জাতীয় পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন একাডেমী

জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমী  দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। বিষয় বৈচিত্র্য ও আধুনিক ধ্যানধারণা সৃষ্টি এবং পেশাগত মানোন্নয়ন একাডেমীর প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মূল বৈশিষ্ট্য। ১৯৮০ সালে একটি উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে একাডেমীর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে ‘বডি করপোরেট’ হিসেবে ঘোষণা দেন। ২০০৭ সালের ১২ জুন ‘বোর্ড অব গভর্নরস্’-এর সভায় একাডেমীর নাম পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমীর পরিবর্তে ‘জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমী’ করা হয়। ২০০৯ সালের ৩০ আগস্ট জাতীয় পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন একাডেমী হিসেবে নতুন নামকরণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পার্শ্বে নীলক্ষেতে নয়তলা ভবনে অবস্থিত।

জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমী, ঢাকা

একাডেমী পরিচালনার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বোর্ড অব গভর্নরস্ (বিওজি) আছে। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী বিওজির চেয়ারম্যান এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভাইস চেয়ারম্যান। একাডেমীর মহাপরিচালক বোর্ড অব গভর্নরস্-এর সদস্য সচিব। বিওজি-র সদস্যগণ হলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ-এর সচিব, বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-এর রেক্টর, জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিল-এর সচিব, ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট-এর মহাপরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-এর পরিচালক, ইনস্টিউট অব চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-এর মহাপরিচালক।

জাতীয় পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন একাডেমীতে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি), ভাষা শিক্ষা ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট কোর্স এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ের উপর কোর্স পরিচালনা করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন সংস্থার অনুরোধে কাসটোমাইজড (customized) সিলেবাসের ভিত্তিতে বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করা হয়ে থাকে। কোর্সগুলি হলো প্ল্যানিং অ্যান্ড প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, প্রজেক্ট ফিজিবিলিটি/অ্যাপ্রাইজাল স্টাডি, মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টস, প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, লীডারশিপ অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং, রিসার্চ মেথডলজি, ম্যানেজমেন্ট স্কিলস ফর প্রজেক্ট এক্সিকিউটিভস, ফিনানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট, এমআইইডি মনিটরিং অ্যান্ড রিপোর্টিং প্রসিজিউর, প্রজেক্ট ফরমুলেশন, অ্যাপ্রাইজাল অ্যান্ড ইআইএ, ই-গভার্ন্যান্স অ্যান্ড ই-কমার্স, ডিপার্টমেন্টাল ট্রেনিং ফর বিসিএস (ইকনমিক) ক্যাডার অফিসার, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস (এমডিজি), অফিস ম্যানেজমেন্ট, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি, কম্পিউটার বেসিকস, পারসোনাল কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং, মাইক্রোসফট প্রজেক্ট, প্রজেক্ট প্ল্যানিং, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট-পিপিডিএম, ওয়েব পেইজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডেপ্লয়মেন্ট এবং ফাউন্ডেশন ট্রেনিং ফর বিসিএস (হেলথ) ক্যাডার অফিসারস-অন রিকোয়েস্ট।

একাডেমীতে প্রশিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রশিক্ষকদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সাহায্যে প্রশিক্ষণার্থীরা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তব জ্ঞানও লাভ করেন। প্রশিক্ষণার্থীদেরকে আলোচনা, ব্যবহারিক অনুশীলন, মাঠ পরিদর্শন, গ্রন্থ আলোচনা, প্রজেক্ট প্রস্ত্ততকরণ, সিমুলেশন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। বর্তমানে পাঠাগারটিতে প্রায় ১৪,০০০ বইসহ প্রশিক্ষণার্থী ও প্রশিক্ষকদের জন্য বিভিন্ন পত্রিকা ও গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন রয়েছে। সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত পাঠাগার খোলা থাকে। একাডেমী পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ের ওপর মূল্যায়ন ও গবেষণা কর্ম পরিচালনা করে এবং নিয়মিত প্রকাশনা বের করে। একাডেমীতে একটি আইসিটি ও অডিও ভ্যিজুয়াল শাখা আছে। এতে দুইটি আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব এবং একটি সমৃদ্ধ ভাষা ল্যাব আছে। আইসিটি কোর্স সম্পন্ন করে প্রশিক্ষণার্থীরা সরকারের ই-গভার্ন্যান্স বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভাষা ল্যাব থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা বিদেশি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন এবং IELTS পরীক্ষায় সফল হন। এই প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ সহায়ক উপকরণ আছে। এখানে এক সঙ্গে ৭ থেকে ১০টি কোর্স পরিচালনা করার জন্য আধুনিক শ্রেণীকক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, সিসি ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং আধুনিক অডিও ভিজ্যুয়াল যন্ত্রপাতি রয়েছে।

একাডেমীর একটি নিজস্ব অডিটোরিয়াম আছে। ২৫০ আসনবিশিষ্ট এই অডিটেরিয়ামে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অডিটোরিয়ামটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য একাডেমীর প্রধান ভবনসংলগ্ন একটি ৭ তলা ডরমেটরি রয়েছে। এখানে ১১০ জন প্রশিক্ষণার্থীর আবাসন সুবিধা আছে।

প্রশিক্ষণার্থীদের খাওয়াদাওয়ার সুব্যবস্থার জন্য একটি ২তলা ক্যাফেটিরিয়া আছে। ১৭০ জন প্রশিক্ষণার্থী একসঙ্গে এখানে খাওয়াদাওয়া করতে পারে।

পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে একাডেমী ইতোমধ্যে জাতীয় উন্নয়নে নিবেদিত প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে।  [মোশতাক আহমদ]