চৌধুরী, মাহবুব উল আলম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:ChowdhuryMahbubulAlam.jpg|thumb|right|মাহবুব উল আলম চৌধুরী]]
'''চৌধুরী, মাহবুব উল আলম''' (১৯২৭-২০০৭)   কবি, সাংবাদিক, লেখক, ভাষা সৈনিক এবং ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতার রচয়িতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২) আন্দোলনকারী ভাষা সৈনিকদের ওপর পুলিশের গুলি এবং ছাত্র নিহত হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ স্বরূপ কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী  ’একুশে’ শিরোনামে রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা ’কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ যা ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত।
'''চৌধুরী, মাহবুব উল আলম''' (১৯২৭-২০০৭)   কবি, সাংবাদিক, লেখক, ভাষা সৈনিক এবং ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতার রচয়িতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২) আন্দোলনকারী ভাষা সৈনিকদের ওপর পুলিশের গুলি এবং ছাত্র নিহত হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ স্বরূপ কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী  ’একুশে’ শিরোনামে রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা ’কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ যা ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত।


আহমাদুর রহমান চৌধুরী এবং রওশন আরা চৌধুরীর সন্তান মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্ম ৭ নভেম্বর ১৯২৭, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের আসাদ চৌধুরীর বাড়িতে। মাহবুব ১৯৪৭ সালে গহিরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ডিসটিংশন সহ এন্ট্রান্স পাশ করেন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালে রাজনৈতিক কারণে কলেজ ত্যাগ করেন।
আহমাদুর রহমান চৌধুরী এবং রওশন আরা চৌধুরীর সন্তান মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্ম ৭ নভেম্বর ১৯২৭, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের আসাদ চৌধুরীর বাড়িতে। মাহবুব ১৯৪৭ সালে গহিরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ডিসটিংশন সহ এন্ট্রান্স পাশ করেন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালে রাজনৈতিক কারণে কলেজ ত্যাগ করেন।


মাহবুব উল আলম চৌধুরী ছাত্র জীবনেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র কংগ্রেসে যোগ দেন। মাহবুব উল আলম ১৯৪৫ সালে বিভাগপূর্ব ভারতে ’ছাত্র ফেডারেশন’ নামে একটি মুসলিম ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যোগ দেন। একই বছর দি বেঙ্গল রিজিওনাল স্টুডেন্ট কনফারেন্স (The Bengal Regional Students Conference) চট্টগ্রামেই অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সে কলকাতার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন মানিক বন্দোপাধ্যায়, গোপাল হালদার, ভবানী সেন এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য। উক্ত কনফারেন্সে মাহবুব উল আলম মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। একই বছর তিনি চট্টগ্রাম প্রগতিশীল লেখক-শিল্পি সংঘ এর সহকারী সচিব হিসেবে নির্বাচিত হন (Progressive Writers and Artists Association)। 
মাহবুব উল আলম চৌধুরী ছাত্র জীবনেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র কংগ্রেসে যোগ দেন। মাহবুব উল আলম ১৯৪৫ সালে বিভাগপূর্ব ভারতে ’ছাত্র ফেডারেশন’ নামে একটি মুসলিম ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যোগ দেন। একই বছর দি বেঙ্গল রিজিওনাল স্টুডেন্ট কনফারেন্স (The Bengal Regional Students Conference) চট্টগ্রামেই অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সে কলকাতার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন মানিক বন্দোপাধ্যায়, গোপাল হালদার, ভবানী সেন এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য। উক্ত কনফারেন্সে মাহবুব উল আলম মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। একই বছর তিনি চট্টগ্রাম প্রগতিশীল লেখক-শিল্পি সংঘ এর সহকারী সচিব হিসেবে নির্বাচিত হন (Progressive Writers and Artists Association)
 
[[Image:ChowdhuryMahbubulAlam.jpg|thumb|right|মাহবুব উল আলম চৌধুরী]]


মাহবুব উল আলম চৌধুরী তাঁর মামা আহম্মেদ সগির চৌধুরীর নেতৃত্বাধীনে ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনকারী বিপ্লবীদের জেল থেকে মুক্তির সম্মানে জে এম হলে আয়োজিত সভার  সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। একই বছর দাঙ্গা বিরোধী শান্তি কমিটি (The Anti-riot Peace Committee) গঠিত হলে মাহবুব উল আলম উক্ত দাঙ্গা বিরোধী কমিটিতে সক্রিয় অংশ নেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহবান নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করেন। তিনি এ ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে ১৯৪৬ সালে ‘বিপ্লব’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর সম্পাদনায় (১৯৪৭-১৯৫২) চট্টগ্রাম থেকে ‘সীমান্ত’ নামে প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকার যাত্রা শুরু হয়। সীমান্ত পত্রিকার দাঙ্গা বিরোধী সংষ্করণটি প্রকাশিত হয় এবং এটি প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে চিহ্নিত। পাঁচ বছরে পত্রিকাটির ৪৮ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। পত্রিকার অধিকাংশ সংখ্যাই ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিরাপত্তার স্বার্থে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
মাহবুব উল আলম চৌধুরী তাঁর মামা আহম্মেদ সগির চৌধুরীর নেতৃত্বাধীনে ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনকারী বিপ্লবীদের জেল থেকে মুক্তির সম্মানে জে এম হলে আয়োজিত সভার  সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। একই বছর দাঙ্গা বিরোধী শান্তি কমিটি (The Anti-riot Peace Committee) গঠিত হলে মাহবুব উল আলম উক্ত দাঙ্গা বিরোধী কমিটিতে সক্রিয় অংশ নেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহবান নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করেন। তিনি এ ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে ১৯৪৬ সালে ‘বিপ্লব’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর সম্পাদনায় (১৯৪৭-১৯৫২) চট্টগ্রাম থেকে ‘সীমান্ত’ নামে প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকার যাত্রা শুরু হয়। সীমান্ত পত্রিকার দাঙ্গা বিরোধী সংষ্করণটি প্রকাশিত হয় এবং এটি প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে চিহ্নিত। পাঁচ বছরে পত্রিকাটির ৪৮ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। পত্রিকার অধিকাংশ সংখ্যাই ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিরাপত্তার স্বার্থে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
২০ নং লাইন: ১৯ নং লাইন:
মাহবুব উল আলম ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে গহিরা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত (১৯৭২-১৯৮২) দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকা এর সম্পাদকীয় পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রামের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কৃষ্টি কেন্দ্র এবং মাসিক সাহিত্য বৈঠক প্রতিষ্ঠায় অন্যতম সংগঠক ছিলেন মাহবুব উল আলম। তিনি ১৯৭২ সালে সপরিবারে ঢাকায় স্থায়ী হন।
মাহবুব উল আলম ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে গহিরা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত (১৯৭২-১৯৮২) দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকা এর সম্পাদকীয় পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রামের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কৃষ্টি কেন্দ্র এবং মাসিক সাহিত্য বৈঠক প্রতিষ্ঠায় অন্যতম সংগঠক ছিলেন মাহবুব উল আলম। তিনি ১৯৭২ সালে সপরিবারে ঢাকায় স্থায়ী হন।


মাহবুব উল আলমের কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ ঢাকার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ২০০৬ সালের ৭ নভেম্বর তাঁর ৮০তম জন্মদিন পালন করে। এ উপলক্ষে অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সম্পাদনায় ‘মাহবুব উল আলম চৌধুরীঃ এক অবিম্মরণীয় কবিতার জনক’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে তাঁকে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করে। মাহবুব উল আলম চৌধুরী ২০০৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মারা যান।  [নাসরীন আক্তার]
মাহবুব উল আলমের কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ ঢাকার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ২০০৬ সালের ৭ নভেম্বর তাঁর ৮০তম জন্মদিন পালন করে। এ উপলক্ষে অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সম্পাদনায় ‘মাহবুব উল আলম চৌধুরীঃ এক অবিম্মরণীয় কবিতার জনক’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে তাঁকে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করে। মাহবুব উল আলম চৌধুরী ২০০৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মারা যান।  [নাসরীন আক্তার]


[[en:Chowdhury, Mahbub ul Alam]]
[[en:Chowdhury, Mahbub ul Alam]]

১০:১৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মাহবুব উল আলম চৌধুরী

চৌধুরী, মাহবুব উল আলম (১৯২৭-২০০৭)   কবি, সাংবাদিক, লেখক, ভাষা সৈনিক এবং ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতার রচয়িতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২) আন্দোলনকারী ভাষা সৈনিকদের ওপর পুলিশের গুলি এবং ছাত্র নিহত হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ স্বরূপ কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী  ’একুশে’ শিরোনামে রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা ’কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ যা ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত।

আহমাদুর রহমান চৌধুরী এবং রওশন আরা চৌধুরীর সন্তান মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্ম ৭ নভেম্বর ১৯২৭, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের আসাদ চৌধুরীর বাড়িতে। মাহবুব ১৯৪৭ সালে গহিরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ডিসটিংশন সহ এন্ট্রান্স পাশ করেন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালে রাজনৈতিক কারণে কলেজ ত্যাগ করেন।

মাহবুব উল আলম চৌধুরী ছাত্র জীবনেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র কংগ্রেসে যোগ দেন। মাহবুব উল আলম ১৯৪৫ সালে বিভাগপূর্ব ভারতে ’ছাত্র ফেডারেশন’ নামে একটি মুসলিম ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যোগ দেন। একই বছর দি বেঙ্গল রিজিওনাল স্টুডেন্ট কনফারেন্স (The Bengal Regional Students Conference) চট্টগ্রামেই অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সে কলকাতার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন মানিক বন্দোপাধ্যায়, গোপাল হালদার, ভবানী সেন এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য। উক্ত কনফারেন্সে মাহবুব উল আলম মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। একই বছর তিনি চট্টগ্রাম প্রগতিশীল লেখক-শিল্পি সংঘ এর সহকারী সচিব হিসেবে নির্বাচিত হন (Progressive Writers and Artists Association)।

মাহবুব উল আলম চৌধুরী তাঁর মামা আহম্মেদ সগির চৌধুরীর নেতৃত্বাধীনে ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনকারী বিপ্লবীদের জেল থেকে মুক্তির সম্মানে জে এম হলে আয়োজিত সভার  সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। একই বছর দাঙ্গা বিরোধী শান্তি কমিটি (The Anti-riot Peace Committee) গঠিত হলে মাহবুব উল আলম উক্ত দাঙ্গা বিরোধী কমিটিতে সক্রিয় অংশ নেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহবান নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করেন। তিনি এ ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে ১৯৪৬ সালে ‘বিপ্লব’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর সম্পাদনায় (১৯৪৭-১৯৫২) চট্টগ্রাম থেকে ‘সীমান্ত’ নামে প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকার যাত্রা শুরু হয়। সীমান্ত পত্রিকার দাঙ্গা বিরোধী সংষ্করণটি প্রকাশিত হয় এবং এটি প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে চিহ্নিত। পাঁচ বছরে পত্রিকাটির ৪৮ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। পত্রিকার অধিকাংশ সংখ্যাই ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিরাপত্তার স্বার্থে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

কলকাতার দেশবন্ধু পার্কে ২২ থেকে ২৩ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে বন্ধু সহীদ সাবেরের সঙ্গে মাহবুব উল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম থেকে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে ঢাকার প্রতিনিধি ছিলেন সাহিত্যিক আলাউদ্দিন আল আজাদ এবং আব্দুস সালাম। সম্মেলন শেষে কর্মীরা মিছিল বের করলে মাহবুব উল আলমসহ অনেক কর্মী গ্রেফতার হন এবং তাঁদেরকে আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে পাকিস্তানের সংবিধানভূক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় মাহবুব উল আলম চৌধুরী পাকিস্তান সরকারের মৌলিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির (১৯৫০) বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিলেন। কারণ রিপোর্টে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন ও উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার বিষয়ে কোন উল্লেখ ছিল না। একই বছর চট্টগ্রামে পূর্ব পাকিস্তানের ‘বিশ্ব শান্তি পরিষদ’ এর কমিটি গঠিত হয়। মাহবুব উল আলম উক্ত পরিষদের সম্পাদক নির্বাচিত হন।

পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল নিয়ে মাহবুব উল আলম ১৯৫১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ইয়োথ কনফারেন্সে যোগ দেন। এ কনফারেন্সেই ইস্ট পাকিস্তান যুব লীগ গঠিত হয়। তিনি ১৯৫২ সালে গঠিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পষিদ এর চট্টগ্রাম জেলার আহবায়ক নির্বাচিত হন। পরের বছর (১৯৫৩) প্রথম অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে ’গণতন্ত্রী দল’ প্রতিষ্ঠা পায়। মাহবুব উল আলম এ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং দলের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সম্পাদক নির্বাচিত হন।

মাহবুব উল আলম ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তফ্রন্টের চট্টগ্রাম শাখা কমিটির আহবায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। মওলানা ভাসানীর আহবানে কাগমারী সম্মেলনে ১৯৫৭ সালে তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে একটি সাংস্কৃতিক দল যোগ দেয়। যদিও ১৯৬৫ সালের পর তিনি প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকে তিনি প্রধানত সাংস্কৃকিত কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।

মাহবুব উল আলম ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে গহিরা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত (১৯৭২-১৯৮২) দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকা এর সম্পাদকীয় পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রামের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কৃষ্টি কেন্দ্র এবং মাসিক সাহিত্য বৈঠক প্রতিষ্ঠায় অন্যতম সংগঠক ছিলেন মাহবুব উল আলম। তিনি ১৯৭২ সালে সপরিবারে ঢাকায় স্থায়ী হন।

মাহবুব উল আলমের কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ ঢাকার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ২০০৬ সালের ৭ নভেম্বর তাঁর ৮০তম জন্মদিন পালন করে। এ উপলক্ষে অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সম্পাদনায় ‘মাহবুব উল আলম চৌধুরীঃ এক অবিম্মরণীয় কবিতার জনক’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে তাঁকে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করে। মাহবুব উল আলম চৌধুরী ২০০৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মারা যান।  [নাসরীন আক্তার]