চৌধুরী, হেমচন্দ্র
চৌধুরী, হেমচন্দ্র (১৮৩৩-১৯১৫) সমাজসেবক, বিদ্যোৎসাহী, পুখুরিয়া পরগণার এক-আনী অংশের জমিদার। তিনি ১৮৩৩ সালে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার আম্বরিয়ার জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কালীচন্দ্র চৌধুরী।
হেমচন্দ্র চৌধুরী প্রজাদের কল্যাণার্থে রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, ব্রিজ, পুকুর ইত্যাদি নির্মাণ করেন। তিনি শিক্ষা প্রসারের জন্য হেমনগরে তাঁর মায়ের নামে শশিমুখী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এ ছাড়া তিনি গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের গৃহ নির্মাণকল্পে জমি দানসহ পিংনা ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিক্যাল স্কুল, গোপালপুর বালিকা বিদ্যালয় এবং বরিশাল মুক ও বধির বিদ্যালয় নির্মাণেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ দান করেন। এ ছাড়া পিংনা দাতব্য চিকিৎসালয়, ময়মনসিংহ ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল নির্মাণে, ময়মনসিংহ পুরাতন হাসপাতালের সৌধ নির্মাণে অর্থ দান করেন। তৎকালে চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে তীর্থ যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য লোহার সেতু স্থাপনে তিনি সাহায্য করেন। তিনি ১৯০১ সালে হেমনগরে হরদুর্গা দেবী চৌধুরানী দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ শতকের প্রথমার্ধে টাঙ্গাইলে ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তিনি সেখানকার জনসাধারণের জন্য ডাকঘর মারফত কুইনাইন ঔষধ বিতরণ করেন। তাঁর সহায়তায় সেসময়ে হরদুর্গা দেবী চৌধুরানী হাসপাতালে দু’জন ডাক্তার, একজন কম্পাউন্ডার, একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীসহ মোট ৭ জন লোক চিকিৎসা সেবা প্রদান করত।
কবি ও গীতিকার হিসেবেও হেমচন্দ্রের বেশ সুনাম ছিল। তাঁর কয়েকটি কবিতার বইও রচনা করেন। হেমচন্দ্র চৌধুরী নিজ বাড়িতে একটি নাট্যশালা নির্মাণ করেন। ‘হেমনগর হিতৈষী’ নামে একটি পত্রিকা তাঁর প্রকাশনায় প্রকাশিত হত। তাঁর বসতবাড়ির ‘পরীর দালান’ প্রত্নতাত্ত্বিক ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। হেমচন্দ্রের বাড়িতে বর্তমানে হেমনগর কলেজ স্থাপিত হয়েছে। তাঁর নামেই এলাকার নাম হয়েছে হেমনগর। হেমচন্দ্রের মৃত্যু হয় ১৯১৫ সালে। [খান মাহবুব]