ মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতার একটি ছোট মালবাহী জাহাজ ডেনিশ কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছে।

স্বাধীনতার পর শুধুমাত্র চট্টগ্রাম ড্রাইডকেরই উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম ড্রাইডকই কিছুটা আধুনিক ও উন্নত যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ যা ২০,০০০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ মেরামত করতে সক্ষম। এই ড্রাইডকটি দেশি ও বিদেশি জাহাজ মেরামত করে মিলিয়ন ডলার আয় করছে। কিন্তু  অন্য দুটি সরকারি ডকইয়ার্ড ‘ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ লিমিটেড’ এবং ‘খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড’ বিভিন্ন কারণে লোকসান দিতে শুরু করে।

ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ, এ অঞ্চলের সবচেয়ে পুরাতন ডকইয়ার্ড। ১৯২৬ সাল থেকে এটি জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত কাজে নিয়োজিত আছে। বর্তমানে এ ডকইয়ার্ডটি ৫০০০ টন ধারণ ক্ষমতার বিভিন্ন প্রকারের জাহাজ নির্মাণ করছে। ১৯৮৯ সালে এই ডকইয়ার্ডকে আধুনিকায়নের আওতায় আনা হয়েছিল এবং বিআইডব্লিউটিসি এর জন্য ডেনিশ অর্থনৈতিক সহযোগিতায় বেশক’টি রোঁ-রোঁ ফেরি তৈরি করেছিল। যদিও এরপর ডকইয়ার্ডটি আস্তে আস্তে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ে। ফলে ২০০২ সালে এই ডকইয়ার্ডকে দুর্বল শিল্প কলকারখানা হিসেবে ঘোষণা করে এর উৎপাদন কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

# #চিত্র:ডকইয়ার্ড html 88407781.png

  1.  #ডকইয়ার্ড

২০০৬ সালে ডকইয়ার্ডটি নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে নৌবাহিনী ডকইয়ার্ডটি পুনরায় আধুনিকায়নের কাজে হাত দিয়েছে। খুলনা শিপইয়ার্ড হচ্ছে আরেকটি সরকারি জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। এটি প্রায় ৪৫ বছরের পুরাতন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দায়িত্ব নেওয়ার পর খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রায় ৫০০০ টন পর্যন্ত আধুনিক মানের গান বোট, মালবাহী জাহাজ, ভাসমান ক্রেন, ভাসমান বার্জ, টাগ, অয়েল ট্যাংকার, পন্টুন, পেট্রোল ক্যাফ্ট, ট্রলার ও লঞ্চ প্রভৃতি তৈরি হচ্ছে। এখানকার বহুমূখী ডকিং সুবিধা ব্যবহার করে একসাথে প্রায় ১৬টি মাঝারি আকারের জাহাজ নির্মাণ কিংবা মেরামতের কাজ করা যায়।

১৯৫৭ সাল থেকে খুলনা শিপইয়ার্ড ৩৫০টি নতুন জাহাজ নির্মাণ করেছে এবং প্রায় ২৩০০-এর অধিক জাহাজ পুণনির্মাণ/মেরামতের কাজ করেছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের একমাত্র ভাসমান ডক বিএনএফডি সুন্দরবন-এর স্বত্বাধিকারী। এতে ৩০০০ টন ধারণ ক্ষমতার যেকোন জাহাজ মেরামত বা তৈরি করা যায়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৮০টি যুদ্ধ জাহাজের মেরামতের কাজে এটি ব্যবহূত হচ্ছে।

বর্তমানে নিজস্ব ডকইয়ার্ডে তৈরি প্রায় ২০০০ কোস্টাল ট্যাংকার, কার্গো, বহুমুখী ও সমূদ্রগামী জাহাজ বিভিন্ন সমূদ্র তীরবর্তী এলাকায় চলাচল করছে। যার মধ্যে কেবলমাত্র ৪০০টি এমএমডি (মার্কেন্টাই মেরিন ডিপার্টমেন্ট)-এর রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত। এছাড়া বাংলাদেশের ডকইয়ার্ডে তৈরি আরো ৮০০০ বিভিন্ন ধরণের কার্গো, যাত্রীবাহী, তেলবাহী ও বালুবাহী জাহাজ আমাদের অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচল করছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০০০ ডিপার্টমেন্ট এবং শিপিং-এ রেজিস্ট্রিকৃত। স্টিলের তৈরি জাহাজের পাশাপাশি প্রায় ৪০,০০০ কাঠের তৈরি যান্ত্রিক নৌকা নদীগুলিতে চলাচল করছে। প্রায় বিশ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত। অন্যদিকে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) ২৪টি যাত্রীবাহী স্টিমার, ৩৩টি ফেরি, ২০টি কোস্টার, ৭টি বার্জ, ১০টি সি-ট্রাক, ১২টি তেলবাহী ট্যাংকার ও ২২৭টি অন্যান্য নৌযান ছিল। এরই সাথে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) ১৫টি সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে।

বাংলাদেশের ডকইয়ার্ডগুলিতে তৈরি জাহাজগুলি হচ্ছে: বহুমুখী জাহাজ, কোস্টার, মালবাহী জাহাজ, যাত্রীবাহী জাহাজ, খননকারী জাহাজ, ট্যাংকার, ল্যান্ডিং ক্রফ্ট, টাগ, কার্গো, সরবরাহকারী বার্জ, রোঁ-রোঁ ফেরি, ভাসমান হাসপাতাল, ডেক লোডিং বার্জ, প্রমোদ তরী, ক্রেন বোট, স্পিড বোট, দ্বিতল যাত্রীবাহী জাহাজ, সৈন্যবাহী জাহাজ, সার্ভে জাহাজ, পন্টুন, দূষণরোধকারী জাহাজ, গভীর সমূদ্রগামী ট্রলার, ফাস্ট পেট্রোল বোট, কনটেইনার ভেসেল, পাইলট বোট, ওয়াটার ট্যাক্সি, ক্যাটামেরান ভ্যাসেল, বালুবাহী জাহাজ, ডুবন্ত বার্জ প্রভৃতি।   [খন্দকার আকতার হোসেন]