জয়কালী মন্দির
জয়কালী মন্দির ঢাকার ঠাঁটারি বাজারে জয়কালী মন্দির অবস্থিত। এখানে পাশাপাশি দুটি মন্দির রয়েছে। একটি কালী মন্দির অন্যটি শিব মন্দির। শিব মন্দিরটি মূলত একটি মঠ। শিব মন্দিরটি প্রায় ২১ মিটার উঁচু এবং অষ্টকোণাকার মোচাকৃতির চূড়া বিশিষ্ট। মন্দিরটির চূড়াকৃতির ছাদকে উলম্বভাবে সাতটি অংশে ভাগ করে নানা ধরনের অলংকরণ করা হয়েছে। একেবারে সর্বনিম্ন অংশে কুঁড়ে ঘরের চালের কার্নিশ নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর উপরে রয়েছে দেবী মূর্তি। কিন্তু এ সকল দেবী মূর্তি তৈরিতে অদক্ষতার ছাপ সুস্পষ্ট। সম্ভবত মন্দির নির্মাণ কর্মীদের হাতে মূর্তিগুলো তৈরি করা হয়েছিল। মন্দিরের এ অংশের উপরেই উল্টানো ঘণ্টা ও সাপের ফণা নকশার ভিত্তির উপর চালা আকৃতির ঘরের নকশা রয়েছে। উপরের তিনটি অংশেও চালাঘর নকশা রয়েছে। এরও উপরের অংশে রয়েছে ফুল গাছের অলংকরণ। মন্দিরটিতে কলস শিখরের উপরে শূল বসানো হয়েছে। শিব মন্দিরের মোচাকৃতির চূড়ার স্থাপত্য নকশা ইউরোপিয়ান গির্জা স্থাপত্য নকশা দ্বারা প্রভাবিত। মন্দিরটির অভ্যন্তরে রয়েছে শিব লিঙ্গ।
শিব মন্দিরের সঙ্গেই রয়েছে কালী মন্দির। এটি একটি আয়তাকার পঞ্চরত্ন মন্দির। এতে রয়েছে গর্ভগৃহ এবং মন্ডপ। মন্দিরের বিগ্রহ সাধারণত গর্ভগৃহে থাকে, কিন্তু এ মন্দিরের বিগ্রহ মন্ডপে স্থাপিত। পরবর্তী সময়ে এ পরিবর্তন হয়ে থাকতে পারে। বর্তমানে গর্ভগৃহে তিনটি শিব লিঙ্গ রয়েছে। মন্দিরে প্রবেশের জন্য গর্ভগৃহের পাশে পরবর্তীকালে একটি বারান্দা নির্মিত হয়েছে। পঞ্চরত্ন মন্দিরের কোণার চারটি শিখর বাংলার চিরায়ত চালার রীতিতে নির্মিত, কিন্তু কেন্দ্রের শিখরটি মোচাকৃতির। রত্নগুলোতে খিলান নকশা এবং কর্নারের রত্নগুলোর মাথায় উল্টানো পদ্ম নকশা লক্ষ্য করা যায়। এ মন্দিরের পঞ্চরত্নের ছাদ নির্মিত হয়েছে গর্ভগৃহের উপর। মন্দিরের ভিতরের দিকে ছাদটি গম্বুজাকৃতির। একটি খিলানাকৃতির প্রবেশপথের মাধ্যমে মন্ডপ থেকে গর্ভগৃহে প্রবেশের ব্যবস্থা ছিল, যা পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চরত্ন রীতির মন্দির বাংলায় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। তার মধ্যে পূর্ববঙ্গে চালা রীতির এবং পশ্চিমবঙ্গে শিখর রীতির রত্ন মন্দিরের প্রাধ্যান্য লক্ষ করা যায়।
আঠারো শতকের শেষ দিকে কিংবা উনিশ শতকের প্রথম দিকে দেওয়ান তুলসীনারায়ণ ঘোষ ও নরনারায়ণ ঘোষ কালী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া কালী বিগ্রহ, শিবলিঙ্গ, লক্ষ্মীনারায়ণ বিগ্রহ, শালগ্রাম চক্র ও বনদুর্গা স্থাপন করা হয়। শিব মন্দিরটিও সমসাময়িক কালে নির্মিত। এখানে ঘড়াখানা, অতিথিখানা প্রভৃতি নির্মিত হয়েছিল। বিগ্রহসমূহের সেবা, পূজা, অতিথি অভ্যাগতদের বিশ্রামাগার এবং খাওয়ার ব্যয় নির্বাহের জন্য জমিদারগণ বার্ষিক ১২০০ টাকা আয়ের সম্পত্তি দান করেন। মন্দিরের তৃতীয় সেবাইত পঞ্চানন্দের পরে জমিদারগণ দেবোত্তর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে খাসদখলে নিয়ে নেন। সময়ের পরিক্রমায় মন্দিরের স্থাপত্যিক নিদর্শনের বেশ কিছু অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। [মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া]