জোনাকি

জোনাকি (Firefly)  Coleoptera বর্গের Lampyridae গোত্রের ছোট, আলোপ্রদায়ী মাংসাশী পতঙ্গ। প্রাচীনকাল থেকেই এসব পতঙ্গ প্রকৃতিবিদ, জীববিজ্ঞানী, শিশু-কিশোর ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। জোনাকি জ্বলন্ত কীট বা বৈদ্যুতিক ছারপোকা নামেও পরিচিত। বহু প্রজাতির স্ত্রী সদস্যের ডানা নেই। Lampyridae গোত্রের প্রায় ২,০০০ প্রজাতি রয়েছে। এসব নিশাচর পতঙ্গ হতে পারে খুব ছোট আকারের; ৫ মিলিমিটারের কম বা বেশ বড় আকারের, ২২ মিলিমিটারের চেয়ে বড়। জোনাকির সবচেয়ে বড় গণ Luciola (সমগ্র পৃথিবীতে)-এর প্রজাতি সংখ্যা ২৯০। জাপানের ১৭ ও শ্রীলঙ্কার ২১ প্রজাতিসহ এশিয়াতে এদের প্রায় ২৮০ প্রজাতি আছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত Lamprophorus tenebrous, Lampyris marginella, Luciola chinensis, L. ovalis  প্রজাতিগুলি শনাক্ত করা হয়েছে।

জোনাকিরা নিশাচর। অনেক প্রজাতির পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পতঙ্গ লার্ভা আকৃতির। অন্যরা খাটো ডানাসহ স্বাভাবিক আকৃতির। বহু প্রজাতির পূর্ণ বয়স্করা আহার থেকে নিবৃত্ত থাকে। বাংলাদেশের L. tenebrosus অন্য অনেক জোনাকির মতো যৌন-দ্বিরূপতা (sexual dimorphism) প্রদর্শন করে। এর লার্ভাকৃতির স্ত্রী পতঙ্গ ৬০ মিলিমিটারের বেশি লম্বা, অথচ বাদামি রঙের পুরুষ প্রায় ২৫ মিমি।  শাকসবজি ও অন্যান্য শস্যভুক শামুক (Acatina fulica) এ পতঙ্গের লার্ভার শিকার। প্রকৃতপক্ষে, জোনাকির লার্ভার প্রধান খাদ্য হলো শামুক, স্লাগ (খোলকহীন শামুক) এবং অন্যান্য শামুকজাতীয় প্রাণী, যদিও নরম দেহবিশিষ্ট কেঁচো ও কীটপতঙ্গেও এদের অরুচি নেই।

পুরুষ, স্ত্রী ও লার্ভার দেহ থেকে তাপহীন সবুজাভ-হলুদ থেকে লালচে-কমলা রঙের আলো বের হয়। কোনো কোনো প্রজাতির ডিমও আলো ছড়ায়। এ আলো সম্ভবত প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গের মধ্যে যোগাযোগ কাজে ভূমিকা রাখে এবং তা পেটের নিচের এক বিশেষ অঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়।  [মোঃ সোহরাব আলী]