জীবাণু নিরোধক
জীবাণু নিরোধক (Antimicrobial Agent) হলো এমন কিছু প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ যারা জীবাণুকে মেরে ফেলে বা জীবাণুর বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে। জীবাণু নিরোধকগুলির তিনটি প্রধান শ্রেণি হলো (১) ডিসইনফেকক্ট্যান্ট (যেমন ব্লিচ বা অ্যালকোহল), যা রোগের বিস্তার রোধ করতে অথবা সংক্রমণ রোধ করতে বিভিন্ন পৃষ্ঠে বিস্তৃত জীবাণুকে মেরে ফেলে, (২) জীবাণুনাশক (যেমন ক্লোরহেক্সিডাইন, পোভিডোন-আয়োডিন, হাইড্রোজেন পারক্সাইড), যা অস্ত্রোপচারের সময় সংক্রমণ কমাতে জীবন্ত টিস্যুতে প্রয়োগ করা হয়, এবং (৩) অ্যান্টিবায়োটিক, যা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অণুজীব ধ্বংস করে এবং সাধারণত জীবাণুর সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
অ্যান্টিবায়োটিক হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণীর জীবাণু নিরোধক। এরা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং পরজীবী সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর কিন্তু ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়- ব্যাকটেরিসাইডাল অ্যান্টিবায়োটিক (যারা ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে যেমন: পেনিসিলিন) এবং ব্যাকটেরিওস্ট্যাটিক অ্যান্টিবায়োটিক (যারা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে বাধা দেয় যেমন: এরিথ্রোমাইসিন)। কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে, অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্রড-স্পেকট্রাম (গ্রাম-পজিটিভ এবং গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা বা বাধা দিতে পারে), বা ন্যারো-স্পেকট্রাম (ব্যাকটেরিয়ার নির্দিষ্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে কার্যকর) হতে পারে।
যে সকল পদ্ধতির মাধ্যমে এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো কাজ করে তাদের কিছু উদাহরণ হলো- (১) কোষপ্রাচীর সংশ্লেষণে বাধা, প্রোটিন সংশ্লেষণে বাধা, নিউক্লিক অ্যাসিড সংশ্লেষণে বাধা দেয়। কিছু ওষুধ অণুজীবের রোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতাকে প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হয় যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগ/জীবাণু নিরোধক ওষুধ নামে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ: (১) অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ড্রাগ: ব্যাকটেরিয়ার প্যাথোজেনিক কার্যকলাপকে বাধা দেয়, উদাহরণ: জিথ্রোম্যাক্স; (২) অ্যান্টিফাঙ্গাল ড্রাগ: হোস্টে ছত্রাকের কার্যকলাপ প্রতিরোধ করে, উদাহরণ: মাইকোনাজোল; (৩) অ্যান্টিভাইরাল এজেন্ট: ভাইরাসের প্যাথোজেনিক ক্রিয়া বন্ধ করে, উদাহরণ: ট্যামিফ্লু; (৪) পরজীবী বিরোধী ওষুধ: প্যাথোজেনিক পরজীবী বৃদ্ধি রোধ করে, উদাহরণ: অ্যান্থেলমিন্টিক্স। [মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম]