জিনগতভাবে পরিবর্তিত জীব

জিনগতভাবে পরিবর্তিত জীব (Genetically Modified Organism) একটি জিন একটি কার্যকরী প্রোটিন (যেমন: এনজাইম) নির্ধারণে সক্ষম যা পরবর্তীতে বিভিন্ন বিপাকীয় অণু (যেমন: গ্লুকোজ) তৈরিতে কাজে লাগে। এই বিপাকীয় অণুসমূহ কোষের কার্যকারিতার জন্য দায়ী। অনেকগুলো কোষ একত্রিত হয়ে একটি অঙ্গ তৈরি করে এবং অনেকগুলো অঙ্গ মিলিতভাবে একটি জীবদেহ গঠন করে। কোষের অভ্যন্তরে নিউক্লিওটাইডসমূহ (সুগার, নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষার এবং ফসফেট দ্বারা গঠিত) পরপর সজ্জিত হয়ে একটি জিন তৈরি করে এবং এই সজ্জাক্রমের তারতম্যের কারণে সংশ্লিষ্ট প্রোটিন কম কার্যকর বা ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। বিজ্ঞানীরা চাহিদা অনুযায়ী অভীষ্ট কোনো জিন নির্ধারিত জীবের জেনোমে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে পরিবর্তিত জিন সম্পন্ন জীব তৈরি করতে সক্ষম। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত জীব জিনগতভাবে পরিবর্তিত জীব নামে পরিচিত। এই পদ্ধতি প্রয়োগের দ্বারা জিনগতভাবে পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়া, উদ্ভিদ বা প্রাণী তৈরি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে, কাঙিক্ষত কার্যকর জিনকে একটি ডিএনএ বাহকের/ভেক্টরের মধ্যে প্রবেশ করানো হয় যা ‘রিকম্বিন্যান্ট অণু’ নামে পরিচিত এবং পরবর্তীতে সেই রিকম্বিন্যান্ট অণুকে একটি একক কোষে প্রবেশ করানো হয়। জিনগতভাবে পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে, অণু প্রবেশকৃত জিন সম্পন্ন ভেক্টর ব্যাকটেরিয়া কোষের অভ্যন্তরে স্থায়ীভাবে অবস্থান করতে পারে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত একটি প্রাকৃতিক ভেক্টর ব্যবহার করি যা উদ্ভিদ জিনোমিক ডিএনএ-তে উদ্দিষ্ট জিন অণু প্রবেশ করাতে সহায়তা করে এবং ফলস্বরূপ উদ্ভিদ সেই অণু প্রবেশকৃত জিনসহ বংশবিস্তার করতে পারে। স্তন্যপায়ী কোষের ক্ষেত্রে, আমরা কখনও কখনও ভাইরাল ভেক্টর ব্যবহার করি যা স্তন্যপায়ীর জিনোমিক ডিএনএ-তে প্রয়োজনীয় জিন প্রবেশে সাহায্য করে। জিনগত ভাবে পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে রেনেট (পনির শিল্পে ব্যবহৃত হয়) বা ইনসুলিন উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়াসমূহকে উল্লেখ করা যায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনগতভাবে পরিবর্তিত উদ্ভিদ হলো বিটি-বেগুন, যাতে Cry1Ac নামক প্রোটিন উৎপাদনকারী একটি জিন আছে। এই প্রোটিন কীটপতঙ্গের জন্য বিষাক্ত হলেও মানুষের জন্য নয়, কারণ মানুষ এবং কীটপতঙ্গের পাচনতন্ত্রের গঠন ও কার্যশৈলীর বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। ফলে, বিটি-বেগুন ক্ষতিকর এফএসবি পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয় না এবং ফলন অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। ইদানিং, রোগ-সৃষ্টিকারী মশার প্রকোপ কমাতে বিভিন্ন দেশে জিএম মশা (এডিস ইজিপ্টি) ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব জিএম মশার পুরুষ প্রজাতি একটি বিশেষ জিন বহন করে যার থেকে উৎপাদিত প্রোটিন ভবিষ্যৎ স্ত্রী প্রজাতির বংশধরদের জন্য প্রাণঘাতী। উল্লেখ্য যে মূলত স্ত্রী প্রজাতির মশাগুলোই বিপজ্জনক ভাইরাস ছড়িয়ে জিকা এবং ডেঙ্গুর মতো রোগ সৃষ্টি করে থাকে। স¤প্রতি, মানুষের রেটিনায় একটি কার্যকরী জিন প্রবেশ করানোর মাধ্যমে অন্ধত্ব নিরাময় করা সম্ভবপর হয়েছে। [জেবা ইসলাম সেরাজ]