টাইফয়েড

টাইফয়েড  Salmonella typhi জীবাণুঘটিত একটি সংক্রামক ব্যাধি। উষ্ণমন্ডলীয় দেশগুলিতে টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি। কিন্তু বাহকের সাহায্যে এটি যে কোনো জায়গায় ছড়াতে পারে। বর্ষাকালেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব সর্বাধিক। তবে বছরের অন্যান্য সময়েও এ রোগ হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে এবং যেসব অঞ্চলে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল নয়, অধিক জনবাহুল্য, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং নিরাপদ পানি সরবরাহের অভাব সেসব অঞ্চলেই এর প্রাদুর্ভাব বেশি। খারাপ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এ রোগটি প্রসার ঘটার ক্ষেত্রে একটি প্রধান ভূমিকা রাখে।

দূষিত খাদ্য এবং পানীয় গ্রহণের ফলে রোগটি ঘটে। বাসি খাদ্য এবং অপরিষ্কার পানি যা টাইফয়েড ব্যাসিলাসসমূহ দ্বারা দূষিত হয়েছে এসব থেকেই সাধারণত রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীর মল এ রোগজীবাণুর প্রধান উৎস।

টাইফয়েড শুরু হয় অলক্ষ্যে। জ্বর, মাথা ব্যথা, কাশি, প্লীহার বৃদ্ধি এবং রক্তের বিভিন্ন উপাদানের স্বল্পতা এ রোগের লক্ষণ। দেহের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। টাইফয়েড জ্বরের সুপ্তাবস্থা ১০-১৪ দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। এরপর হঠাৎ করে জ্বর ছেড়ে গিয়ে রোগী সেরে ওঠে। প্রায়ক্ষেত্রেই রোগীর দেহে নানারকমের জটিলতা দেখা দেয় যাতে রোগী মারা যেতে পারে। প্রধান জটিলতা হচ্ছে ক্ষুদ্রান্ত্রের অভ্যন্তরে ছিদ্র হয়ে পেরিটোনিয়ামের প্রদাহ (যা সাধারণত মৃত্যুর কারণ হতে পারে)। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর উদরাময় এবং বমি হয়। তবে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধার সাহায্যে টাইফয়েড সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য এবং উন্নত জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাহায্যে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য। টাইফয়েডের প্রতিষেধক টিকা এ রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে শহরাঞ্চল অপেক্ষা টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব বেশি। খারাপ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এর অন্যতম কারণ। তবে শহরাঞ্চলে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ নোংরা এলাকায় এবং বস্তি এলাকায় রোগটি বেশি হয়। যে কোনো ঋতুতেই, যে কোনো বয়সে টাইফয়েড রোগ হতে পারে। উন্নয়নশীল দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্কুলগামী শিশু ও তরুণরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ঋতুর পরিবর্তনের সাথে রোগ সংক্রমণের মাত্রারও পরিবর্তন ঘটে এবং বর্ষাকালের পরপরই এর প্রাদুর্ভাব বেশি। বাংলাদেশে সঠিক চিকিৎসার অভাব ও অনিয়মিত চিকিৎসার কারণে ঔষধ প্রতিরোধী টাইফয়েড রোগ হবার ঘটনাও দেখা গেছে। টাইফয়েড এবং প্যারাটাইফয়েড (Salmonella paratyphi জীবাণুঘটিত অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক টাইফয়েড) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ভারতীয় উপমহাদেশে, দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য-এশিয়ায় এবং আফ্রিকায়। ১৯৯১ সালের এক তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ওই বছর সারা বিশ্বে প্রায় ৩৩ লক্ষ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছিল। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীর রোগের বিবরণে দেখা যায় অনেক জীবাণু বিভিন্ন ঔষধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করছে, ফলে বর্তমানে এ রোগ উপশম বেশ কষ্টসাধ্য হচ্ছে।  [মোঃ সিরাজুল ইসলাম]

আরও দেখুন টিকাদান