টেরাটোজেনেসিস

টেরাটোজেনেসিস (Teratogenesis) টেরাটো একটি গ্রীক শব্দ যার অর্থ হলো দানব বা কুৎসিত প্রাণী। যে ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ার জন্য মাতৃগর্ভে বিকাশমান একটি ভ্রূণ বা ফিটাস কার্যকরী এবং কাঠামোগতভাবে পরিবর্তিত হয়ে একটি অঙ্গ বিকৃতি, অঙ্গহানি এবং বিকলাঙ্গ পঙ্গু শিশু রূপে প্রসব লাভ করে তাকে টেরাটোজেনেসিস বলা হয়। এক কথায়, টেরাটোজেনেসিস হলো প্রাণীর ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি। ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটিগুলি প্রধানত দুইটি মেকানিজমের মাধ্যমে প্ররোচিত হয় বলে মনে করা হয়। একটি হলো ভ্রূণের জেনেটিক প্রোগ্রামিংয়ের ত্রুটির জন্য। অপরটি হলো ভ্রূণ বিকাশের সময় পরিবেশের বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান, সংক্রমণ, পারমাণবিক রেডিয়েশনএবং অস্বাভাবিক মাতৃ-বিপাকীয় অবস্থা ইত্যাদির সাথে মিথোস্ক্রিয়ার ফলে।

যে সব রাসায়নিক দ্রব্য প্রসব-পূর্ব এই টেরাটোজেনেসিস প্রক্রিয়াটি ঘটায় তাদেরকে টেরাটোজেন বলা হয়। পরিচিত রাসায়নিক টেরাটোজেন হলো থ্যালিডোমাইড, পারদ, অ্যালকোহল, সীসা, পলিক্লোরিনেটেড বাইফেনলস এবং টেট্রাক্লোরো-ডাইবেনজো-ডাইঅক্সিন, চাষাবাদে ব্যবহৃত বিভিন্ন পেস্টিসাইড ইত্যাদি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে টেরাটোজেনেসিসের কারণে জীবের শারীর বৃত্তীয় বিকাশের অস্বাভাবিকতার কারণ, প্রক্রিয়াএবং নির্দশনগুলোর অধ্যয়নকে টেরাটোলজি বলা হয়।

জন্মগত ত্রটি ছাড়াও বুদ্ধি প্রতিবন্ধকতা, বিলম্বিত মানসিক বিকাশ বা কোনো গঠনগত ত্রুটি ছাড়াই অন্যান্য জন্মগত ব্যাধি ও এসব শিশুদের হতে পারে। ভ্রূণের বিকাশের সময় কোনো স্তরে টেরাটোজেনটি প্রভাব বিস্তার করেছিল আসলে তার উপরই ভ্রূণের উপর এদের ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করে। জন্মগত ত্রুটির সঠিক কারণ এখনো পরিস্কার করে জানা যায়নি। গর্ভের সন্তানের ক্ষতি করতে পারে এমন রাসায়নিক ব্যবহার করা উচিত নয়- এর মধ্যে রয়েছ কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, ইঁদুরনাশক বা পরিষ্কারক দ্রব্য। গর্ভাবস্থায় ধূমপান, মাদকদ্রব্য গ্রহণ বা অ্যালকোহল পান করা উচিত নয়- এই টেরাটোজেনগুলি ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি এবং অন্যান্য জীবন-হুমকিপূর্ণ অবস্থার ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। [মো. শাহাদাত হোসেন]