জাতীয় পুরস্কার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''জাতীয় পুরস্কার'''  জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ  অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তিবিশেষ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত পুরস্কার। বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে কয়েক ধরনের পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে  [[বীরত্বসূচক খেতাব|বীরত্বসূচক খেতাব]], স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, একুশে পদক পুরস্কার, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ট্রাস্টের উদ্যোগে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়।
'''জাতীয় পুরস্কার'''  জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ  অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তিবিশেষ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত পুরস্কার। বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে কয়েক ধরনের পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে  [[বীরত্বসূচক খেতাব|বীরত্বসূচক খেতাব]], স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, একুশে পদক পুরস্কার, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ট্রাস্টের উদ্যোগে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়।


[[Image:NationalAwardBiruttam.jpg|thumb|400px|বীরশ্রেষ্ট   বীর উত্তম   বীর   বিক্রম   বীর প্রতীক]]
[[Image:NationalAwardBiruttam.jpg|thumb|400px|বীরশ্রেষ্ট       বীর উত্তম     বীর বিক্রম     বীর প্রতীক]]
'''''বীরত্বসূচক খেতাব'''''  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর এক সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাতজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে বীরশ্রেষ্ঠ (মরণোত্তর), ৬৮ জনকে বীর উত্তম, ১৭৫ জনকে বীর বিক্রম এবং ৪২৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়।
'''''বীরত্বসূচক খেতাব'''''  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর এক সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাতজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে বীরশ্রেষ্ঠ (মরণোত্তর), ৬৮ জনকে বীর উত্তম, ১৭৫ জনকে বীর বিক্রম এবং ৪২৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়।


[[Image:NationalAwardEkusheyPadak.jpg|thumb|400px|স্বাধীনতা দিবস পদক]]
[[[[Image:IndependenceDayAwards.jpg|left|thumbnail|400px|স্বাধীনতা দিবস পদক]]
'''''স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার'''''  সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এ পুরস্কার প্রবর্তন করে। জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশের নাগরিককে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রগুলি হলো স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্মরণীয় অবদান, ভাষা আন্দোলনে অবদান এবং শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাংবাদিকতা, জনসেবা, সামাজিক বিজ্ঞান, সঙ্গীত, ক্রীড়া, চারুকলা ও পল্লী উন্নয়নে অবদান। এ ছাড়া জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও এ পুরস্কারে ভূষিত করার বিধান রয়েছে। প্রতিটি পুরস্কারের মান একটি স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র এবং নগদ অর্থ। পুরস্কারের নগদ অর্থের পরিমান সূচনালগ্নে ছিল বিশ হাজার টাকা। ২০০৪ সালে তা এক লক্ষ টাকায় উন্নীত হয়। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।  
'''''স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার'''''  সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এ পুরস্কার প্রবর্তন করে। জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশের নাগরিককে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রগুলি হলো স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্মরণীয় অবদান, ভাষা আন্দোলনে অবদান এবং শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাংবাদিকতা, জনসেবা, সামাজিক বিজ্ঞান, সঙ্গীত, ক্রীড়া, চারুকলা ও পল্লী উন্নয়নে অবদান। এ ছাড়া জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও এ পুরস্কারে ভূষিত করার বিধান রয়েছে। প্রতিটি পুরস্কারের মান একটি স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র এবং নগদ অর্থ। পুরস্কারের নগদ অর্থের পরিমান সূচনালগ্নে ছিল বিশ হাজার টাকা। ২০০৪ সালে তা এক লক্ষ টাকায় উন্নীত হয়। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।  


[[Image:NationalAwardEkusheyPadak.jpg|thumb|400px|একুশে পদক]]
[[Image:NationalAwardEkusheyPadak.jpg|thumb|right|400px|একুশে পদক]]
'''''একুশে পদক'''''  ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত অন্যতম সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ১৯৭৬ সালে প্রথম এ পুরস্কার চালু করা হয়। জাতীয় জীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার একুশে পদক প্রদান করে থাকে। এ পুরস্কারের জন্য বিবেচ্য ক্ষেত্রগুলি হলো সাহিত্য, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, গবেষণা, অর্থনীতি ও দারিদ্য বিমোচন, শিল্প-সংস্কৃতি, সঙ্গীত, নৃত্য, চারুকলা, নাট্যাভিনয়, ভাস্কর্য, এবং ভাষা আন্দোলনে অবদান। প্রতিটি পুরস্কারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নগদ ১৮ ক্যারেট মানের তিন ভরি ওজনের স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও নগদ অর্থ। শুরুতে পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ ছিল পঁচিশ হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে এ অর্থের পরিমাণ চল্লিশ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। সরকার ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী  [[বরকত, আবুল|আবুল বরকত]][[বরকত, আবুল|,]]  [[আহমদ, রফিক উদ্দিন|রফিক উদ্দিন আহমদ]],  [[105969|আবদুস সালাম]] ও  [[জববার, আবদুল|আবদুল জববার]] এ চারজন শহীদকে ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।  
'''''একুশে পদক'''''  ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত অন্যতম সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ১৯৭৬ সালে প্রথম এ পুরস্কার চালু করা হয়। জাতীয় জীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার একুশে পদক প্রদান করে থাকে। এ পুরস্কারের জন্য বিবেচ্য ক্ষেত্রগুলি হলো সাহিত্য, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, গবেষণা, অর্থনীতি ও দারিদ্য বিমোচন, শিল্প-সংস্কৃতি, সঙ্গীত, নৃত্য, চারুকলা, নাট্যাভিনয়, ভাস্কর্য, এবং ভাষা আন্দোলনে অবদান। প্রতিটি পুরস্কারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নগদ ১৮ ক্যারেট মানের তিন ভরি ওজনের স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও নগদ অর্থ। শুরুতে পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ ছিল পঁচিশ হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে এ অর্থের পরিমাণ চল্লিশ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। সরকার ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী  [[বরকত, আবুল|আবুল বরকত]]  [[আহমদ, রফিক উদ্দিন|রফিক উদ্দিন আহমদ]],  [[সালাম, আবদুস২|আবদুস সালাম]] ও  [[জববার, আবদুল|আবদুল জববার]] এ চারজন শহীদকে ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।  


'''''বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার'''''  বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য লেখকদের সৃজনী প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৬০ সালে এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। তখন থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, অনুবাদ এ ছয়টি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হতো। ১৯৮৫ সাল থেকে এ নিয়ম পরিবর্তন করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে সার্বিক সাহিত্যকর্মের জন্য দুজন লেখককে পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা চালু হয়। বর্তমানে তিনটি বিভাগে পৃথকভাবে পুরস্কার প্রদান করা হয়: ক বিভাগ: কবিতা/উপন্যাস/ছোটগল্প/নাটক; খ বিভাগ: গবেষণা/প্রবন্ধ/ বিজ্ঞান; গ বিভাগ: অনুবাদ/শিশু সাহিত্য।
'''''বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার'''''  বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য লেখকদের সৃজনী প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৬০ সালে এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। তখন থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, অনুবাদ এ ছয়টি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হতো। ১৯৮৫ সাল থেকে এ নিয়ম পরিবর্তন করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে সার্বিক সাহিত্যকর্মের জন্য দুজন লেখককে পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা চালু হয়। বর্তমানে তিনটি বিভাগে পৃথকভাবে পুরস্কার প্রদান করা হয়: ক বিভাগ: কবিতা/উপন্যাস/ছোটগল্প/নাটক; খ বিভাগ: গবেষণা/প্রবন্ধ/ বিজ্ঞান; গ বিভাগ: অনুবাদ/শিশু সাহিত্য।

০৬:০০, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

জাতীয় পুরস্কার  জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ  অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তিবিশেষ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত পুরস্কার। বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে কয়েক ধরনের পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে  বীরত্বসূচক খেতাব, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, একুশে পদক পুরস্কার, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ট্রাস্টের উদ্যোগে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়।

বীরশ্রেষ্ট বীর উত্তম বীর বিক্রম বীর প্রতীক

বীরত্বসূচক খেতাব  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর এক সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাতজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে বীরশ্রেষ্ঠ (মরণোত্তর), ৬৮ জনকে বীর উত্তম, ১৭৫ জনকে বীর বিক্রম এবং ৪২৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়।

[[

স্বাধীনতা দিবস পদক

স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এ পুরস্কার প্রবর্তন করে। জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশের নাগরিককে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রগুলি হলো স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্মরণীয় অবদান, ভাষা আন্দোলনে অবদান এবং শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাংবাদিকতা, জনসেবা, সামাজিক বিজ্ঞান, সঙ্গীত, ক্রীড়া, চারুকলা ও পল্লী উন্নয়নে অবদান। এ ছাড়া জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও এ পুরস্কারে ভূষিত করার বিধান রয়েছে। প্রতিটি পুরস্কারের মান একটি স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র এবং নগদ অর্থ। পুরস্কারের নগদ অর্থের পরিমান সূচনালগ্নে ছিল বিশ হাজার টাকা। ২০০৪ সালে তা এক লক্ষ টাকায় উন্নীত হয়। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

একুশে পদক

একুশে পদক  ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত অন্যতম সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ১৯৭৬ সালে প্রথম এ পুরস্কার চালু করা হয়। জাতীয় জীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার একুশে পদক প্রদান করে থাকে। এ পুরস্কারের জন্য বিবেচ্য ক্ষেত্রগুলি হলো সাহিত্য, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, গবেষণা, অর্থনীতি ও দারিদ্য বিমোচন, শিল্প-সংস্কৃতি, সঙ্গীত, নৃত্য, চারুকলা, নাট্যাভিনয়, ভাস্কর্য, এবং ভাষা আন্দোলনে অবদান। প্রতিটি পুরস্কারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নগদ ১৮ ক্যারেট মানের তিন ভরি ওজনের স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও নগদ অর্থ। শুরুতে পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ ছিল পঁচিশ হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে এ অর্থের পরিমাণ চল্লিশ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। সরকার ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী  আবুল বরকত  রফিক উদ্দিন আহমদ,  আবদুস সালাম ও  আবদুল জববার এ চারজন শহীদকে ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।

বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার  বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য লেখকদের সৃজনী প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৬০ সালে এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। তখন থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, অনুবাদ এ ছয়টি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হতো। ১৯৮৫ সাল থেকে এ নিয়ম পরিবর্তন করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে সার্বিক সাহিত্যকর্মের জন্য দুজন লেখককে পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা চালু হয়। বর্তমানে তিনটি বিভাগে পৃথকভাবে পুরস্কার প্রদান করা হয়: ক বিভাগ: কবিতা/উপন্যাস/ছোটগল্প/নাটক; খ বিভাগ: গবেষণা/প্রবন্ধ/ বিজ্ঞান; গ বিভাগ: অনুবাদ/শিশু সাহিত্য।

সাধারণত প্রতি বছর উপরোক্ত ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। কোনো শাখায় যোগ্য লেখক পাওয়া না গেলে ওই  বছর সে শাখায় কাউকে পুরস্কার দেওয়া হয় না। এ পুরস্কার কেবল ব্যক্তিবিশেষকেই প্রদান করা হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা গোষ্ঠীকে এ পুরস্কার প্রদানের বিধান নেই। প্রতিটি পুরস্কারের মান নগদ এক লক্ষ টাকা। পুরস্কৃত সাহিত্যিককে নগদ অর্থ, সম্মাননাপত্র ও সম্মাননা প্রতীক প্রদান করা হয়। তাছাড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিককে বাংলা একাডেমীর ফেলোশিপও প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার  শিশুসাহিত্যে সার্বিক অবদানের জন্য বাংলাদেশ শিশু একাডেমী বছরে একজন সাহিত্যসেবীকে এ পুরস্কার প্রদান করে। বাংলা ১৩৯৬ সন (১৯৮৯ খ্রি) থেকে এ পুরস্কার চালু করা হয়েছে। একজন কবি বা সাহিত্যিক জীবনে মাত্র একবার এ পুরস্কার লাভ করতে পারেন। এ পুরস্কার মরণোত্তর পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার বিধান নেই। শিশু একাডেমী পুরস্কারের মান নগদ ২৫ হাজার টাকা। পুরস্কৃত সাহিত্যিককে নগদ অর্থ, সম্মাননা প্রতীক ও সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার  চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সরকার ব্যক্তিবিশেষকে এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রকে  জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করে থাকে। এ পুরস্কারের ক্ষেত্রগুলি হলো শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, কাহিনীকার, পরিচালক, চিত্র সম্পাদক, সংলাপ রচয়িতা, চিত্র নাট্যকার, অভিনেতা ও অভিনেত্রী, পার্শ্ব অভিনেতা ও পার্শ্ব অভিনেত্রী, সঙ্গীত পরিচালক, চিত্রগ্রাহক, গীতিকার, শিল্প নির্দেশক, শব্দগ্রাহক, গায়ক, গায়িকা, শিশু শিল্পী, নৃত্য পরিচালক, সুরকার, মেকআপ ম্যান, পান্ডুলিপি, সংলাপ, প্রামাণ্যচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও শিশু শিল্পীদের বিশেষ পুরস্কার। এসব ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ বিবেচিত চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ কলাকুশলীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রতিটি পুরস্কারের মান শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জন্য নগদ দশ হাজার টাকা এবং অন্যান্য প্রতিটি ক্ষেত্রে নগদ পাঁচ হাজার টাকা। পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে নগদ অর্থের সঙ্গে একটি করে র‌্যাপ্লিকা প্রদান করা হয়।

জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার  ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারের ক্ষেত্র হলো ক্রীড়া সংগঠক এবং ফুটবল, হকি, ক্রিকেট, সাঁতার, শুটিং, দাবা ও অ্যাথলেটিক্সে কৃতিত্ব প্রদর্শন। এ পুরস্কারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি স্বর্ণপদক ও নগদ আট হাজার টাকা।

রবীন্দ্র পুরস্কার  বাংলা একাডেমী ২০১০ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গীতের চর্চা এবং রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যক্তিবিশেষকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই পুরস্কারের মান নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা। নগদ পুরস্কারের সঙ্গে একটি সম্মাননা প্রতীক ও সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়।

নজরুল পুরস্কার নজরুল ইনস্টিটিউট সম্প্রতি নজরুল পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। কবি নজরুল ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা এবং নজরুলগীতির বিকাশে অবদানের জন্য প্রতিবছর ব্যক্তিবিশেষকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই পুরস্কারের মান নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা। নগদ পুরস্কারের সঙ্গে একটি সম্মাননা প্রতীক ও সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়।

অন্যান্য পুরস্কার  দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ট্রাস্ট কর্তৃক বেশ কয়েকটি পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা চালু আছে।  সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ব্যক্তিবিশেষকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক, আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার, এনামুল হক সাহিত্য পদক, সাদত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার, হালিমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার, জয়নাল আবেদিন পুরস্কার, শেরে বাংলা সাহিত্য পুরস্কার,  সুন্দরবন সাহিত্য পুরস্কার, সুফী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ুন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, নূরুল কাদের শিশু সাহিত্য পুরস্কার, কবীর চৌধুরী শিশু সাহিত্য পুরস্কার, মাযহারুল ইসলাম সাহিত্য পুরস্কার, মেহের কবীর বিজ্ঞান-সাহিত্য পুরস্কার, রোটারী ইন্টারন্যাশনাল প্রবর্তিত বিজ্ঞান, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের জন্য সীড (SEED) পুরস্কার, হাকিম হাবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন পুরস্কার, মাহবুবউল্লাহ-জেবুন্নেসা পুরস্কার, বাংলাদেশ পরিষদ একুশে পুরস্কার, কবি জীবনানন্দ দাস পুরস্কার, অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমী পুরস্কার, ফিলি্পস সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার। বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে ব্যক্তিবিশেষের সুনির্দিষ্ট অবদানের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফাউন্ডেশন ২০০২ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার চালু করেছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত গবেষণা, অর্থনীতি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যা, বাণিজ্য ও শিল্প, সাংবাদিকতা, ক্রীড়া ও কৃষি গবেষণা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যক্তি বিশেষকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারের মান নগদ এক লক্ষ টাকা ও একটি স্বর্ণপদক। পুরস্কারের সঙ্গে একটি সম্মাননা প্রতীক প্রদান করা হয়।  [সানজিদা খান]