জামালগঞ্জ উপজেলা
জামালগঞ্জ উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা) আয়তন: ৩০৯.৩৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫০´ থেকে ২৫°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৫´ থেকে ৯১°১৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণে খালিয়াজুরী ও দিরাই উপজেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, পশ্চিমে মোহনগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলা।
জনসংখ্যা ১৬৭২৬০; পুরুষ ৮৪৬১২, মহিলা ৮২৬৪৮। মুসলিম ১৩৮৮১৯, হিন্দু ২৮৪১৯, বৌদ্ধ ৫, খ্রিস্টান ৪ এবং অন্যান্য ১৭।
জলাশয় প্রধান নদী: নয়াগাঙ্গ, বাউলাই ও ধনু। ছাতিধরা, আইলা, পাঁগনা, খাঁনকিয়াজুরি, কেচুরিয়া ও কচমা বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন জামালগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯৪০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৫ | ১০২ | ১৯২ | ১০১৩৩ | ১৫৭১২৭ | ৫৪১ | ৫০.০ | ৩১.৩ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৫.৮১ | ২ | ১০১৩৩ | ১৭৪৪ | ৫০.০ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
জামালগঞ্জ ৬৭ | ১২৪৪৯ | ২৬১৪১ | ২৫৪৬৩ | ৩২.৫ | ||||
ফেনারবাঁক ৫৪ | ২৬৮৪৮ | ১৯২৬১ | ১৮১৭৯ | ২৬.২ | ||||
বেহেলী ১৩ | ১৯৭৯০ | ৯৬৮১ | ৯৬৩৯ | ৩২.২ | ||||
ভীমখালী ২৭ | ৯৮৯৫ | ১৬৩০৭ | ১৬৫৪০ | ৩৪.৪ | ||||
সাচনা বাজার ৮১ | ৭৪৭০ | ১৩২২২ | ১২৮২৭ | ৩৮.৯ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৩৭ সালে এ উপজেলার বেহেলী গ্রামে করুণাসিন্ধু রায়ের নেতৃত্বে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই সাচনা বাজারে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে সিরাজুল ইসলাম শহীদ হন। ১২ আগস্ট তেলিয়া গ্রামে পাকসেনারা ৮জন লোককে হত্যা করে। ৭ ডিসেম্বর জামালগঞ্জ পাকসেনা মুক্ত হয়।
বিস্তারিত দেখুন জামালগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৩৩, মন্দির ১৭।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩২.৫%; পুরুষ ৩৪.৬%, মহিলা ৩০.২%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৫), জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮), ভীমখালী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৮), আলাউদ্দিন মোমোরিয়েল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭), নবীনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৯), জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮২), নওগ্রাম অষ্টগ্রাম ইসলামীয়া মাদ্রাসা (১৯৭৫) উল্লেখযোগ্য।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: সাপ্তাহিক ভাটি বাংলা, জামালগঞ্জের ডাক, জামালগঞ্জ পরিক্রমা; পাক্ষিক: সুরমা। ত্রৈমাসিক: স্ফুলিঙ্গ; সাহিত্য সাময়িকী: কালের করতল (১৯৭৭), জামালগঞ্জ সমাচার (১৯৮৫), ভালবাসি স্বদেশ (১৯৮৭), নবজাতক (১৯৮৭), প্রভাত (১৯৯০), অপরাজিত তারুণ্য (১৯৯১), উত্তর প্রজন্ম (১৯৯২), দিশারী (১৯৯৩), প্রতিধী (১৯৯৩), উন্মোচন (১৯৯৪), সাহসে জেগে উঠো (১৯৯৭), ক্ষুদ্রপট রুদ্রপ্রাণ (১৯৯৮), স্মৃতির অলিন্দে (১৯৯৮), পূর্বাশা (১৯৯৮), রক্তঝরা ফাগুনে (১৯৯৮), প্রেরণা (১৯৯৯) অভিপ্রায় (২০০১), নিবেদন (২০০৬)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, থিয়েটার দল ১, নাট্যমঞ্চ ১, মহিলা সংগঠন ৯, সংগীত পরিষদ ১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৩.৯২%, অকৃষি শ্রমিক ৫.১২%, শিল্প ০.৩১%, ব্যবসা ৮.১৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৪৫%, চাকরি ২.৮১%, নির্মাণ ০.৪৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৮৪% এবং অন্যান্য ৭.৭৪%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৪.২১%, ভূমিহীন ৪৫.৭৯%। শহরে ৫৫.৪১% এবং গ্রামে ৫৪.০০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, ভুট্টা, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, শাকসবজি।
বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, সরিষা, পাট।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা ও পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৬৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩০, কাঁচারাস্তা ১৫০ কিমি; নৌপথ ৭০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, আইসফ্যাক্টরি।
কুটিরশিল্প বাঁশ ও বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৩। সাচ্না, ভীমখালী, নওগাঁও, সেলিমগঞ্জ ও বেহেলী বাজার উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য মাছ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৬.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ বালিপাথর, কয়লা।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৩%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ৩.৪%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৮.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬১.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৯.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, আঞ্চলিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৭ সালে জামালগঞ্জ বাজারে টর্নেডোতে একজন লোক প্রাণ হারায়, ত্রিশজন আহত হয় এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, কেয়ার, বাওপা, ভিশন ২০০০। [গোলাম মর্তুজা]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; জামালগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।