চৌহালি উপজেলা

চৌহালি উপজেলা (সিরাজগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ২১০.৩৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০১´ থেকে ২৪°১৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪১´ থেকে ৮৯°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বেলকুচি উপজেলা, দক্ষিণে বেড়া ও দৌলতপুর উপজেলা (মানিকগঞ্জ জেলা), পূর্বে টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুর উপজেলা, পশ্চিমে শাহজাদপুর ও বেড়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৬০০৬৩; পুরুষ ৮০২৫২, মহিলা ৭৯৮১১। মুসলিম ১৫৭৮০৬, হিন্দু ২২৪১ এবং খ্রিস্টান ১৬।

জলাশয় প্রধান নদী: যমুনা।

প্রশাসন চৌহালি থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১১৬ ১০২ ২১১৬৮ ১৩৮৮৯৫ ৭৬১ ৪৬.৫ ৩৪.৯
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৯.৪৭ ২১১৬৮ ১০৮৭ ৪৬.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ওমরপুর ৩৭ ১২৯১৮ ১৭০৪১ ১৭৬৩১ ৩০.৮
ঘরজান ২৩ ৬৯৯৩ ৯৪৩৩ ৯৩১৫ ২৭.৭
সাদিয়া চাঁদপুর ৪৭ ১০২৯৪ ১৪৫৮৪ ১৩৯১১ ৫০.৪
স্থল ৭১ ৯৩৫৮ ৯২৫৭ ৮৪৫৭ ৩৪.৯
বাগুটিয়া ২১ ৩২২৫ ১২৩৯২ ১২৬৭২ ৩৭.৫
খাস কাউলিয়া ২৭ ৪৫৫৬ ৯৩১২ ৯৩১৩ ৩৭.৩
খাস পুকুরিয়া ৩১ ৪৬৪৫ ৮২৩৩ ৮৫১২ ৩২.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২২ জুন এ উপজেলার মালিপাড়ায় এবং আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে সম্ভুদিয়াতে ক্যাম্প স্থাপন করে পাকসেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। ১৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সম্ভুদিয়ার পাকসেনা-ক্যাম্প আক্রমণ করে ২ টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। ২৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় আক্রমণ করে সম্ভুদিয়া পাকসেনা ক্যাম্পের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করে এবং এ সময় ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। ২৯ নভেম্বর চৌহালি পাকসেনা মুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন চৌহালি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৫৭, মাযার ১, মন্দির ৩। ইউনুছ শাহ্ এনায়েতপুরীর মাযার উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৬.৫%; পুরুষ ৪০.৬%, মহিলা ৩২.৫%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৪, কেজি স্কুল ৯, মাদ্রাসা ১৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: এনায়েতপুর মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, চৌহালি ডিগ্রি কলেজ (১৯৭০), চৌহালি মহিলা কলেজ (১৯৯৮), বেতিল বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), এস.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫), এনায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), সম্ভুদিয়া আজিজিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও হাই স্কুল (১৯৩২), খাসকাউলিয়া কে.আর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় (১৯৪২), পাকরাশি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৫৬), এনায়েতপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৮৮৯), এনায়েতপুর সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬৪)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৫৩, লাইব্রেরি ৬, সিনেমা হল ১, মহিলা কল্যাণ সমিতি ৭, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ৭, খেলার মাঠ ১০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৫.৮৯%, অকৃষি শ্রমিক ২.৯৮%, শিল্প ১০.২৫%, ব্যবসা ১১.৭৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯০%, চাকরি ৬.০২%, নির্মাণ ০.৭২%, ধর্মীয় সেবা ০.২৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২২% এবং অন্যান্য ১০.০৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৭.৬১%, ভূমিহীন ৩২.৩৯%। শহরে ৫৬.৮৩% এবং গ্রামে ৬৯.২৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল চীনাবাদাম, রসুন, পেয়াজ, ধান, পাট, গম, তিল, তৈলবীজ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, তিল, তিসি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে, পেয়ারা, কলা।

মৎস্য ও হাঁস-মুরগির খামার  এ উপজেলায় মৎস্য ও হাঁস-মুরগির খামার রযেছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩২ কিমি, কাঁচারাস্তা ১০৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, বরফকল ইত্যাদি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ১৯, লৌহশিল্প ২৭, মৃৎশিল্প ৭,  তাঁতশিল্প ৭৫১১, কাঠের কাজ ১৩৭,  বাঁশ ও বেতের কাজ ৩৯, বিড়িশিল্প ১।

হাটবাজার, মেলা  হাটবাজার ১৪, মেলা ৫। এনায়েতপুর হাট, জোতপাড়া হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চীনাবাদাম, রসুন।

বিদ্যুৎ ব্যবহার উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২০.১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.০%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ৩.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪১.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৫.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে । ৩.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া ১৯৬৭ সালে গুটিবসন্ত রোগে ৩০ জন প্রাণ হারায়।

এনজিও ব্র্যাক, কেয়ার।  [আহম্মদ উল্লাহ কাশেমী]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; চৌহালি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।