জগন্মোহিনী

জগন্মোহিনী  লোকসম্প্রদায় বিশেষ। জগোমোহন নামে একজন সাধকের নামানুসারে তাঁর প্রবর্তিত সাধক সম্প্রদায়ের নাম হয় জগন্মোহিনী বা জগোমোহনী। খ্রিস্টীয় ষোলো শতকে এ মতবাদের উদ্ভব হয়। কথিত হয় যে, জগোমোহন প্রাচীন শ্রীহট্টের বাঘাপুরা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কারো কারো মতে, তিনি চন্দ্রদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। মুরারি নন্দ নামে জনৈক সাধুর নিকট জগোমোহন দীক্ষা গ্রহণ করেন। শ্রীহট্ট ও  ঢাকা জেলায় এক সময় এ মতবাদের প্রাধান্য ছিল। শ্রীহট্টের মান্দুলিয়া, জলসুখা এবং বিথঙ্গলে এ সম্প্রদায়ের মঠ আছে। ঢাকা জেলার ফরিদাবাদেও এ মতের অনুসারিবৃন্দ একদা বসবাস করত। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তাদের অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গে চলে যায়।

জগন্মোহিনী সম্প্রদায়ের অনুসারীরা কোনো বিগ্রহ মানে না এবং মূর্তিপূজাও করে না। তারা গুরুবাদী এবং ব্রহ্মচর্য পালন করে। মানবসেবাকেই তারা ধর্ম মনে করে। এ সম্প্রদায়ের অন্যতম গুরু ছিলেন রামকৃষ্ণ (১৫৭৬-১৬৯২)। তিনি জগন্মোহিনী ধর্মের অনুসারী শান্ত গোঁসাইর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর চেষ্টায় শ্রীহট্ট জেলায় জগন্মোহিনী সম্প্রদায়ের অনেক শিষ্য গড়ে ওঠে। শ্রীহট্টের বিথঙ্গলে এদের প্রধান  আখড়া বা তীর্থকেন্দ্র অবস্থিত। আখড়ায় ধর্মালোচনার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীতও পরিবেশিত হয় এবং সে সঙ্গীতের নাম ‘নির্বাণ সঙ্গীত’। এ সম্প্রদায়ের অনুসারী সাধক কবীর দাস ও লবনী দাসের রচিত গানে তাদের সাধনতত্ত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।  [আনোয়ারুল করীম]