ছোলা
ছোলা Leguminosae গোত্রের ডালজাতীয় খাদ্যশস্য, বৈজ্ঞানিক নাম Cicer arietinum। পশ্চিম এশিয়ায় উৎপন্ন এ ফসল প্রাচীনকালেই ভারত ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। অত্যন্ত খরা সহিষ্ণু এবং শুষ্ক, আর্দ্র জলবায়ু ও বায়ুসমৃদ্ধ (aerated) মাটিতে ভাল জন্মে। এঁটেল মাটিই সর্বোত্তম। বাংলাদেশে ছোলা একটি রবি ফসল এবং ভাল ফলনের জন্য দীর্ঘ শীতল রাত ও পর্যাপ্ত শিশির প্রয়োজন। অত্যধিক আর্দ্রতা ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ফুল ও ফলের জন্য ক্ষতিকর। গুরুত্বের দিক থেকে ডালের মধ্যে ছোলার স্থান তৃতীয় এবং মানুষ ও পশু খাদ্য হিসেবে যথেষ্ট পুষ্টিকর।
ছোলাগাছ শাখাপ্রশাখাযুক্ত, ২৫-৫০ সেমি উঁচু, খাড়া বা কিছুটা গড়ানো। কান্ড, পাতা ও ফল গদাক…ৃত রোমবহুল। মুখ্য মূল ও পার্শতমূল বলিষ্ঠ, তাতে বড় বড় লতিযুক্ত গুটিকা (nodule) থাকে। ফুল একক, সবুজাভ সাদা থেকে লালচে বা নীল, সাধারণত স্বপরাগায়িত হলেও পরপরগায়ণও ঘটে। ফল ২.২৫ সেমি দীর্ঘ শুঁটি, শুঁটির ভিতর দুটি বীজ বা ছোলা থাকে। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বীজ বপন করা হয়। পরিপক্ক হতে ৩-৪ মাস সময় লাগে। বাংলাদেশে ছোলা চাষাধীন মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৩১,০০০ একর এবং বার্ষিক ফলন প্রায় ১০,০০০ মে টন। ছোলার প্রধান রোগ নেতানো (wilt), কলার রট (collar rot) ও পাঁশুটে ছ্যাতারোগ (gray mould)। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের মধ্যে মারাত্মক হচ্ছে ছোলার শুঁয়োপাকা (Heliothis armigera) ও বিটল (Callosobruchus chinensis)।
ছোলার অঙ্কুরে ভিটামিন ‘ই’ পাওয়া যায়। শুকনো ছোলা সিদ্ধ বা রান্না করে কিংবা ডাল হিসেবে খাওয়া যায়। শুকনো ডালে আছে আনুমানিক ৯.৮% পানি, ১৭.১% প্রোটিন, ৫.৩% চর্বি, ৬১.২% শর্করা, ৩৯% অাঁশ ও ২.৭% ছাই। ছোলার গুঁড়া থেকে তৈরি ময়দা বা বেসন কয়েক ধরনের রুটি ও পিঠাসহ নানা রান্নায় ব্যবহূত হয়। সবুজ ও কচি ডাঁটা উত্তম সবজি। [নিশীথ কুমার পাল]